সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে একটি গতিশীল প্রশাসন চান তিনি। পুরসভার সাহায্য চাইতে আসা কাউকে যেন আর দিনের পর দিন ঘুরতে না হয়। বিশেষ নজর দিতে চান সে দিকেও। দেখতে চান, কোনও মতেই যেন সাহায্যের পরিবর্তে কোনও নাগরিকের বিপদের কারণ না হয়ে ওঠে পুর-প্রশাসন।
|
রথীন চক্রবর্তী |
প্রশাসনিক স্তরের উন্নতি নিয়ে যাঁর এত ভাবনা, তিনি হলেন চিকিৎসক রথীন চক্রবর্তী। হাওড়া পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী তৃণমূল-প্রার্থী এবং প্রয়াত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ভোলানাথ চক্রবর্তীর পুত্র। শুক্রবার দুপুরে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলীয় সভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরই নাম ঘোষণা করেছেন হাওড়া পুরসভার নতুন মেয়র হিসেবে।
চিকিৎসক হিসেবে ব্যস্ততা তো থাকবেই। তার পাশাপাশি কী ভাবে এই গুরুদায়িত্ব সামলাবেন তিনি?
রথীনবাবু বলেন, “এর আগে অনেক চিকিৎসক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকেও তাঁর পেশা সামলে গিয়েছেন। এ জন্য আমাকে অবশ্যই অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তা আমি করব।”
যদিও নির্বাচনের আগেই জানা গিয়েছিল, তৃণমূল জিতলে হাওড়া পুরসভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাবেন রথীনবাবু। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটুকুই। এ দিন তৃণমূলনেত্রীর মুখে মেয়র হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরে তিনি নিশ্চিত হন যে চিকিৎসার পাশাপাশি আরও একটি গুরুদায়িত্ব এখন থেকে পালন করতে হবে তাঁকে। রথীনবাবু আগেই জানিয়েছিলেন, পুরবোর্ডে এসে তাঁদের প্রধান কাজ হবে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়িত করা। মেয়র হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরে রথীনবাবু বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই হাওড়া শহর উপেক্ষিত। এই শহরের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করাই আমার সংকল্প। এ জন্য প্রথম থেকেই আমাদের কাজে নামতে হবে।”
পাড়ার ‘বিল্টুদা’ যে মেয়র হচ্ছেন, এ দিন দুপুরেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ে মধ্য হাওড়ার সুবল কোলে লেনে। কিছুক্ষণেই ‘চক্রবর্তী’ বাড়িতে ঢল নামে এলকাবাসীদের। পুস্পস্তবক নিয়ে ‘ডাক্তারবাবুকে’ শুভেচ্ছা জানাতে আসেন পড়শিরা। ছেলের নাম ময়ের হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় স্পষ্টতই খুশি রথীনবাবুর মা অরুন্ধতী চক্রবর্তী। তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই খবরটা প্রথম জানতে পারেন তাঁরা। তখন থেকেই গোটা পরিবার বসে ছিল বাড়ির ছেলের ফেরার অপেক্ষায়। কলকাতায় চেম্বারে রোগী দেখা সেরে তাঁর বাড়ি ফিরতে অবশ্য সন্ধ্যা হয়ে যায়।
নতুন মেয়রের কাছে কী
চান তাঁরা?
অরুন্ধতীদেবী বলেন, “এই শহরে একটিও ভাল পার্ক নেই। রাস্তাঘাটও ভাল নয়, আবর্জনায় ভরে থাকে। এগুলি যাতে আগে ঠিক হয়, তা দেখা দরকার।” রথীনবাবুর স্ত্রী স্মৃতিরূপা চক্রবর্তী বলেন,
“আমি চাই প্রথমেই নিকাশি, রাস্তাঘাট এবং পানীয় জলের ব্যবস্থায় উন্নতি হোক।”
ডাক্তারবাবুর ১০ বছরের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া তীর্ণারও কিছু দাবি আছে নতুন মেয়রের কাছে। তার বক্তব্য, “কী ভাবে মশা কমানো যায়, আগে তা দেখতে বলব বাবাকে। মশার জন্য আমরা এখানে শুতে-বসতে পারি না।”
প্রায় ৩০ বছর পরে বামেরা সরে নতুন দলের দায়িত্বে যাচ্ছে হাওড়া পুরসভা। শুধু মেয়রের পরিবার নয়, উন্নত পুর-পরিষেবার দাবি সকলেরই। এখন দেখার অপেক্ষা, ‘ডাক্তারবাবু’র নেতৃত্বে নতুন বোর্ড কতটা উন্নত পরিষেবা দিতে পারে। |