‘অভাবেই দিন কাটে ভাওয়াইয়া শিল্পীর’ নিলয় দাসের নিবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠির অবতারণা। অভাব, অনটনে শুধু ভাওয়াইয়া শিল্পীরাই দিন কাটান এমন নয়, উত্তরবঙ্গে অধিকাংশ লোক শিল্পী অভাব, অনটন বঞ্চনার শিকার। বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে শত যোজন দূরে। উত্তরের আকাশ বাতাস আলোড়িত করা যে ভাওয়াইয়া গান, যে গানে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী জনজাতির সত্তা নিবিড় ভাবে মিশে রয়েছে, সেই গানের শিল্পীরা দিনের পর দিন থেকে যাচ্ছেন ব্রাত্য। ‘এক বার উত্তরবাংলা আসিয়া যান, আমার জায়গাখান দেখিয়া যান, মনের কথা শুনিয়া যান রে”এর মতো বিখ্যাত গানের শ্রষ্ঠা প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ধনেশ্বর রায় আজ অভুক্ত ও বিনা চিকিৎসায় টিকে রয়েছেনএর থেকে দুঃখের কিছু হয় না। আজকের দিনে সরকারি অসংখ্য প্রকল্প ও ভাতার ব্যবস্থা আছে। অথচ তাঁর মতো জনপ্রিয় লোকশিল্পীর জন্য নূন্যতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শুধুমাত্র ধনেশ্বর রায় নয়, শুধুমাত্র জলপাইগুড়ির ফালাকাটার ঘটনা নয়। উত্তরবঙ্গের নানা জায়গার লোকশিল্পীই এই ধরনের অবহেলার শিকার।
জলপাইগুড়ি জেলার পালাটিয়া গান শিল্পীরা, মেছুনি গানের শিল্পীরা, দিনাজপুরের খন, সত্যপীরের শিল্পী গিদালেরা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মালদহের গম্ভীরা শিল্পীদের অবস্থাও সঙ্গিন। এর পিছন সরকারি উদাসীনতাই কিন্তু ভীষণ ভাবে দায়ী। উত্তরবঙ্গের যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা শিল্পীরাই ভিড় করেন, সেটা বইমেলা হোক, হস্তশিল্প মেলাই হোক কিংবা হাল আমলের উত্তরবঙ্গ উৎসব। উত্তরবঙ্গের দুই-একটা দল আমন্ত্রণ পেলেও তাদের মর্যাদা থাকে না। এমনকী টাকা-পয়সাও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম পান। এই প্রসঙ্গে আর এক বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী ও ভাওয়াইয়া গবেষক সুখবিলাস বর্মার আক্ষেপ সমর্থনযোগ্য‘উত্তরবঙ্গের নানা উৎসবের নামে যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দক্ষিণবঙ্গের শিল্পীদের জন্য খরচ হচ্ছে, তা যদি স্থানীয় শিল্পীরা পেতেন তবে উপকৃত হতেন।’ আমরা উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ চাই না। আমরা চাই শিল্পী তাঁর প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পান, সেটা সম্মানের সঙ্গেই। এমন দিন যাতে না আসে, যে দিন শুনতে হবে অভাব ও বিনা চিকিৎসায় অমুক লোকশিল্পী মারা গেছেন।
বিপ্লবকুমার রায়, দক্ষিণ দিনাজপুর
|
দীর্ঘ কাল জলপাইগুড়ির শহরের প্রতি স্তরের মানুষ দূরপাল্লা ট্রেনগুলোর জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে স্টপের দাবি করে আসছেন। দার্জিলিং মেল বা পদাতিক এক্সপ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো হলদিবাড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার দাবি থাকলেও আজও তা হতে পারেনি রেলমন্ত্রকের উদাসীনতায়, যা নিয়ে জলপাইগুড়িবাসীর মনে ক্ষোভও রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেনগুলির স্টপের দাবি জানিয়ে বহু স্মারকলিপি অতীতে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলগুলি থেকে সর্ব স্তরেই পেশ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও রেল বাজেটে এই দাবিটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। রেল পরিষেবা থেকে বরাবর বঞ্চিত এই জেলা। এর জন্যে ক্ষোভও রয়েছে জেলাবাসীদের। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের যদি জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে স্টপ দেওয়া সম্ভব হত, তা হলে কলকাতা থেকে যারা জলপাইগুড়িতে এসে নামেন, তাদের জলপাইগুড়ি শহরে আসতে অনেকটাই সুবিধা হত। অথচ এই দাবি দীর্ঘ দিনের হলেও জলপাইগুড়ি জেলার বিধায়ক বা সাংসদ কারও কোনও হেলদোল নেই। যার কারণে আমরা শত কাঁদলেও রেলমন্ত্রীর মনে আমাদের দাবির প্রতি কোনও সহানুভূতির সৃষ্টি হয় না। তাই আমরা অন্ধকারেই থাকি। আর তাই আমাদের দাবিও মেটে না। রেলমন্ত্রীর কাছে আমরা তাই আবার অনুরোধ জানাই, বিষয়টি আপনি একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখুন, যাতে আপনারই দাক্ষিণ্যে আমাদের দাবিটি পূর্ণ হতে পারে। এবং এটি হলে আগামী দিনে জলপাইগুড়ির অসংখ্য যাত্রী উপকৃত হবেন।
অরবিন্দকুমার সেন, জলপাইগুড়ি |