এসজেডিএ (শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)-তে বহু কোটির আর্থিক দুর্নীতির একাধিক মামলায় মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকে শুক্রবার টানা সাত ঘণ্টা জেরা করল শিলিগুড়ি পুলিশ। কিরণ কুমার এসজেডিএ-র প্রাক্তন চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার থাকাকালীন (২০১১-র সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩-র মার্চ) ওই দুর্নীতি হয়েছিল বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি থানার গোয়েন্দা বিভাগে ওই জেরা চলছে বলে খবর পেয়ে এ দিন দুপুরে থানায় পৌঁছে ওই প্রশাসনিক কর্তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান ডিওয়াইএফের নেতা-কর্মীরা। তবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন জানান, ওই জেলাশাসককে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, আজ, শনিবারেও তাঁকে জেরা করা হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “মালদহের জেলাশাসক তথা এসজেডিএ-র প্রাক্তন সিইও-কে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” এ দিন রাতে শিলিগুড়িতে থেকে যান মালদহের জেলাশাসক। তবে রাত পৌনে ৮টায় এ দিনের মতো জেরা-পর্ব মেটার পরে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। কোনও মন্তব্য না করে তিনি গাড়িতে থানা ছেড়ে বেরিয়ে যান।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত আটটি মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৭০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে প্রকল্পগুলির বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার অন্যতম হলবাগডোগরা, মালবাজার, ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজ, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি পরিকাঠামো তৈরি, জোড়াপানি নদী সংস্কারে মাটি কাটা এবং বাঁধ মেরামতির কাজ, শিলিগুড়ি শহরে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচে বসানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মান এবং বরাত পাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে অভিযোগ। তা ছাড়া, ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জাল নথি তৈরির অভিযোগও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত ১৬ মে এসজেডিএ-র বর্তমান সিইও শরদ দ্বিবেদী প্রধাননগর থানায় অভিযোগ জানান। ইতিমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ এসজেডিএ-র তিন বাস্তুকার এবং একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার ও কর্মী-সহ মোট ১০ ধরেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ওই সমস্ত প্রকল্পগুলির বিষয়েই প্রাক্তন সিইও-কে জেরা করা হয়। দুই তদন্তকারী অফিসার ছাড়াও জেরার সময় উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের এসিপি অভিষেক গুপ্ত। জেরার সময় না থাকলেও দফায় দফায় খোঁজ নিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করা হয়, তা কেবল এসজেডিএ-র সিইও-র জানার কথা। এ দিন জেরায় পুলিশ অফিসারদের কাছে এসজেডিএ-র প্রাক্তন সিইও দাবি করেন, এসজেডিএ-র কয়েক জন বাস্তুকারকে বিশ্বাস করে তিনি সেই ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। এক পুলিশ-কর্তা বলেন, “ওই দাবি ঠিক না ভুল, দেখা হবে।”
ইতিমধ্যেই এই আর্থিক দুর্নীতির মামলায় জেরা করা হয়েছে এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, এসজেডিএ-র বোর্ড সদস্য কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, শিলিগুড়ির প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মা এবং জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চন্দন ভৌমিককে। |