কৃষ্ণনগরের পর বাদুড়িয়া।
কংগ্রেস কাউন্সিলাররা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বাদুড়িয়া পুরসভা এককভাবে দখল করল তৃণমূল। গত অক্টোবরে একই ভাবে নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুরসভাতেও ক্ষমতা দখল করে তারা। কংগ্রেসের ১৪ জন কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ২৪ আসনের ওই পুরসভায় একক সংখ্যগরিষ্ঠ দল হিসাবে তৃণমূলের দখলে আসে ২২টি আসন। ২টি আসন ছিল সমাজবাদী পার্টির। তাঁরাও যোগ দেন তৃণমূলে। একই ভাবে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া পুরসভায় গত ২৫ নভেম্বর কংগ্রেসের ৭ জন কাউন্সিলার তৃণমূলে চলে যাওয়ায় ১৭ আসনের ওই পুরসভায় ১০টি আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। বাকি ৭টি আসন সিপিএমের। |
তৃণমূলে যাওয়ার ব্যাখ্যা হিসাবে কৃষ্ণনগরের কংগ্রেসী কাউন্সিলারদের ব্যাখ্যা ছিল উন্নয়ন না হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপ। যা থেকে রেহাই পেতে প্রদেশ নেতৃত্বের কোনও সাহায্যই পাননি বলে তাঁদের অভিযোগ। তবে বাদুড়িয়ার দলবদলের কারণ শুধুই অনুন্নয়ন বলে দাবি ওই কাউন্সিলারদের। বাদুড়িয়ায় কংগ্রেসের শক্তিশালী সংগঠনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। জেলার একমাত্র বিধায়কও এখান থেকেই। তবু এমন ঘটনা ঘটল কেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি বড় ফ্যাক্টর হলেও পুর এলাকায় অনুন্নয়ন নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যে ভাবে বাড়ছিল তা সামাল দিতেই এটা ছাড়া উপায় ছিল না। তৃণমূলে যোগ দেওয়া পুরপ্রধান ও কংগ্রেস নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের গলাতেও একই সুর। তাঁর কথায়, “১১৩ বছরের এই পুরসভার পরিষেবা বর্তমানে যে অবস্থায় তাতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ চরমে। অথচ দলীয় সহযোগিতা না পাওয়ায় উন্নয়নমূলক কাজ আটকে যাচ্ছিল। সংগঠনের চেয়ে মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতেই তৃণমূলে এসেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়নের যজ্ঞ শুরু হয়েছে তাতে সামিল হতেই দল ছেড়েছি।”
অন্যদিকে বাদুড়িয়ায় কংগ্রেসের এই অবস্থায় দলের শক্তি বাড়াতে মাঠে নেমে পড়েছে সিপিএম এবং তৃণমূল। বাদুড়িয়ার ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বামেরা ৯টি, কংগ্রেস ৩টি এবং তৃণমূলের দখলে রয়েছে ২টি। পঞ্চায়েত সমিতির একটি ও জেলা পরিষদের ৩টি আসন পেয়েছে বামেরা। এই অবস্থায় সিপিএম শক্তির দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকায় তৃণমূলের লক্ষ্য ছিল একক ভাবে পুরসভার ক্ষমতা দখল। যে কাজের প্রধান কারিগর ছিলেন বাদুড়িয়া ব্লক সভাপতি তুষার সিংহ। যদিও নিজেকে এর কারিগর বলতে নারাজ তুষারবাবু। তাঁর কথায়, “মানুষ উন্নয়ন চাইছিলেন। আমি মানুষের সেই বার্তা নিয়ে ওই কংগ্রেস কাউন্সিলারদের কাছে গিয়ে তাঁদের বোঝাই। তাঁরা তা বুঝে মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েই তৃণমূলে এসেছেন। তাঁদের স্বাগত।”
বাদুড়িয়ার কংগ্রেসের নেতাদের একাংশের মতে, উন্নয়ন নিয়ে বরাবর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে এটা সত্যি। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, বাদুড়িয়ায় আটবার জয়ী প্রবীণ বিধায়ক কাজী আব্দুল গফ্ফর সংগঠন ধরে রাখার প্রধান কারিগর। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় যতদিন ছিল ততদিন এককাট্টা ছিল দল। অধিকাংশ পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ এবং পুরসভার দখল ছিল কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংগঠনের উপর তার প্রভাব পড়েছে।
কাজি আব্দুুল গফ্ফরের ছেলে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কাজি আব্দুর রহমান দিলু অবশ্য সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানতে চাননি। ৭ জন কংগ্রেস কাউন্সিলারের দলত্যাগের ফলে পুরসভার ক্ষমতা হারানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাদুড়িয়ার উন্নয়ন হোক এটা আমরাও চাই। এ নিয়ে কেউ কেউ অন্য কথা বলছেন। তবে কয়েকজন দল ছাড়ায় দলের লাভ হল না ক্ষতি, সময়ই বলবে।’’
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের পরিতোষ মণ্ডল বলেন, “কারা কী উদ্দেশ্যে দল পাল্টাবেন তা একেবারেই তাঁদের ব্যাপার। তবে যেমন দরকার ছিল বাদুড়িয়ায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। তবে দল বদল করে আখেরে উন্নয়ন হল কি না তা সময় হলে মানুষই বুঝতে পারবেন। তখন তাঁরাই এর উত্তর দেবেন।”
জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা সবকিছুর সার্বিক উন্নয়নের দিক থেকে বাদুড়িয়া পিছিয়ে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মযজ্ঞে সামিল হয়ে আমাদের প্রথম কাজ হবে এখানকার মানুষের উন্নয়ন। তাঁরা যাতে ভাল পরিষেবা পান তার ব্যবস্থা করা।”
যদিও কোন নেতা কোন দলে গেল তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই বাদুড়িয়ার মানুষের। তাঁরা চান উন্নয়ন। পুরসভার ক্ষমতা হাত বদলের পরে তা কতটা হয় এখন তারই অপেক্ষায় পুরবাসী। |