নিয়মিত স্কুলে আসেন না। রয়েছে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছেন অন্য শিক্ষকেরা। স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন স্কুল শিক্ষা দফতরে। স্কুলে এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জেরে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক থেকে অভিভাবকেরা। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-১ ব্লকের ঘোড়াদল উচ্চ বিদ্যালয়ের।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন সুকুমার মল্লিক। কিন্তু বছর কয়েক ধরে তিনি নিয়মিত স্কুলে আসছেন না। ফলে স্কুল পরিচালনা পাশাপাশি পঠনপাঠন নিয়েও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। তাঁরা জানান, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বইয়ের তালিকা প্রকাশে দেরি, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি বই বিতরণে দেরি হচ্ছে। পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ইউনিট টেস্ট কোন সময়ে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রধান শিক্ষকেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর অনিয়মিত আসা-যাওয়ার জন্য সব সময় আলোচনা করা যায় না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সার্ভিস বুক এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত কাজও নিয়মিত হচ্ছে না। পড়ুয়াদের অভিভাবকদের নিয়ে সভা করার বিষয়টিও ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রধান শিক্ষক এড়িয়ে যান বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের। এ সবের পাশাপাশি সুকুমারবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। ২০১২ সালের সর্বশিক্ষা মিশনের দেওয়া টাকায় বিতরণ করা বইয়ের কোনও রেজিস্ট্রার তৈরি করা হয়নি। বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য প্রয়োজনীয় শৌচাগারের ব্যবস্থাও করেননি প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হলেও শ্রেণিকক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করেননি। বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য বেঞ্চের সমস্যাকেও সে ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ে রয়েছেন প্রায় দু’হাজার ছাত্রছাত্রী। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১৬ জন এবং পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। তপশিলি জাতি-উপজাতির ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ১২৫ জন। প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতায় পুরো স্কুলেরই পড়াশোনার প্রচণ্ড রকম ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সম্পাদক নটবর সর্দার। তাঁর কথায়, “ভবন নির্মাণের জন্য টাকার অনুমোদন হলেও প্রথম কিস্তির কাজের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট প্রধান শিক্ষক না দেওয়ায় পরবর্তীতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার অনুমোদন মেলেনি। হিসাব সংক্রান্ত কোনও সভা ডাকা হলে উনি সেখানে হাজির হন না। সমস্ত বিষয়টি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানানো হয়েছে।” শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক স্কুল শিক্ষা দফতর।
কি বলছেন প্রধান শিক্ষক?
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগই মানতে চাননি সুকুমারবাবু। তিনি বলেন, “কোনও বিষয়ে সভা ডাকা হলে সেখানে শুধু চিৎকার-চেঁচামেচি হয়। এমনকি সম্পাদকও আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আর বিদ্যালয়ে না এসে বিদ্যালয়ের কাজে অন্যত্র যেতেই পারি।” আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “আমি কোনও আর্থিক দুর্নীতি করিনি। সরকারি নিয়মানুয়ায়ী ভবন নির্মাণ করতে যে টাকার অনুমোদন হয় তাতে নিয়ম মেনে কাজ করা যায় না। কোনও শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী বেশি থাকায় শ্রেণিকক্ষ বড় করতে হয়। সমস্ত বিষয়টি জেলা শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি।”
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়াল বলেন, “ওই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষককে নিয়ে সমস্ত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয় সে বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া হবে।” |