বর্ধমান ও বীরভূম জেলা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকা খরচে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে জঙ্গলমহলের তিন জেলা। শনিবার বাঁকুড়ায় পর্ষদের বার্ষিক মূল্যায়ন বৈঠকের পরে এমনটাই জানালেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা।
পর্ষদ সূত্রের খবর, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ৭৪টি ব্লকের মধ্যে ৫৪টি ব্লকই পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহল এলাকার মধ্যে রয়েছে। গত ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ওই তিন জেলাই পর্ষদের দেওয়া টাকার অনেকখানিই খরচ করতে পারেনি। ওই অর্থবর্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা। এখনও পর্যন্ত ওই জেলা প্রায় ৩১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছে। পুরুলিয়া জেলা পেয়েছিল প্রায় ২১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছে। বাঁকুড়া জেলার জন্য প্রায় ২৭ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। খরচ হয়েছে প্রায় ২২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা। সেখানে বর্ধমান জেলা পেয়েছিল প্রায় ১২ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। বীরভূম জেলার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ১৯ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। দুই জেলা প্রশাসনই সব টাকা খরচ করেছে। বৈঠকে ছিলেন পাঁচ জেলার জেলাশাসক ও সভাধিপতিরা। মন্ত্রী বলেন, “এ দিনের বৈঠকে গত আর্থিক বর্ষের কাজের মূল্যায়ন করা হল। তাতে দেখা গিয়েছে বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় ভাল কাজ হয়েছে। ওরা পুরো টাকাই খরচ করতে পেরেছে। তুলনায় জঙ্গলমহলের তিন জেলায় এখনও কিছু টাকা পড়ে রয়েছে।” |
অর্থ খরচের দিক দিয়ে জঙ্গলমহল পিছিয়ে কেন? মন্ত্রীর দাবি, “পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়নের কাজে কোনও জেলাই পিছিয়ে নেই। সবাই পরিকল্পনার প্রায় ১০০ শতাংশ কাজ করেছে। তবে বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় কাজের পরিমাণ কম হওয়ায় ওরা সময়মতো ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ পেয়ে গিয়েছে। ফলে সেই খরচ খাতায় উল্লেখ করতে পারছে। কিন্তু বাকি তিন জেলায় কিছু কাজের ওই সার্টিফিকেট না পাওয়ায় সরকারি ভাবে খরচ দেখানো যাচ্ছে না।”
এ দিনের বৈঠকে কাজে আরও গতি আনার জন্য জোর দেন মন্ত্রী। বৈঠক শেষে পুরুলিয়ার জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “লাগাতার বৃষ্টি ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য আমাদের জেলায় পর্ষদের কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে মানছি। তবে বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করব।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি অবশ্য বলেন, “পর্ষদের কাজ সম্পর্কে বলতে পারব না।” বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলেছি। বাকি কাজও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।”
বৈঠকে মন্ত্রী জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকদের এক হয়ে উন্নয়নের কাজ করতে নির্দেশ দেন। কাজে নামার আগে তিনি তাঁদের এলাকা ভিত্তিক সমস্যাগুলিকে আলাদা চিহ্নিত করতে বলেন। তারপর সেই সমস্য সমাধানের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, “পরিকল্পনা তৈরি করে আমার দফতরে পাঠান। অনুমোদন পেতে দেরি হবে না।”
জঙ্গলমহলের তিন জেলার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৮টি, পুরুলিয়ার ২০টি ও বাঁকুড়ার ১৬টি ব্লক পর্ষদের আওতায় রয়েছে। ওই সব এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রাস্তা, সেতু তৈরি করা থেকে সেচের ব্যবস্থার মতো বিবিধ উন্নয়নের কাজ করে পর্ষদ। আগের বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পর্ষদের টাকা ঠিকমতো খরচ করতে না পারার অভিযোগ তুলে বার বার সোচ্চার হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল। এখন তৃণমূলের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সেই একই অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের অভিযোগ, “তৃণমূলের রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের উন্নয়নে ব্যর্থ। তারা জঙ্গলমহলবাসীকে বঞ্চিত করছে।” |