দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা পাঁচ জন প্রেসিডেন্সি জেলের বাসিন্দা। সকলেই বিচারাধীন বন্দি। আদালতে হাজিরা দিতে সোমবার জেলা পুলিশের প্রহরায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হুগলিতে। ফেরার পরে বন্দিদের প্রিজন ভ্যান থেকে নামাতে গিয়ে জেলরক্ষীরা হতবাক। পাঁচ বন্দির কেউই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। দু’জন ভ্যানেই বেহুঁশ। কাছে গিয়ে রক্ষীরা টের পান, পাঁচ জনেই মদ খেয়ে বেসামাল!
জেল সুপার এসে পরিস্থিতি দেখে ফোন করেন আইজি (কারা)-কে। আইজি নির্দেশ দেন, ডাক্তারি পরীক্ষা না-করে কাউকেই যেন জেলে ঢোকানো না-হয়। হুগলিতে ফেরত পাঠানো হয় পাঁচ বন্দিকে। ডাক্তারি পরীক্ষার পরে তাঁদের কিছুটা সুস্থ করে মঙ্গলবার ফেরত পাঠানো হয়েছে জেলে। এখন তাঁরা অনেকটাই সুস্থ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রের খবর, সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ পাঁচ বন্দিকে হুগলি জেলা পুলিশের পাহারায় চন্দননগর ও হগলি সদর আদালতে পাঠানো হয়। ওই পাঁচ জন হলেন জামিল আহমেদ, কার্তিক দাস, আবুল হোসেন, সঞ্জয় রাজবংশী ও ভরত মুদালিয়া। সকলেই খুন, অস্ত্র আইন-সহ বিভিন্ন অভিযোগে জেলে আছেন বেশ কয়েক বছর। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ফিরিয়ে এনে জেলে ঢোকাতে গিয়ে রক্ষীরা দেখেন, পাঁচ বন্দিই নেশায় বুঁদ। এক জেলকর্মীর কথায়, “কাছে গিয়ে দেখি, নেশার ঝোঁকে বমিও করেছে ওরা।
মাথায় বালতি বালতি জল ঢেলেও লাভ হয়নি। ভ্যানের বাইরে দাঁড় করানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।” তার পরেই রক্ষীরা বিষয়টি জানান জেল সুপার নবীন সাহাকে। তিনি জানান আইজি (কারা) রণবীর কুমারকে। কারাকর্তাদের বক্তব্য, মত্ত বন্দিদের জেলে ঢোকালে পুরো দায় জেল-কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে পড়ত। তাই আইজি বন্দিদের ফেরত পাঠাতে বলেন। সুস্থ হওয়ার পরে এ দিন পাঁচ জনকে জেলে ঢোকানো হয়।
সুস্থ হয়ে পাঁচ বন্দি না-হয় জেলে ফিরল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, জেল থেকে আদালত এবং আদালত থেকে জেল পুরো রাস্তায় তাঁরা তো ছিলেন পুলিশের পাহারায়। পাহারা এড়িয়ে তাঁরা মদ জোগাড় করলেন কী ভাবে?
এই প্রশ্নে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলের অন্দরেও। জেলের এক কর্তা বলেন, “সাধারণত আদালতে বন্দিদের নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকে পুলিশের উপরেই। এএসআই শরদকুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে চার পুলিশের একটি দল সোমবার ওই বন্দিদের আদালতে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওই বন্দিরা কোথায় নেশা করার সুযোগ পেলেন, তা নিয়ে জেল-কর্তৃপক্ষ অন্ধকারে।” তবে আদালতে যাতায়াতের পথে বন্দিদের নেশা করে ফেরার ঘটনা নতুন নয় বলেই জানান জেলের ওই কর্তা। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা হামেশাই ঘটে। এটা বাড়াবাড়ি হওয়ায় হইচই হচ্ছে।”
আইজি (কারা) জানান, প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার পুরো বিষয়টি হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কারা দফতরের তরফে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার হুগলির পুলিশ সুপারকে সব জানিয়ে তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। পুলিশ সুপারই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।”
হুগলির পুলিশ সুপার সুনীলবাবু ওই বন্দিদের মদ্যপান নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। আরআই (রিজার্ভ ইনস্পেক্টর) বিভাগের কে বন্দিদের নিয়ে আসার দায়িত্বে ছিলেন বা কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল, তদন্তের পরেই তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব।”
|
স্বামীজির আদর্শ নিয়ে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা বর্তমান সময়ে আরও বাড়ছে। প্রায় ১২০ বছর আগে শিকাগো ধর্ম মহাসভায় বিবেকানন্দের বলা ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ বর্তমান ভারতের জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। মানুষের চরিত্র গঠন এবং দেশের উন্নয়নে বিবেকানন্দের চিন্তা-ভাবনাকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো প্রয়োজন। ‘ইনস্টিটিউট অব হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ’ এবং ‘শ্রীঅরবিন্দ সমিতি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইতিহাসে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকার পুনর্মূল্যায়ন’ বিষয়ক আলোচনাসভার প্রথম দিনে বক্তাদের কথায় উঠে এল এমনই নানা মত। মঙ্গলবার অরবিন্দ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনাসভার উদ্বোধনে উপস্থিত বক্তাদের মতে, “স্বামীজির জীবনদর্শন বর্তমান ভারতকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে আরও বেশি সাহায্য করবে। বিশেষ করে সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষ দেশের কথা বলা হয়েছে, বিবেকানন্দ অনেক আগেই সেই সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে গিয়েছেন।” তবে শুধু দেশ নয়, সাধারণ মানুষের চরিত্র গঠনেও বিবেকানন্দের দেখানো পথ আজও প্রাসঙ্গিক। এ দিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘ইনস্টিটিউট অব হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ’-এর অধিকর্তা দিলীপকুমার ঘোষ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সব্যসাচী ভট্টাচার্য, বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-উপাচার্য ভারতী রায়। |