সম্পাদকীয় ২...
নির্বোধ
চিন রমেশ তেণ্ডুলকর ক্রিকেট হইতে অবসর লইয়াছেন। কিন্তু ঘরে ও বাহিরে তাঁহার বন্দনা অব্যাহত। তাঁহার ক্রিকেট-প্রতিভা যে দেশকালের গণ্ডি অতিক্রম করিয়াছে, ক্রিকেটরসিক সকল দেশের গণমাধ্যমে তাহা প্রতিফলিত হইতেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের গণমাধ্যমও সচিনের কীর্তির প্রশংসায় অকৃপণ। আর তাহাতেই পাক তালিবান গোষ্ঠীর গাত্রদাহ। পাকিস্তানি গণমাধ্যমকে হুঁশিয়ারি দিয়া তালিবান নেতা এক ভারতীয় ক্রীড়াবিদের প্রশংসা হইতে নিবৃত্ত হওয়ার ফতোয়া জারি করিয়াছে। সচিন বড় ক্রিকেটার, ইহা শিরোধার্য করিয়াও তালিবান নেতার বক্তব্যকিন্তু তিনি এক জন ভারতীয়, কোনও পাকিস্তানির যাঁহাকে প্রশংসা করা উচিত নয়। পাক গণমাধ্যমকে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মিসবা-উল-হকের পিছনে দাঁড়াইবার পরামর্শ দিয়াছে তালিবান। তালিবানের নিকট অন্য রকম কিছু আশা করাও হয়তো অর্থহীন। জেহাদি ইসলামের যাবতীয় সংকীর্ণতার সহিত উগ্র জাতীয়তাবাদের মিশেল ঘটিলে এমনটাই হওয়ার কথা।
তবে এই ঘটনায় কতকগুলি বিষয় স্পষ্ট হইয়াছে। প্রথমত, পাক গণমাধ্যমে ক্রিকেটার সচিনের বন্দনায় স্পষ্ট, ক্রিকেট এমনকী এই দুই রাষ্ট্রের জনমানসকে কতখানি আন্দোলিত করার ক্ষমতা রাখে। সচিন তেণ্ডুলকরকে পাকিস্তানি ক্রিকেটরসিকরা শত্রুদেশের খেলোয়াড় বলিয়া গণ্য করেন না, তাঁহার জাতীয়তা, সম্প্রদায় কিংবা ধর্মের পরিচিতি ধর্তব্যের মধ্যে রাখেন না, কেবল তাঁহার ক্রিকেটপ্রতিভাই বিচার্য হয়। তাই তালিবান সচিনের ভারতীয়ত্ব লইয়া অধিকতর বিব্রত ও বিচলিত হইলেও পাক গণমাধ্যম সেই পরিচিতি উপেক্ষা করিতে পারিয়াছে। দ্বিতীয়ত, ইহা দেখাইয়া দেয়, ক্রিকেট-কূটনীতি দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধ রচনা করিতে পারে। এই ধরনের সফর যে উষ্ণ দ্বিপাক্ষিকতার আবহ সৃষ্টি করে, তাহাকে কূটনীতির বাধা দূর করার কাজে লাগানো যায়। তৃতীয়ত, ভারত ও পাকিস্তান আজ দুই স্বতন্ত্র পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্র হইলেও তাহাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, নৃতত্ত্ব যে অভিন্ন ও অবিভাজ্য, দুই দেশেরই দিকপাল সংগীতজ্ঞ, সাহিত্যিক ও ক্রীড়াবিদদের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধায় তাহার পরিচয় মেলে। ইতিহাসের ঘটনাচক্রে বিভাজিত উপমহাদেশ যে একই তন্ত্রীতে বাঁধা, ইহা তো তাহারই সংকেত।
তালিবান তাই পাক জনমানসের নিহিত উপকরণগুলির হদিশ পায় না। এতটাই গোঁড়া, ধর্মান্ধ এই উগ্রপন্থীরা যে, সচিনের মতো অবিতর্কিত, অরাজনৈতিক ক্রিকেট-ব্যক্তিত্বকেও বিতর্কে টানিয়া নামাইতে চাহে। ভারতে শিবসৈনিকরাও একই ধরনের গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতা হইতে সচিনের উপর খড়্গহস্ত হইয়াছিল, যখন সচিন তাহাদের কথা মতো নিজেকে প্রথমত এক জন মরাঠি না বলিয়া একজন ভারতীয় হিসাবে গর্বিত হওয়ার কথা বলেন। লক্ষণীয়, সচিন কিন্তু তাঁহার ভারতীয়তাকেও কখনও কোনও জঙ্গি জাতীয়তাবাদে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেন নাই। তাই তাঁহার বিরুদ্ধাচরণ করিতে গিয়া তালিবানের তরফে উগ্র পাক জাত্যভিমান উস্কাইবার অপপ্রয়াস দ্বিগুণ নিন্দনীয়। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মতো সংগঠনগুলি সমগ্র দেশ ও দেশবাসীর হইয়া কথা বলার ঔদ্ধত্য দেখায়। অথচ সেই প্রতিনিধিত্বের অধিকার তাহাদের কেহ দেয় নাই। তাহারা নিজেদের সংকীর্ণ এজেন্ডা জনসাধারণের উপর চাপাইতে চায়। আশা করা যায়, পাকিস্তানের জনসাধারণ এমন সংকীর্ণ ভাবনা প্রত্যাখ্যান করিবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.