অভিষেক খুনে দোষী সাব্যস্ত তিন বন্ধু
ঘুমের ওষুধ-মেশানো বিয়ার খাইয়ে, গলা টিপে, উনিশ বছরের অভিষেক চাচানকে খুন করেছে তারই বন্ধুরা, এই অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল শিলিগুড়ি। ৫ বছর বিচারের পর অভিযুক্ত ছয় যুবকের তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। বাকিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার শিলিগুড়ি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট কোর্ট) সৌম্যব্রত সরকার ওই রায় দেন। শনিবার সাজা ঘোষণা করা হবে।
অভিষেক চাচান
অভিষেক খুনের দায়ে দোষীরা হলেন সুরজিৎ দাস, রোমান সরকার এবং সহিদুর রহমান। এঁদের মধ্যে রোমান এবং সহিদুর ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নিহত অভিষেকের সহপাঠী। যাঁরা খালাস পেয়েছেন তাঁদের নাম আনন্দ গুপ্ত, নীলকমল শর্মা এবং অমিত মণ্ডল। নিহত অভিষেকের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত ছয়জনের সকলের সাজার জন্য উচ্চতর আদালতে আবেদন করা হবে। অন্য দিকে মূল অভিযুক্ত সুরজিতের আইনজীবী জানান, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবেন।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে সুরজিৎ, রোমানরা কোনও কথা বলেননি। চুপ করে আদালতের লকআপে দাঁড়িয়েছিলেন। দোষী সাব্যস্ত তিনজনের কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। তবে অভিষেকের বাবা অরবিন্দ চাচান রায় শোনার পরে কেঁদে ফেলেন। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে অরবিন্দবাবু বলেন, “পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছিল, আমার ছেলের খুনে তারা প্রত্যেকে জড়িত ছিল বলে আমার দৃঢ় সন্দেহ। সকলেরই সাজা হবে, আশা করেছিলাম। তিন জনের হয়েছে। বাকিরা খালাস হয়েছে। তবুও আমি হাল ছাড়ব না। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে সকলের সাজার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে যাব।”
সহিদুর রহমান সুরজিৎ দাস রোমান সরকার
পাঁচ বছর আগে শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা তথা কল সেন্টারের কর্মী অভিষেকের (১৯) দেহ মেলে ফাঁসিদেওয়ার লিউসিপাখুরির একটি কালভার্টের মধ্যে। তদন্তে নেমে পুলিশ মোবাইল ফোন-সহ একাধিক সূত্রে জানতে পারে, কয়েকজন বন্ধু অভিষেককে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ সেই বন্ধুদের জেরার পরে গ্রেফতার করে। পুলিশি তদন্তে প্রমাণ হয়, অভিষেককে খুনের পরে দেহটি বাইকে বসিয়ে দুজন মিলে ফাঁসিদেওয়ার লিউসিপাখুরিতে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। অভিষেকের খুনের মামলা দায়ের হলে গোটা শহরে হইচই পড়ে যায়। ওই মামলায় তিনজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া গ্রেফতার হন। তাঁরা হলেন, রোমান, সহিদুর ও আনন্দ। সুরজিৎ শিলিগুড়ি শহরের মিত্র সম্মিলনী হলের গলিতে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করতেন।
আদালতের সরকারি আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, “দোষী প্রমাণিত হওয়া সুরজিতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাকে। যার সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। অন্য দিকে বাকি দুই অভিযুক্তের মধ্যে রোমান ও সহিদুরের বিরুদ্ধে খুনে সাহায্য করা ও তথ্য প্রমাণ লোপাট করার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। তাঁদের সাত বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।” মূল অভিযুক্ত সুরজিৎ দাসের আইনজীবী পার্থ চোধুরী বলেন, “বিচারব্যবস্থার উপরে আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” এ দিন মুক্তি পাওয়া তিনজনের আইনজীবী অখিল বিশ্বাস বলেন, “এঁরা দোষ করেনি। এঁদের মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছিল।”
বেসরকারি কল সেন্টারের কর্মী অভিষেক চাচান ২০০৮ সালের ২২ মে দেশবন্ধুপাড়ার বাড়ি থেকে বার হয়ে নিখোঁজ হন। দু’দিন পরে পুলিশ ফাঁসিদেওয়ায় একটি দেহের খোঁজ পায়। দেখা যায়, সেটি অভিষেকের দেহ। পুলিশ তদন্তে নেমে একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার সাহায্য নেয়। অভিষেকের মোবাইল উদ্ধার হয় সুরজিৎ দাসের হেফাজত থেকে। গ্রেফতার করা হয় রোমান, সইদুর, অমিত, আনন্দ এবং নীলকমলকে। পুলিশ সন্দেহ করে, বান্ধবীকে নিয়ে বিবাদের জেরে খুন হন অভিষেক।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.