বিনোদন গোয়ার উৎসবে সত্যজিৎ, ঋত্বিকে বাজিমাত বাঙালির

৩০ নভেম্বর
ত্যজিৎ-ঋত্বিক যুগলবন্দির জয়।
গোয়ায় ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (আইএফএফআই)-এর মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের দুই শিরোপা ছিনিয়ে নিল দুই মহীরূহের ছায়াস্নিগ্ধ দুই ছবি।
একটি ছবি ‘পথের পাঁচালি’র অপুর চরিত্রে অভিনয়ের পর একেবারেই হারিয়ে যাওয়া শিশুশিল্পী সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন অবলম্বনে। অন্যটি রাখঢাক-বিহীন ঋত্বিক-চরিত।
আর বলার দরকার নেই। যথাক্রমে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অপুর পাঁচালি’ এবং কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘে ঢাকা তারা’। এ বছরের আইএফএফআই-এ কৌশিক তাঁর অপুর ছবির জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার। পুরস্কারমূল্য ২০ লক্ষ টাকা। কমলেশ্বরের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ পেয়েছে ‘সেন্টিনারি অ্যাওয়ার্ড সিলভার পিকক।’ পুরস্কারমূল্য ১০ লক্ষ টাকা। তরুণ তেজপাল ও তাঁর কেলেঙ্কারি নিয়ে সরগরম গোয়ায় শনিবারটা অন্তত বঙ্গবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে রইল।
দুই পরিচালকই ইদানীং বেশ আন্তর্জাতিক মেজাজে রয়েছেন। কমলেশ্বর ঝটিকা সফরে গোয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে কলকাতা ছুঁয়ে ফের গোয়ায় এসেছেন। আর কৌশিক আপাতত সুইডেনে। মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি ঠান্ডায় তিনি ব্যস্ত চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নির্বাসিত’-র শুটিংয়ে। এ ছবির কৌশিকই প্রযোজক। এক বারই যাতায়াতের ভিসা থাকায় কৌশিকের আর পুরস্কার নিতে মাঝপথে দেশে ফেরা হয়নি। তাঁর হয়ে প্রযোজকেরাই পুরস্কারটা নিয়েছেন। সুইডেন থেকে কৌশিক বললেন, “মনে পড়ে যাচ্ছে, শ্রেষ্ঠ জুরি পুরস্কার পেয়েছিলাম ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’র জন্য। পুরনো সব ভাল-মন্দ আমার কাজের প্রেরণা।”
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
অনেকেই বলেছেন, ‘অপুর পাঁচালি’র সব থেকে বড় চমক হল সত্যজিৎ রায়ের ছবির মূল ফুটেজ ব্যবহার করা। গল্পের সূত্রেই বারবার ফিরে আসে শ্যুটিংয়ের গল্প, ছবির দৃশ্যগুলো। সেটা আখেরে ‘অপুর পাঁচালি’কে সুবিধে দিয়েছে বলেই মনে করেন কলকাতা নিবাসী প্রযোজক ভরত বিজয়ন। ভরতের ছবি ‘দ্য কফিন মেকার’ নিয়েও বেশ আলোচনা হয়েছে গোয়ায়। সেই ছবির আবহসঙ্গীত করেছেন বঙ্গজ সুরকার জুটি বাপি-টুটুল। ‘দ্য কফিন মেকার’-এর পরিচালক বীণা বক্সী কিন্তু ভরতের সুরে সুর মেলালেন না। বললেন, “অপুর পাঁচালি ভাল ছবি। তবে পথের পাঁচালি-র এত ফুটেজ ব্যবহার করলে পরিচালকদের ক্ষেত্রে একটা অসুবিধে থাকে। কারণ, তখন এক জন দিকপালের ছবির ফুটেজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়।”
কৌশিকের যদিও সাফ কথা, “সত্যজিতের ফুটেজ ছাড়া ছবিটা হত না। তবে ঠিক যেটুকু না হলে নয়, ততটুকুই আছে। সারা ছবিতে মাত্র ৯ মিনিট। এই ৯ মিনিট এত স্মৃতি উস্কে দিতে পারে, তার ইয়ত্তা নেই। অপু কল্পনাজাত, সুবীর বাস্তব। কাজেই অপুর সত্যি হয়ে ওঠার মূল ফুটেজেরও সমান আবেদন। অপুর তিন ছবি, আর এই ছবির দৃশ্য, আবহ, মেলানোটাই আমাদের টিমের কাজ ছিল।” সুইডেনের আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই নিজের অনুভূতিটা ব্যাখ্যা করলেন কৌশিক ‘জমে গিয়েছে!’
কেরিয়ারের সব থেকে বড় পুরস্কার তো এটাই, তাই না? কৌশিক বলছেন, “সত্যি, আশাও করিনি কখনও যে কিছু পুরস্কার পেতে পারি। তাই কাজের শিডিউলটা সুবিধেমতো তৈরি করা হয়েছিল। চূর্ণীর শু্যটিংটার পরিকল্পনা আর ভিসা আগেই করা হয়েছিল। তা বদলানোর কোনও জায়গা ছিল না। ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারটাও তাই মিস করে গেলাম গোয়ায়।” তবে ছবি দেখানোর পরে এত ফোন আর এসএমএস পেয়েছিলেন যে বুঝতে অসুবিধে হয়নি, ছবিটা দর্শকের ভাল লেগেছে। পুরস্কারটা যে নিজে নিতে পারলেন না? পরিচালকের মনে হচ্ছে, সিনেমায় চিরকাল কল্পনা আর নির্মাণের মধ্যে ফাঁক থেকেই যায়। ঈষৎ ঠাট্টার সুরে তিনি বলছেন, “এই রকম একটা সাফল্যের সময় আমায় এই উত্তেজনা, উৎসব থেকে সরিয়ে উত্তর গোলার্ধের এক নির্জন দ্বীপে আগলে রাখার জন্য ঠাকুরকে ধন্যবাদ।” ‘অপুর পাঁচালি’র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা ও মহেন্দ্র সোনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গোয়ায় এসেছিলেন। শ্রীকান্তের মতে, ‘অপুর পাঁচালি’ সোজা-সরল এবং আবেগভরা। আজকের দিনে যা বিরল। “সিনেমায় গল্প-বলা আর শট নেওয়াটা খুব জটিল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে এটা একদম অন্য রকম স্বাদের,” বলছিলেন শ্রীকান্ত। আর এক প্রযোজক মহেন্দ্র সোনির কথায়, “এতে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির খুব সাহায্য হবে। ‘অপুর পাঁচালি’র আন্তর্জাতিক রিলিজের কথা আমরা ভাবছি।” কমলেশ্বরের পরের ছবি ‘চাঁদের পাহাড়’-এরও প্রযোজক তাঁরাই। মহেন্দ্র মনে করছেন, এই পুরস্কার কমলেশ্বরের আগামী ইনিংসকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
কমলেশ্বর যে পুরস্কারটা পেলেন, সেই ‘সেন্টিনারি অ্যাওয়ার্ড’ চালু হয়েছিল গত বছর। পেয়েছিলেন মীরা নায়ার। উৎসবের বিভিন্ন বিভাগ ‘ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন’, ‘সিনেমা অব দা ওয়ার্ল্ড’, ‘ইন্ডিয়ান প্যানোরামা’ বিভিন্ন বিভাগের সমস্ত ছবি থেকে মোট ন’টি ছবি এই পুরস্কারের বাছাই তালিকায় এসেছিল। শেষ হাসি হেসেছেন ঋত্বিক, থুড়ি কমলেশ্বর! গত রবিবারই ‘মেঘে ঢাকা তারা’র প্রদর্শন উপলক্ষে গোয়াতে এসেছিলেন কমলেশ্বর। সেই রাতেই চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকায়, বিদেশি অভিনেতাদের নিয়ে ‘চাঁদের পাহাড়’-এর ডাবিং করাতে। কাজ সেরে কলকাতায় ফিরেছেন শুক্রবার। তার পর রাতের বিমান ধরে মুম্বই হয়ে শনিবার সকালে ফের গোয়ায়।
এখনও জেট ল্যাগ কাটেনি। তবে কমলেশ্বর উচ্ছ্বসিত। বললেন, “জাতীয় পুরস্কারের সময় আমার ছবিটা বিবেচিত না হওয়ায় মন খারাপ হয়েছিল। এখন সেই দুঃখটা আর থাকল না। কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে, যাঁর কাজ আর দর্শনের উপর ভিত্তি করে এই ছবিটা আমরা বানিয়েছিলাম, তাঁকে আমরা সেই সম্মানটা দিতে পারিনি। এই পুরস্কারটা আমাদের তরফ থেকে তাঁর প্রতি একটা শ্রদ্ধার্ঘ।”
যদিও অলক্ষ্যে নিশ্চয়ই মুচকি হাসছেন ঋত্বিক। এবং সত্যজিৎ!

নমস্কার: মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। ছবি: পিটিআই।
জন্মদিনে জিৎ। পিছনে পায়েল। ছবি: রণজিৎ নন্দী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.