ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে সর্বাধিক ৭০% পর্যন্ত ছাড় মিলছে। রাজ্যে শিশু-মৃত্যুর হারও গত দু’বছরে যথেষ্ট কমেছে। উপরন্তু রুগ্ণ সদ্যোজাতের চিকিৎসায় জেলায় জেলায় গড়ে উঠেছে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)। ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ৫৪% ছাড়ে ইনসুলিন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্যের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে শুক্রবার বিধানসভায় এই সব কাজের কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ-ও বললেন, “আমাদের ন্যায্য মূল্যের দোকান দেখে মহারাষ্ট্র সেই মডেল গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার অন্য রাজ্যগুলোকেও বলেছে তা অনুসরণ করতে।” আর এ প্রসঙ্গেই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার দশা বেহাল করে রেখে যাওয়ার জন্য আঙুল তুললেন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের দিকে।
এ দিন বিধানসভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সদ্যোজাতদের চিকিৎসা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। সভায় তখন উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য দফতরটি যাঁর অধীনে। প্রতিমন্ত্রী মূল প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরে অতিরিক্ত প্রশ্ন আসতে থাকলে মুখ্যমন্ত্রী উঠে দাঁড়ান। বাদবাকি প্রশ্নের জবাব তিনিই দেন। সেই সঙ্গে আক্ষেপ করেন, “বামফন্ট সরকার একটা হাসপাতালও ভাল করে তৈরি করেনি! শুধু ঘর তৈরি করে দিয়েছে। এ দিকে চিকিৎসক নেই, নার্স নেই। নতুন সরকার আসার পর থেকে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। নার্সেরও অভাব। চিকিৎসকের জন্য অন্য রাজ্যে আবেদন করতে হচ্ছে। একটা ট্রমা সেন্টার পর্যন্ত তৈরি হয়নি রাজ্যে।” তাঁর কথায়, “বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থা ছিল জীবন্ত যমালয়ের মতো!”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধানসভায় বক্তব্য পেশ করছিলেন, বিরোধী শিবিরের কেউ সভায় ছিলেন না। বিরোধীদের শূন্য আসনের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, “পঁয়ত্রিশ বছর ধরে যারা প্রগতিশীলতার কথা বললেন, তাঁরা গ্রামের মানুষের চিকিৎসার কথা ভাবতে পারলেন না!” এমনকী, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে কটাক্ষ করে তাঁকে বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে আহ্বান করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “উনি (সূর্যবাবু) তো ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। চন্দ্রিমার সঙ্গে কমপিট করুন না! আমার সঙ্গে পরে আসবেন। চন্দ্রিমা জেলায় যা ঘুরেছে, তা উনি ঘুরেছেন কি না জিজ্ঞাসা করুন।”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সভায় জানান, সম্প্রতি মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর সফরে গিয়ে তিনি প্রসূতি-শিশুর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, সেখানে নাবালিকা বিবাহের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি, অন্য দিকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারও খুব কম। জন্মের পরে শিশুকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, “আমি নিজেও গ্রামে জন্মেছি। গ্রামের দাইমা-রা খারাপ নন। কিন্তু দূষণ এত বাড়ছে যে, জন্মের পরে সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথক ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমি শুনেছি, অনেক সময়ে বাড়িতে শিশু জন্মানোর পরে নাড়ি কাটার সময়ে গরম তেল ব্যবহার করা হয়। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব জরুরি। ”
পাশাপাশি বিপুল অর্থ সঙ্কটের মধ্যেও তাঁর সরকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নানা ধরনের সংস্কারমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে এ দিন দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। “কর্মীরা বলছেন, ডিএ দাও। আমি তো দিতেই চাই। কিন্তু টাকা না থাকলে কোথা থেকে দেব? আমার যদি ক্ষমতা থাকত, দিতাম। ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকেও ঋণ নিয়ে চলে গিয়েছে! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টাকা নেই। তবে আমাদের মন আছে। সরকারের একটা পরিকল্পনা আছে। লক্ষ্য আছে।” বলেন তিনি। শুধু স্বাস্থ্য নয়, সব দফতরকে এ বার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, “রাজনীতি করে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গকে শেষ করে দিয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি হলে বাংলার পরবর্তী প্রজন্ম আর বাঁচবে না।” |