জলের নীচেই উড়ুক্কু মাছ
আর রঙিন প্রবালের রাজ্য

ক দিকে সাইক্লোন পিলিন আছড়ে পড়ছে ওড়িষা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অঞ্চলে, আরেক দিকে দুর্গাপুজোর আনন্দময় পরিবেশ বৃষ্টি ভেজা। তার মধ্যেই আবহাওয়া দপ্তরের আশ্বাসবাণী ভরসা করে দুর্গানাম জপতে জপতে নবমীর সকালে বিমানে বেরিয়ে পড়লাম পোর্টব্লেয়ারের উদ্দেশ্যে।
পোর্টব্লেয়ার বিমানবন্দরে পৌঁছেই দেখি রোদ ঝলমল করছে। তাড়াতাড়ি হোটেলে জিনিসপত্র রেখে, খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে পরলাম রাজীব গন্ধী ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স দেখতে। এত সুন্দর পরিবেশ দেখে বড্ড ভাল লাগল। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে কাটিয়ে গেলাম সেলুলার জেলের লাইট অ্যান্ড লাইট শো দেখতে। কালাপানি সাজাপ্রাপ্ত বিপ্লবীদের উপর জেলার জন ব্যারি ও ইংরেজ সরকারের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী দেখে চোখের জল সামলাতে পারলাম না।
নীল দ্বীপ। ছবি লেখকের সৌজন্যে।
পরের দিন এম ভি সরোজ নামের নৌকায় রওনা দিলাম তিনটে দ্বীপ দেখতে। প্রথমে রস আইল্যান্ড, তারপর ভাইপার আইল্যান্ড, শেষে কোরাল দ্বীপ। রস আইল্যান্ড তত্‌কালীন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী ছিল। এখন অবশ্য সেখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের চার্চ, বাজার, ক্লাবঘর ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ ও ছোট্ট একটি মিউজিয়াম। ভাইপার আইল্যান্ড আবার একেবারে আলাদা। বিষধর ভাইপার সাপের নামানুসারে নামাঙ্কিত এই দ্বীপে মহিলা বন্দীদের রাখা হত ও ফাঁসি দেওয়া হত। এর পরে গেলাম নর্থ বে বা কোরাল দ্বীপে। এখানকার রঙিন প্রবাল এবং রঙবাহারি সামুদ্রিক মাছের কথা আগেই অনেক শুনেছিলাম। পৌঁছেই তাড়াতাড়ি গাইডের সাহায্য নিয়ে স্নরকেলিং-এর উপকরণ লাগিয়ে যেই মাথা ডোবালাম জলের নীচে, ওমনি চোখের সামনে খুলে গেল সমুদ্রের নীচের এক আশ্চর্য জগত্‌। অসংখ্য রঙিন প্রবাল আর সেই প্রবাল পুঞ্জের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো প্যারট ফিস, ক্লাউন ফিস, স্টার ফিস ও নাম না জানা অসংখ্য রঙিন মাছের দল। দেখতে দেখতে জীবনটাকে ধন্য মনে হল।
পরের দিন চললাম অন্য পথে। ফিনিক্স-বে জেটি থেকে এমবিহাট বে জাহাজে রওনা হলাম নীল দ্বীপে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য ভরা এই ছোট্ট দ্বীপ। জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে উপলদ্ধি করলাম জলেরও কত রঙ হতে পারে। হঠাত্‌ হঠাত্‌ই জল থেকে লাফ দিয়ে উড়ছিল উড়ুক্কু মাছের দল। দূরে ছোট ছোট সবুজ দ্বীপপুঞ্জের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাত্‌ দেখি একটা ডলফিন তার নিজ ভঙ্গিমায় লাফ দিল অতল সমুদ্রে। যেন পুরো ডিসকভারি চ্যানেল থেকে উঠে আসা দৃশ্য। আমরা থাকলাম ভরতপুর বিচের ধারে গাছগাছালি ঘেরা সুন্দর কটেজে। এর কাছেই লক্ষ্মণপুর বিচ। লক্ষ্মণপুর যেন সমুদ্রের ধারে প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া খিলান। মন ভরে দেখলাম বিচের সূর্যাস্ত। পরের দিন সকালে একই জাহাজে চললাম হ্যাভলক আইল্যান্ড দেখতে। এই সমুদ্র যাত্রার স্মৃতি আমার সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থাকবে। এখানেই দেখলাম সি-প্লেন। সমুদ্রে বুকে ভাসতে ভাসতে হঠাত্‌ আকাশে উড়ে যায় তা। হ্যাভলকে নামার কিছুক্ষণ পরেই আমরা স্পিড বোটে করে আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছলাম এলিফ্যান্ট বিচে। এখানে আবার স্নরকেলিং করলাম ও প্রায় ঘন্টা দুই ধরে স্নান করলাম। দুপুরে সুস্বাদু কাকোরি মাছ দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সারলাম। হোটেলে সামান্য বিশ্রামের পরেই গেলাম পৃথিবীর বিখ্যাত বিচগুলির অন্যতম রাধানগর বিচে। বহুদূর বিস্তৃত রজতশুভ্র বালুতট, উদ্দাম সমুদ্রের নীল জল আর বালুতট সংলগ্ন শ্যামল বনানী যেন চোখের সামনে এক মায়াবী জগত্‌ খুলে দিল। প্রতিটি মুর্হূত খুব উপভোগ করলাম। হ্যাভলক থেকে আবার পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরে স্থানীয় দর্শনীয় জায়াগাগুলো ঘুরে দেখলাম। তারপরে সড়ক পথে রওনা দিলাম বারাটাং, রঙ্গত, মায়াবন্দর হয়ে ডিগলিপুর। ঝিরকাটাং থেকে বারাটাং পর্যন্ত বিস্তৃত ঘন সবুজ ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট। এই জঙ্গলেই জারোয়াদের সামনাসামনি হলাম। বারাটাং জেটি থেকে স্পিড বোটে চললাম জঙ্গলে। সেখান থেকে আরও আধ ঘন্টা হেঁটে পৌছলাম লাইন স্টোনে। এরপরে মাড ভলক্যানো, আমকুঞ্জ বিচ ইত্যাদি আরও অনেক কিছু দেখলাম। সেসব অভিজ্ঞতাও অসাধারণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.