টাটা মোটরস সিঙ্গুরের জমিতে নতুন করে কারখানা গড়তে আগ্রহী। (‘সিঙ্গুর-জমি ছাড়তে নারাজ টাটা’, ১৩-১১) কিন্তু অনিচ্ছুক চাষি ও রাজ্য সরকার কেউই অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দেয়নি। এই বিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জমি দিতে অনিচ্ছুক চাষিকে স্বেচ্ছায় ইচ্ছুক করার একটা মডেল ভাবা যায়।
অন্তত গ্রাম-বাংলায় এ কথা সর্বজনবিদিত, জমি থেকে চাষি দু’ধরনের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। এক, আহার ও বিক্রির জন্য নিয়মিত ফসলের জোগান। দুই, মেয়ের বিয়ের টাকা, ছেলের ব্যবসার মূলধন, পরিজনের ব্যয়বহুল চিকিত্সার খরচ ইত্যাদি জোগাড় করার শেষ উপায় হয় জমি বিক্রি। তাই বহু চাষি বাজার দরের থেকে কিছু বেশি দামের বিনিময়েও জমি হাতছাড়া করতে চান না। আসলে জমি চাষির মনে যে গভীর নিরাপত্তার বোধ জাগায়, জমি বেচা টাকা সেটা পারে না। তাই সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষি এক একর জমির বিনিময়ে সরকার প্রস্তাবিত প্রায় নয় লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে রেখে বিনা পরিশ্রমে পঁচাত্তর হাজার টাকা আয় করতে অনাগ্রহী। অথচ চাষে ব্যয়ের তুলনায় আয় তেমন না-হওয়ায় একর পিছু অধিকাংশের আয় খুব বেশি হলে পঁচিশ হাজার টাকা। এই জটিল পরিস্থিতিতে অনিচ্ছুকদের স্বেচ্ছায় ইচ্ছুক করতে গেলে জমির বিনিময়ে চাষির জন্য অবশ্যই নিয়মিত আয় ও আপত্কালীন অর্থসংস্থান দুইয়েরই সুবন্দোবস্ত করতে হবে। এ কাজ সরকারি ব্যবস্থাপনায় করা যায়। |
ধরা যাক, সরকার অনিচ্ছুক চাষিকে এক একর জমির বিনিময়ে এককালীন টাকা না-দিয়ে ‘যে কোনও সময় সরকারের কাছে বিক্রয়যোগ্য’ একশোটি বিশেষ ল্যান্ড বন্ড দিল। প্রতিটি বন্ডের মূল্য এক একর জমির প্রকৃত বাজারদরের একশো ভাগের এক ভাগ। ওই অঞ্চলে জমির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমান হারে ওই বন্ডের দামও বাড়বে। চাষি তাঁর প্রয়োজনের সময় সরকারকে এক বা একাধিক বন্ড তত্কালীন দামে বিক্রি করে আপত্কালীন খরচের দায় মেটাতে পারবেন। বন্ডের বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে যত দিন চাষি টাকা না-নিচ্ছেন, তত দিন পর্যন্ত তাঁর দেওয়া জমির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সরকার থেকে ‘নিয়মিত আয়’ পাবেন। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কৃষিতে আয় বাড়লে এই আয়ের পরিমাণও বাড়বে। এই ব্যবস্থায় বহু ছোট ও মাঝারি চাষি চাইবেন তাঁর জমি অধিগৃহীত হোক। কারণ, চাষের খরচ বৃদ্ধি ও ফসল কাটার পরে ফসলের দাম পড়ে যাওয়ায় অনেকেরই যথেষ্ট আয় হয় না। অধিগৃহীত জমিতে বর্গাদার থাকলে ‘নিয়মিত আয়’ তো বটেই, বন্ডের কিছুটা ভাগ তাঁরও প্রাপ্য।
সরকার প্রদত্ত হওয়ায় চাষি এক বা একাধিক বন্ড যে কোনও ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখে সহজেই বাত্সরিক ১২ বা ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ পেতে পারেন। আজ গ্রাম-বাংলায় গরিব চাষি বহু ক্ষেত্রেই স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে বাত্সরিক ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ সুদে ধার নিতে বাধ্য হন। ল্যান্ড বন্ড প্রদানের মাধ্যমে অধিগ্রহণ চাষিকে শিল্পায়নের সাফল্য কামনা করতে বাধ্য করে। কারণ, শিল্পায়ন সফল হলে তাঁর বন্ডের দাম বাড়বে। চাষির এই সাফল্য কামনা শিল্পসংস্থার কাছে বিশেষ স্বস্তিদায়ক।
এই পদ্ধতি সরকারকেও আর্থিক সুবিধা দিতে পারে। ৪০০ একর জমির জন্য এককালীন ৩৬ কোটি (একর প্রতি দাম ৯ লক্ষ ধরলে) টাকার পরিবর্তে সরকারের খরচ হচ্ছে বছরে মাত্র ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে থাকছে ৪০০ একর জমির জন্য চাষিদের বাত্সরিক অর্থাত্ ‘নিয়মিত’ আয়ের ব্যবস্থা করতে খরচ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা (৪০০×৩০ হাজার) এবং চাষিদের আপত্কালে তাঁদের কাছ থেকে বন্ড কেনার জন্য আপাতত বাত্সরিক পৌনে এক থেকে পৌনে দুই কোটি টাকা। প্রাথমিক সমীক্ষা থেকে মনে হয়, বছরে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ জমির দাম সরকারকে মেটাতে হবে। যে কারণে চাষি জমি ধরে রাখতে আগ্রহী, সে কারণেই তিনি বন্ড ধরে রাখতে চাইবেন। বিশেষত, শিল্পায়নের ফলে জমির দাম বাড়তে থাকায় বন্ডের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী। নতুন এই শিল্পায়িত অঞ্চল থেকে কয়েক বছরের মধ্যে সরকারের যে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে তা দিয়ে ধীরে ধীরে বন্ডের দাম মেটানো অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। মাছের তেলেই কিছুটা মাছ ভাজা হয়ে যাবে।
মানসেন্দু কুণ্ডু। নৃতত্ত্ব ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা বারবারা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
|
অনুষ্ঠান মঞ্চ লাল (অন্য মতে মেরুন) কাপড়ে তৈরি হওয়ার ফলে তৃণমূল কর্তাদের আপত্তিতে প্রাণিসম্পদ দফতরের সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে (২০-১১) জেনে স্তম্ভিত হলাম। কোনও রংই কোনও রাজনৈতিক দলের একান্ত অধিকারভুক্ত বা একমাত্র পরিচায়ক নয়। এটা হয়তো ঠিক যে, বাম দলগুলোর পতাকার রঙে লালের ব্যবহার বেশি। তার মানে কি লাল রং ব্যবহার করলেই কেউ সি পি এম হয়ে গেল! আমেরিকাতে বিশিষ্ট অতিথিদের লাল কার্পেটে অভ্যর্থনা করা হয়। আমেরিকা তো বামপন্থী হয়ে যায়নি। তৃণমূলের লোকেরা কি পাকা পেঁপে বা তরমুজ খাবেন না? রক্তের লাল রঙ পালটানো যাবে কি?
বিষবস্তুর গভীরে না-গিয়ে বাইরের মোড়ক নিয়ে বাছবিচার মানুষের মধ্যে অন্ধ সংকীর্ণতা আনে। বিভিন্ন ধর্মের অন্তর্নিহিত ভাল বার্তাগুলিও এ ভাবে অন্ধ আচারসর্বস্বতায় ঢেকে যায়। যার থেকে সহজেই জন্ম নেয় সংকীর্ণ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা। তৃণমূলের সাম্প্রতিক ঘটনাটা দেখে মনে হচ্ছে, এ ভাবেও বিদ্বেষ ছড়াবে, যা কিনা সংকীর্ণ রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা।
মৃগেন্দ্রনাথ গাঁতাইত। কলকাতা-১৫৪
|
‘মসজিদে কম্পিউটারের পাঠ শান্তা, শবনমদের’ (১৭-১১) সংবাদটির জন্য কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, নিম্নলিখিত তথ্যগুলিতে কিছু ভুল থেকে গেছে।
১) মসজিদ ১২৮ বত্সর পুরাতন, ২২৮ বত্সর নয়।
২) মসজিদের আয় সর্বসাকুল্যে বাত্সরিক ৮ লক্ষ টাকার বেশি নয়। যার অডিট রিপোর্ট রয়েছে।
৩) আব্দুর রহিম খান, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, অধ্যক্ষ নয়। তিনি আচার্য গিরিশচন্দ্র বোস পূর্বতন বঙ্গবাসী কলেজ অব কমার্স-এর প্রিন্সিপাল ছিলেন।
ইন্তেজার আহমেদ। সেক্রেটারি, কোচবিহার নতুন মসজিদ কমিটি |