দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি না করলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনা সরানোর হুমকি দিল আমেরিকা। আজ কাবুলে গিয়ে এই হুমকি দিয়েছেন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস। পাল্টা চাপ দিতে গুয়ান্তানামো বে-র বন্দি শিবির থেকে আফগানদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তুলেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। সব মিলিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ বাড়ছে আমেরিকা ও কারজাই সরকারের মধ্যে।
২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু তার পরে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট সব দেশই। কারজাই সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় তালিবান জঙ্গিরা। আফগান সেনাবাহিনী ও পুলিশের তালিবানদের সামলানোর ক্ষমতা আছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। এত দিন মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে থাকার পরে কাবুল ফের তালিবানের দখলে গেলে তা আমেরিকার পক্ষেও পরাজয়ের সামিল।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা জানায়, দ্বিপাক্ষিক একটি সামরিক চুক্তি করলে আফগানিস্তানে কিছু সেনা রাখতে রাজি তারা। রবিবার এই চুক্তি করার সুপারিশ করেছে কারজাইয়ের ডাকা আফগান প্রবীণদের সভা ‘লয়া জিরগা’ও। নীতিগত ভাবে এই চুক্তিতে কারজাইয়ের আপত্তি না থাকলেও ওই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পরবর্তী আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তিনি।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আজ রাইস সরাসরি কারজাইকে জানিয়ে দেন ওই চুক্তি ছাড়া মার্কিন বা ন্যাটো সেনা আফগানিস্তানে রাখা সম্ভব নয়। সে জন্য পরবর্তী আফগান প্রেসিডেন্ট ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ‘লয়া জিরগা’-র সুপারিশের কথাও বলেন তিনি।
কারজাইয়ের সহযোগী আইমাল ফয়জল জানান, এই প্রসঙ্গের পরে আফগান বন্দিদের গুয়ান্তানামো বে থেকে ছাড়ার প্রসঙ্গ তোলেন কারজাই। ২০০১ সালের সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের জন্য কিউবার গুয়ান্তামো বে-তে বন্দি শিবির খোলে আমেরিকা। তাতে রয়েছেন আফগানরাও।
গুয়ান্তামোর আফগান বন্দিদের ছাড়ার সুপারিশ করেছে জিরগা। এমনকী, মার্কিন সামরিক আদালতে আফগান পর্যবেক্ষকদের হাজির থাকার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা।
গুয়ান্তামো-র প্রসঙ্গ উঠতেই আপত্তি জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস বি কানিংহাম। তিনি বলেন, “ওই বন্দিদের বিচার মার্কিন আইনে হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।” ফয়জল জানিয়েছেন, কানিংহামের মন্তব্যের পরে রেগে যান কারজাই। তিনি জানিয়ে দেন, জিরগার সব সুপারিশকেই গুরুত্ব দিতে হবে। বাছাই করা যাবে না।
কূটনীতিকদের মতে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দিন যত এগিয়ে আসবে ততই বাড়বে এই স্নায়ুযুদ্ধ। কারণ, এই সুযোগে আমেরিকার কাছ থেকে যত সম্ভব সুযোগসুবিধা আদায় করে নিতে চান কারজাই। আমেরিকাও তাঁকে চাপ দিয়ে সে দেশে মার্কিন সেনা রাখার একটি আইনি রক্ষাকবচ পেতে চায়।
অন্য প্রতিবেশী দেশের মতো আফগানিস্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতও। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, নয়াদিল্লি চায় কারজাই ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হোক। কারণ, আপাতত মার্কিন সেনা না থাকলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে ধারণা সাউথ ব্লকের। ফের পাকিস্তানি প্রভাব বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের কাছে অস্ত্র চেয়েছিলেন কারজাই। সম্প্রতি ভারতের কাছে অস্ত্র কিনতে চেয়েছিলেন কারজাই। কিন্তু, কৌশলগত কারণে এখনই অস্ত্র বেচতে রাজি নয় নয়াদিল্লি। সেনার প্রশিক্ষণে সাহায্য করছে তারা। |