কৃমির কোপে নষ্ট সব্জি, জৈব সার দিতে পরামর্শ
পুজোর আগের টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েক হাজার বিঘে সব্জি খেত। ক্ষতি সামলে সবে চাষিরা নতুন করে চাষ শুরু করেছিলেন, তার মধ্যেই শিকড়ফোলা রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে পূর্বস্থলীতে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পারুলিয়া এলাকার বহু চাষিই রোগের নিদান চাইতে আসছেন কৃষি দফতরে।
কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের রোগকে বলে নিমাটোড বা শিকড়ফোলা। এই রোগে মূলত চারাগাছের শিকড়ের ভিতর ঢুকে গাছের রস শুষে নেয় কৃমি। ফলে জমিতেই শুকিয়ে মরে যায় গাছ।
পারুলিয়ার চাষিদের দাবি, এখনও পর্যন্ত রোগ বড় আকার না নিলেও, বহু জমিতেই গাছ ঝিমিয়ে পড়ছে। অনেকক্ষেত্রে মরেও যাচ্ছে। এলাকার এক সব্জি চাষি অলোকেশ বিশ্বাসের দাবি, “এরকম রোগের কথা আগে শুনিনি। আক্রান্ত একটি গাছ নিয়ে কৃষি দফতরে গিয়ে জানতে পারি রোগটির নাম শিকড়ফোলা।” অন্য এক চাষি ইসমাইল মণ্ডলও বলেন, “আগে এই ধরনের রোগ এলাকায় দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।” পটল, কুমড়ো, লাউ, বেগুন, শশা, পুঁইশাকের মতো সব্জিতে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে বলেও চাষিদের দাবি।
ফুলেছে শিকড়। —নিজস্ব চিত্র।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, মাটির নীচে এক ধরনের কৃমি দেখা যায়। তা চারাগাছের ভিতর ঢুকে গাছের রস শুষে নেওয়ায় গাছের শিকড় ফুলে যায়। মাটির তলা থেকে গাছের জল ও খাদ্য সংগ্রহের কাজও ব্যাহত হয়। ফলে গাছ শুকিয়ে যায়। জমিতে পড়ে থেকে মরেও যায় বহু গাছ। শিকড়ফোলা রোগ হওয়ার পিছনে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণও খুঁজে বের করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। যেমন, প্রথমত, কৃষিজমিতে অম্লত্বের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, একই গোত্রের ফসল বারবার চাষ করা। তৃতীয়ত, রাসায়নিক সারের বেশি মাত্রায় প্রয়োগ। চতুর্থত, মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্ব না দেওয়া। পঞ্চমত, সারা বছর জমি ফাঁকা না রেখে চাষ করে যাওয়া। শিকড়ফোলা রোগ থেকে বাঁচতে বেশ কিছু নিদানও বাতলেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। প্রথমেই রয়েছে ট্র্যাপ ক্রপ বা ফাঁদ ফসলের চাষ। ফাঁদ ফসলের মধ্যে কৃমিকে ঢুকিয়ে জমির আসল ফসলকে বাঁচানো সম্ভব, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া জৈব সার প্রয়োগ করলে বা পাল্টে পাল্টে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করলে শিকড়ফোলা রোগ আটকানো সম্ভব। এ ছাড়া জমিতে কৃমির সংক্রমণ বেশি হলে দানা ওষুধ প্রয়োগ করলে উপকৃত হবেন চাষিরা। এক্ষেত্রে কার্বোফিউরাল বিঘা প্রতি তিন থেকে চার কেজি অথবা জৈব কীটনাশক হিসেবে প্যাসিলোমাইসিস বিঘা প্রতি দু’কেজি প্রয়োগ করলে আটকানো যাবে শিকড়ফোলা রোগ।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে শিকড়ফোলা রোগ বেশি মাত্রায় ছড়ালেও, মন্তেশ্বর এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বেশ কিছু জায়গাতেও এই রোগ দেখা গিয়েছে। পাঁচ বছর আগে মন্তেশ্বরে এই রোগের প্রকোপেই মার খায় সরষে চাষ। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “বর্তমানে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পারুলিয়া সংলগ্ন এলাকায় শিকড়ফোলা রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারণত কুমড়ো জাতীয় ফসলে এই ধরনের রোগ বেশি ছড়ায়।” পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কৃষি আধিকারিক জনার্দন ঘোষ বলেন, “শিকড়ফোলা রোগ আক্রান্ত জমিতে উঁচু করে জল দেওয়া বিপজ্জনক। কারণ তা হলে এক জমি থেকে অন্য জমিতে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। জলের প্রয়োজন হলে ছিটিয়ে জল দিতে হবে। জমিতে নাইট্রোজন জাতীয় সার প্রয়োগও বন্ধ করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.