বৃষ্টি দেরিতে, সুধা পদ্ধতির ধান চাষে তবু ফলন কমেনি
শিস-ভরা ধান গাছের গায়ে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আহ্লাদি ব্যাপারি। চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। এক গাল হেসে বলেন, “বিশ্বাস করুন, এমনটা যে হবে আমরা ভাবিনি। বরং এত টাকার সার, জলের পিছনে খরচ করতে একটু যেন ভয়ই করছিল। এখন দেখছি ভুল করিনি।”
অথচ কয়েক মাস আগেও আহ্লাদি আর তাঁর স্বামী মাধব ব্যাপারির কপালে ভাঁজ পড়েছিল দুশ্চিন্তার। দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় খেতের পাট কাটতে পারছিলেন না। এ দিকে মাঠে আমন ধান বোনারও সময় চলে গিয়েছে। তাহলে কি এ বছর আর এই জমিতে ধান বোনা যাবে না? চিন্তিত কুলগাছির ব্যাপারি পরিবার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়, কৃষি বিজ্ঞানীদের কথা মেনে ‘সুধা’ পদ্ধতিতেই ধান চাষ করবেন।
বীজতলা তৈরির ৫৬ দিনের মাথায় ধানের চারা রোপণ করলেন মাধববাবু। আর তাতেই কেল্লামাত। মাধববাবু এবার ৫০ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তার মধ্যে ১৪ কাঠা জমিতে প্রথাগত প্রদ্ধতিতে চাষ করেছেন। আর ৩৬ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন ‘সুধা’ পদ্ধতিতে। মাধব বাবুর কথায়, “সুধা পদ্ধতিতে চাষ করে পুরনো পদ্ধতির থেকে অনেক বেশি ফলন হয়েছে।”
রানাঘাটের ভাদুরিতে সুধা পদ্ধতিতে চাষ করা ধান। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
কী এই সুধা পদ্ধতি? বীজতলা তৈরি এবং চারা রোপণ, এই দুয়ের বিশেষ কৌশল নিয়ে তৈরি এই নতুন পদ্ধতি। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়াছেন, ‘সুধা’ প্রদ্ধতিতে চাষ করলে বীজতলা আড়াই মাস পর্যন্ত রাখা যায়। তার উপরে একই জায়গার মধ্যে অনেক কম পরিমাণ বীজে বীজতলা তৈরি করা যায়। এক বিঘা জমির জন্য প্রথাগত প্রদ্ধতিতে যেখানে প্রায় সাত কেজি বীজ লাগে, ‘সুধা’ প্রদ্ধতিতে সেখানে মাত্র এক থেকে দেড় কেজির মত বীজ লাগে।
এই চাষে যেহেতু অনেকটা সময় চারা বীজতলায় থাকে, তাই প্রচলিত প্রথার থেকে সার ও জলের পরিমাণ কম লাগে। প্রথাগত পদ্ধতিতে যেখানে এক গুছিতে ৫ থেকে ১৮ টি পর্যন্ত চারা পোঁতা হয়, ‘সুধা’ পদ্ধতিতে সেখানে একটি গুছিতে একটি মাত্র চারা পোঁতা হয়। তাতে চারা পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়ায় বেশি বৃদ্ধি হয়। আগাছা পরিষ্কারের খরচ লাগে না।
কী উপযোগিতা এই পদ্ধতির?
এর প্রধান উদ্দেশ্য কিন্তু ফসলের পরিমাণ বাড়ানো নয়, বরং ফলন নিশ্চিত করা। গত কয়েক বছর ধরে ঠিক সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছরই বর্ষার সময় বদলে যাচ্ছে। ফলে বীজতলা তৈরির পর জমিতে রোপণের জন্য ৩০ দিনের বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চারার বয়স বাড়লেই ফলন কমছে। ‘সিস্টেম অফ অ্যাসিওরড রাইস প্রডাকশান’ (সার্প) তথা ‘সুনিশ্চিত ধানচাষ’(সুধা) পদ্ধতি এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে, যে হেতু বীজতলায় চারা তাজা থাকে অনেক ৭৫ দিন অবধি ।
চলতি বছর নদিয়া জেলার ৫টি ব্লকের ১৯ জন কৃষক ‘সুধা’ পদ্ধতিতে চাষ করেছেন। কুলগাছির সুকুমার মণ্ডল ৩৫ কাঠা জমিতে ওই পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘা প্রতি ৮ কুইন্টালের বেশি ধান পেয়েছেন। রানাঘাট-১ ব্লকের ভাদুরি গ্রামের মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস ২০ কাঠা জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ৫০ দিনের মাথায় রোপণ করেছিলাম। প্রায় ৯ কুইন্টাল ধান পাব বলে আশা করছি।”
‘সুধা’ প্রদ্ধতি নিয়ে গবেষণা প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন কৃষি দফতরের জল ও সেচ গবেষণা কেন্দ্রের যুগ্ম অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্রের দাবি, ‘সুধা’ পদ্ধতিতে চাষ যে লাভজনক ও ঝুঁকিহীন, তার স্বীকৃতি আগেই দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এগ্রিকালচার টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’। এ বার দিলেন চাষিরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.