একের পর এক নেতাদের ধরা পড়া, একাধিক স্কোয়াড সদস্যের আত্মসমর্পণ এবং এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে থাকা কিছু নেতার শারীরিক অসুস্থতা সব মিলিয়ে এ রাজ্যে মাওবাদীদের সংগঠন এখন বেশ দুর্বল। এই অবস্থায় ধুঁকতে থাকা সংগঠনকে অক্সিজেন জোগাতে মাওবাদীরা নতুন মুখের খোঁজে রয়েছে বলে খবর আছে গোয়েন্দা দফতরের কাছে।
তাদের শীর্ষ নেতা কিষেণজির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মাওবাদীদের ডাকা শহিদ সপ্তাহ (২৪-৩০ নভেম্বর) শেষ হয়েছে শনিবার। আজ, সোমবার থেকে আবার শুরু হচ্ছে মাওবাদীদের অ্যাকশন স্কোয়াড গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ বা পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি) সপ্তাহ। এই সপ্তাহে মাওবাদীদের লক্ষ্য নতুন মুখের সন্ধান, এমনই খবর পেয়েছেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কিষেণজির মৃত্যুর পরে সংগঠনের ছন্নছাড়া অবস্থা। রাজ্য সম্পাদক আকাশ কোথায় রয়েছেন, এই মর্মে কোনও সুনির্দিষ্ট খবর নেই গোয়েন্দাদের কাছে। শালবনি-লালগড় স্কোয়াডের নেতা বিকাশ ওরফে মনসারাম হেমব্রম কিডনির অসুখে আক্রান্ত, বেলপাহাড়ি-ভুলাভেদা স্কোয়াডের মদন মাহাতো ওরফে চরণ স্নায়ুরোগে ভুগছেন। অন্য দিকে, অযোধ্যা স্কোয়াডের শীর্ষনেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম ধরা পড়ে যাওয়ার পরে ওই স্কোয়াডের অন্য নেতা রঞ্জিত পাল পাহাড় থেকে সরে পড়েছেন বলেই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
এই অবস্থায় এ রাজ্যের সংগঠন পরিচালিত হচ্ছিল ঝাড়খণ্ড থেকে। সে কথা মাথায় রেখে এবং কয়েক মাস আগে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে মাওবাদী হামলার পরে (ওই হানায় দুমকার এসপি নিহত হন) ঝাড়খণ্ড ও এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের (বীরভূম-সহ) জেলাগুলির পুলিশকর্তারা সম্প্রতি পুরুলিয়ায় একটি বৈঠকে বসেন। মাওবাদীদের কোন নেতা, কোথায় কাজ করছেন, তাঁদের ছবি দুই রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের মধ্যে আদানপ্রদান হয়। গোয়েন্দা সূত্রেই পুলিশকর্তারা জানতে পারেন, পাকুড় হামলার ঘটনার পরে রঞ্জিত পালের পাকুড়ে যাওয়ার কথা। মাওবাদীরা নতুন করে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় সংগঠিত হচ্ছে খবর পেয়ে ওই বৈঠকে দু’রাজ্যের পুলিশ নতুন কৌশল ঠিক করে।
ছন্নছাড়া সংগঠনকে দানা বাঁধাতে নতুন মুখ খোঁজার দিকেই মাওবাদীরা গুরুত্ব দিচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। বিষয়টি মাথায় রেখে একদা যে সমস্ত এলাকা তাদের দখলে ছিল, সেখানে ফের যাতায়াত শুরু করেছেন মাওবাদী নেতারা। কারণ, এলাকায় জনভিত্তি তৈরি করতে না পারলে সংগঠন গড়া মুশকিল। তবে এই মুহূর্তে কারা আসা-যাওয়া করছেন সে সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হননি পুলিশ কর্তারা।
রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, “শুধু পিএলজিএ সপ্তাহ উপলক্ষেই নয়, মাওবাদীদের শহিদ সপ্তাহ থেকেই সতর্কতা জারি রয়েছে।” নতুন মুখ নিয়ে আসার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ও বরাবাজার এলাকায় ওদের যাতায়াত রয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। আরও নানা খবর পাচ্ছি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |