বড় রাস্তায় নয়, এ বার থেকে শুধু গলিতে অটো চলতে দেওয়া নিয়ে ভাবনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র মনে করেন, অটো আর বাস একসঙ্গে বড় রাস্তায় কখনওই চলতে পারে না। অটো চলবে গলিতে। এ ব্যাপারে অটো ইউনিয়নগুলি পদক্ষেপ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আড়াই বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে অটোকে শৃঙ্খলায় আনতে একাধিক নির্দেশ এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। কিন্তু সেগুলির কোনওটিই পালন হয়নি। অভিযোগ, অটো শৃঙ্খলিত হওয়ার বদলে বেপরোয়াই হয়েছে বেশি।
ক্ষমতায় আসার পরে কলকাতা শহর এবং শহরতলির অটোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে একটি কমিটি তৈরি করেছিল পরিবহণ দফতর। পরিবহণ দফতরের প্রাক্তন সচিব আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি দু’মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেয় সরকারের কাছে। সেখানে এক দিকে যেমন কলকাতার সব অঞ্চলে অটো-ভাড়ার হার এক রকম করার সুপারিশ করা হয়েছিল, তেমনই এক এলাকার অটো যাতে অন্য এলাকায় যেতে না পারে সে জন্য অটো-এলাকাগুলিকে কয়েকটি
জোনে ভাগ করে দেওয়ার সুপারিশ করে ওই কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত করা দূর অস্ৎ, এখনও পর্যন্ত সেই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে নিয়েই আসেনি রাজ্য পরিবহণ দফতর।
এর পর থেকে একাধিকবার অটো নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। কখনও তা অটোয় পাঁচ জন যাত্রী তোলা নিয়ে, কখনও বা যথেচ্ছ অটোর ভাড়া বাড়ানো নিয়ে। কিন্তু নির্দেশই সার, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা পালন হয়নি। বারংবার জ্বালানি থেকে যন্ত্রাংশ সব জিনিসের দাম বাড়া সত্ত্বেও বাসের ভাড়াবৃদ্ধিতে নারাজ সরকার। কিন্তু একই সঙ্গে গত এক বছরে একাধিকবার বেড়েছে বিভিন্ন অটো রুটের ভাড়া। সেই ভাড়া বাড়ারও কোনও নির্দিষ্ট হার নেই। এক টাকা থেকে চার টাকা পর্যন্ত অটো ইউনিয়নগুলি বিভিন্ন রুটে খুশিমতো ভাড়া বাড়িয়েছে।
এই অবস্থায় পরিবহণমন্ত্রী শনিবার বাসমালিক সংগঠনগুলির অফিসে গিয়ে অটো সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটাও একটা নিছকই নির্দেশ বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশের কর্তারা। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার মতে, “বড় রাস্তায় বাসের প্রধান প্রতিযোগী অটো। বাসের ভাড়া সরকার বাড়াচ্ছে না। এই অবস্থায় বড় রাস্তা থেকে অটো তুলে দেওয়ার দাবি অনেক দিন থেকেই করে আসছেন বাসমালিকেরা। সেই কারণে বাসমালিকদের খুশি করতেই পরিবহণমন্ত্রী ওই নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।”
যদিও অটো নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর নির্দেশকে ‘গঠনমূলক’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেত্রী দোলা সেন। তিনি বলেন, “সরকার পরিবহণ নিয়ে একটি সুসংহত পরিকল্পনার পথে এগোতে চাইছে। অটো তারই একটি অঙ্গ। আমাদের যেমন অটোর স্বার্থ দেখতে হবে তেমনই বাসমালিক এবং শ্রমিকদের স্বার্থও দেখতে হবে। পরিবহণমন্ত্রী একটা ভাবনার কথা বলেছেন। তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবনাচিন্তা করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার পরেই সরকার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।” দোলাদেবীর দাবি, “বাসের সমস্যা বুঝতে পরিবহণমন্ত্রী নিজেই বাসমালিকদের অফিসে গিয়েছেন। অতীতে এ রাজ্যে কখনও এমন হয়নি। অটোর ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী সমস্যার মূলে গিয়ে সরকার সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।”
তবে বিরোধী দল সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-র পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সিটু-র অটো ইউনিয়নের নেতা বাবুন ঘোষের কথায়, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন বড় রাস্তায় অটো চালাচ্ছি। সরকারই সেই সব রুটে পারমিট
দেয়। গত ৩০ মাসে সেই সব রুটে পারমিট পুনর্নবীকরণও হয়েছে। কাউকে খুশি করতে গিয়ে পরিবহণমন্ত্রী কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন, তা মানা যাবে না। এ সম্পর্কে সরকারের লিখিত বিজ্ঞপ্তি বেরোলে আমরা
তাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের
দ্বারস্থ হব।”
পরিবহণমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, পুজোর সময়েই অটোকে বড় রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতে কোনও অসুবিধে হয়নি। তাঁর কথায়, “অটো বড় রাস্তায় এলে বাস-মিনিবাস ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওরাও তো মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। আমরা তাই অটোকে বড় রাস্তা থেকে সরানোরই চেষ্টা করছি।” |