রাজ্যে গত সাত মাস ধরে নেই পরিবেশ কমিটি। ফলে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ারও কেউ নেই। যার অভাবে রাজ্য জুড়ে আটকে রয়েছে ৭০টি নির্মাণ প্রকল্প। সঙ্গে মোটা অঙ্কের লগ্নি ও কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও অনিশ্চিত বলে অভিযোগ নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই-এর। নিয়ম অনুযায়ী ২০ হাজার বর্গ মিটার বা ২ লক্ষ ১৫ হাজার ২৭৮ বর্গ ফুটের বেশি জায়গা তৈরির জন্য চাই পরিবেশ কমিটির ছাড়পত্র। এই কমিটি তৈরির জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা রয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী এই কমিটির সদস্যদের নাম সুপারিশ করার দায় রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রের কাছে সেই নামের তালিকা অনুমোদনের জন্য পাঠায় রাজ্য। তারপরে তৈরি হয় ‘স্টেট লেভেল এক্সপার্ট অ্যাপ্রাইজাল কমিটি’ ( এস ই এ সি)। প্রতি তিন বছরে এই কমিটি নতুন করে গড়ার কথা।
ক্রেডাই-এর অভিযোগ, গত এপ্রিলে শেষ বৈঠক করেছিল কমিটি। এর পর থেকে তার কোনও অস্তিত্বই নেই বলে জানান ক্রেডাই-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রেসিডেন্ট হর্ষবর্ধন পাটোডিয়া। তিনি বলেন, “সাধারণত নির্মাণ প্রকল্পে পরিবেশ কমিটির অনুমোদন পেতে সময় লেগে যায়। কারণ দু’ধাপে এই অনুমোদন পাওয়া যায়। প্রথমে কমিটি একটি অস্থায়ী ছাড়পত্র দেয়। সেই অনুমতি নিয়ে প্রকল্পের নকশা পুরসভার কাছে জমা দিয়ে হয়। নকশা অনুমোদনের পরে ফের কমিটির কাছে স্থায়ী ছাড়পত্র নিতে যেতে হয়।” ফলে সাধারণ ভাবেই পরিবেশ দফতর ও পুরসভায় কয়েক দফা দৌড়ঝাঁপ না-করলে কাজ হয় না বলে অভিযোগ নির্মাণ সংস্থাগুলির। তাদের মতে কারণ সেই প্রশাসনিক গড়িমসি।
এ বার এই লালফিতের ফাঁসের সঙ্গে জুড়েছে পরিকাঠামোর অভাব। নিয়ম রয়েছে। অথচ নিয়ম কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই নেই। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছে পরিবেশ দফতরও। তবে পুরো দায় নিতে নারাজ দফতর। এক কর্তার দাবি, সুপারিশ করা নামের তালিকায় কেন্দ্রীয় শিলমোহর পেতেও অনেকটা সময় চলে যায়। তাঁর আশ্বাস, শীঘ্রই এই সমস্যা মিটে যাবে।
আশ্বাসে অবশ্য স্বস্তি পাচ্ছে না নির্মাণ শিল্পমহল। কারণ ছাড়পত্রের জটে আটকে রয়েছে প্রায় দেড় কোটি বর্গ ফুট জায়গার নির্মাণ কাজ। সম্প্রতি এই সমস্যা নিয়ে কলকাতা পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। তাদের দাবি,গোটা এলাকার মধ্যে ২০ হাজার বর্গ মিটার পর্যন্ত প্রকল্প তৈরির অনুমতি দিক কলকাতা পুরসভাই। কারণ তার জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র প্রয়োজন নেই। পরবর্তী দফার কাজ শুরুর আগে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র নিয়ম মতো নিতেই হবে। নির্মাণ শিল্পমহলের দাবি, এই ছাড়টুকু পেলে সময় নষ্ট হবে না। বাড়বে না প্রকল্প তৈরির খরচ।
পুর দফতরের দাবি, নতুন নিয়ম দ্রুত তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে ক্রেডাই-এর সুপারিশ ভাবনা-চিন্তার পর্যায়ে রয়েছে। পরিবেশ দফতরের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। |