|
|
|
|
একশো দিনের কাজে পিছিয়ে পূর্ব |
এ বার গ্রামে আবেদনপত্র বিলির শিবির
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
যে কোনও উপায়ে বাড়াতে হবে শ্রম দিবস। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে সম্প্রতি এমন নির্দেশ এসেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। তাই এই প্রকল্পে আরও বেশি মানুষকে কাজ দিতে এ বার গ্রামে-গ্রামে শিবির করে আবেদনপত্র বিলির সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
রবিবার, রোজগার দিবস উপলক্ষে জেলা জুড়ে এই শিবির হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পেতে আবেদন করতে হয় গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে। এতে কিছু ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অসুবিধা থাকে। নতুন নিয়মে প্রতিটি গ্রামে শিবির করে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র নেওয়া হবে।”
২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে রাজ্যে ২২ কোটি শ্রম দিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত তার মাত্র এক-চতুর্থাংশ, ৬ কোটি শ্রম দিবস সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। হাতে আর তিন মাস! এর মধ্যে বাকি ১৬ কোটি শ্রম দিবস সৃষ্টি করতে হবে রাজ্যে। সে জন্যই বাড়তি তৎপরতা বলে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর। অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত আর্থিক বছরে জেলায় গড়ে ৪৩ দিন পেয়েছিলেন শ্রমিকরা। চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত কাজ হয়েছে গড়ে তিরিশ দিন। |
রাজনগর প্রাথমিক স্কুলে জেলাশাসক। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিনিধিরা রাজ্যে এসে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের তদারকি করার সময় পূর্ব মেদিনীপুরেও বৈঠক করেন। জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা ছাড়াও সেই বৈঠকে ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধানরা। বৈঠকে প্রতিদিন ৯৪ হাজার শ্রম দিবস সৃষ্টির জন্য জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলা হয়। এই প্রেক্ষিতে দ্রুত প্রতিটি পঞ্চায়েতকে সংসদ এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন কাজের প্রকল্প জমা দিতে বলেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি গ্রামে-গ্রামে শিবির করে আবেদনপত্র বিলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, “অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, বাসিন্দাদের কাছে জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁরা একশো দিনের কাজে যুক্ত হচ্ছেন না। আবার কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এসে কাজ পাওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে।” এর ফলে অনেকে জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও একশো দিনের প্রকল্পের কাজে যুক্ত হতে পারেন না। এই সমস্যাটা দূর করতে পঞ্চায়েত কর্মীদের গ্রামে-গ্রামে শিবিরে পাঠিয়ে আবেদনপত্র বিলি করা হবে। একশো দিনের প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের কাজ দিতেও বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা যাতে হালকা কাজ পান, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে।
রবিবার রোজগার দিবস উপলক্ষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় আবেদনপত্র বিলির শিবির শুরু হয়েছে। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য নন্দকুমার ব্লকের সাওড়াবেড়িয়া জালপাই ১ গ্রাম-পঞ্চায়েতের রাজনগর গ্রামের এমনই এক শিবিরে বিনা নোটিসে পৌঁছে গিয়েছিলেন এ দিন। তখন সেখানে একশো দিনের প্রকল্পে গ্রামবাসীদের আবেদন পত্র নেওয়া হচ্ছিল। শিবিরে পৌঁছে অন্তরাদেবী এলাকাবাসীর কাছে জানতে চান পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ কেমন চলছে। জেলাশাসককে হাতের কাছে পেয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা। |
|
তাঁরা জেলাশাসককে জানান, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ত্রিপুরারি খাল মজে থাকায় নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। বর্ষায় এক কোমরেরও বেশি জল থাকায় ধান চাষ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় বৃহস্পতি দোলই, রবীন্দ্রনাথ মাইতি, মাধুরী দোলই, গীতা দাসরা সমবেত ভাবে জানান, তাঁরা কাজ করতে চান। কিন্তু, জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত তাঁদের একশো দিনের কাজ দিচ্ছে না। সেখানেই ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের মানসরঞ্জন হাজরা। জেলাশাসক প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা করে দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের নির্দেশ দেন প্রধানকে। নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাট পশ্চিম, দক্ষিণ নারিকেদা, বরগোগারগোদা এলাকার শিবিরগুলিও ঘুরে দেখেন জেলাশাসক।
এ দিন কাঁথি-৩ ব্লকের ভাজাচাউলি অঞ্চলের হরিণা পাসদলবাড়ে রোজগার দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অনগ্রসর জাতি কল্যাণ দফতরের উপ-সচিব গোপাল চট্টোপাধায়, বিডিও প্রদীপ্ত বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ প্রমুখ। |
|
|
|
|
|