সম্পাদক সমীপেষু...
মাতৃভাষায় শিশুর শিক্ষাদান
শুভ্রা দাসের লেখায় (‘সুযোগ পাওয়ার সুযোগ’, ১২-১১) সাঁওতাল শিশুর বিদ্যালয়-বিমুখতার যে মর্মস্পর্শী ছবি ফুটে উঠেছে, তার সূত্র ধরে দু’একটি কথা বলতে চাই।
লেখকের বর্ণনায় বাবলু মুর্মুর বয়স মেরেকেটে দশ। সে স্কুলে যেত, পড়াশোনার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু সে স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কারণ, ‘দিদিমণি খুব মারতেন, তিনি কী বলতেন তা বাবলু বুঝত না’। আমার মনে হয়, বাবলুর স্কুল ছাড়ার জন্য দিদিমণির মারধর যত না দায়ী, তার থেকে অনেক বেশি দায়ী দিদিমণির কথা বুঝতে না-পারা। কারণ, দিদিমণি তাকে যে ভাষায় (সম্ভবত বাংলায়) পড়া বোঝাতেন তা তার মাতৃভাষা নয়। তার মাতৃভাষা সাঁওতালি। ছোটবেলা থেকে এই ভাষা শিখে সে স্কুলে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ‘সাহিত্যের পথে’ গ্রন্থের ‘সভাপতির অভিভাষণ’ প্রবন্ধে বলেছিলেন, “আমরা যেমন মাতৃক্রোড়ে জন্মেছি, তেমনি মাতৃভাষার ক্রোড়ে আমাদের জন্ম, এই উভয় জননীই আমাদের পক্ষে সজীব ও অপরিহার্য।” এক জন শিশুকে তার মাতৃভাষায় শিক্ষা দিতে না-পারলে তার কাছে পড়াশোনাটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্লাসের আলাপ-আলোচনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারে না, সবটাই তার কাছে দুরূহ ও দুর্বোধ্য মনে হয়। এই ভাষার প্রাচীরের কারণেই সাঁওতালদের মধ্যে শিক্ষার হার মাত্র গড় ৪২.২ শতাংশ। অথচ সাঁওতালি ভাষা ভারতের প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি। এই ভাষায় প্রায় ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ কথা বলে। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের অন্যান্য জনজাতি তাদের নিজস্ব ভাষা ভুলে গেছে। মুন্ডারা তাদের মুন্ডারি ভাষা ভুলে গিয়ে কুড়মালি বা সাদ্রিতে কথা বলে। ওরাওঁ তাদের কুরুখ ভাষা ভুলে গিয়ে সাদ্রিতে কথা বলে। সাঁওতালরা তাদের সাঁওতালি ভাষা ভোলেনি। এই কারণে নৃতত্ত্ববিদ কে এস সিংহ বলেছিলেন, “সাঁওতালরা পুর্ব ভারতে বৃহত্তম, সর্বাপেক্ষা সংহত এবং সম্ভবত সর্বাপেক্ষা বেশি স্বাতন্ত্র্য রক্ষাকারী জনজাতি।” তা ছাড়া সাঁওতালি ভাষা ভারতের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ষাটের দশকে। তবুও স্বাধীনতার ৬৮ বছর পরেও সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের সাঁওতালি ভাষায় লিখিত পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এ অক্ষমতা জাতীয় লজ্জা।
বিগত কয়েক দশক ধরে জঙ্গল মহলের জনজাতির মানুষজনের অন্যান্য দাবিদাওয়ার মধ্যে একটি ছিল তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে বিদ্যালয় স্তরে পড়াশোনা শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা। অনেকে একাধিক বার সাঁওতালিতে শিশু পাঠ্যপুস্তক রচনার দাবি তুলেছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিগত বাম সরকার বিষয়টি অত্যন্ত অবহেলার চোখে দেখেছে। বর্তমানে দুই-তিনটি কলেজে স্নাতক স্তরে সাঁওতালি ভাষা পড়ানো হচ্ছে। তবে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যত দিন জনজাতির মাতৃভাষার স্বাতন্ত্র্য এবং সম্মান স্বীকৃত না-হচ্ছে, তত দিন বাবলু মুর্মুরা সুযোগ পেয়েও সুযোগ হারাবে।


নদিয়া জেলার বেথুয়াডহরি জঙ্গল হরিণের জন্য বিখ্যাত। এই ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচ্যুয়ারির তত্ত্বাবধায়ক রাজ্য সরকার। কিছু বছর পূর্বে এখানে শতাধিক হরিণ ছিল, তা এখন তলানিতে। ১০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে জঙ্গলে প্রবেশ করতে হয়। অথচ এখন একটি হরিণও দেখা যায় না। আশ্চর্য লাগে জঙ্গলের হোর্ডিং দেখে, তাতে লেখা: ‘বন্যপ্রাণীকে বিরক্ত করবেন না’। কোথায় বন্যপ্রাণী? শুধুই জঙ্গল।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ সুখ্যাত ‘কুলিক পাখিরালয়’-এর জন্য। এটিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করে। এর পোশাকি নাম রায়গঞ্জ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচ্যুয়ারি, কুলিক ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জ। একটি বিশেষ প্রজাতির বক ছাড়া আর কোনও পাখি নেই। এখানে প্রবেশ মূল্য চল্লিশ টাকা। জঙ্গলের ভিতরে শুধুই গাছ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
এই দুই অভয়ারণ্য দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। শুধুই অর্থের আত্মসাত্‌। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন ও বন দফতরকে অনুরোধ জানাই, অভয়ারণ্যগুলির যত্ন নিন। না হলে অদূর ভবিষ্যতে এগুলি অবলুপ্তির পথ বেছে নেবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.