|
|
|
|
টানা দু’মাস পঞ্চায়েতে ঢুকতে বাধা বিরোধীদের
নিজস্ব সংবাদদাদতা • বর্ধমান |
তৃণমূলের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, গলসি ২ ব্লকের সাঁকো পঞ্চায়েতে তাঁদের ঢুকতে না দেওয়ায় উন্নয়নের কাজেও যোগ দিতে পারছেন না তাঁরা। বিষয়টি জানিয়ে গলসি ২ বিডিও-র কাছে বিহিত চাওয়া হলেও লাভ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
সাঁকো পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে ৭টি তৃণমূলের। বাকি আসনের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের দু’টি, কংগ্রেস ও সিপিএমের একটি করে আসন রয়েছে। সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য প্রীতি হাঁসদা (হেমব্রম), ফরওয়ার্ড ব্লকের দুই সদস্য আব্দুল সালাম মণ্ডল ও আদুরি মল্লিক গত ৫ ও ১২ অক্টোবর বিডিও শুভপদ শাণ্ডিল্যর কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন, যে তাঁরা পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকতে পারছেন না। এমনকী এলাকায় উন্নয়নের কাজে যোগ দিতে গেলেও একদল তৃণমূল কর্মী ও সমর্থক তাড়া করছে, অশ্লীল গালিগালাজও করা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে ভোটে জিতলেও এলাকায় কোনও কাজই তাঁদের করতে দেওয়া হবে না। তৃণমূলের এই মনোভাবের জেরে এলাকার বাসিন্দারা ন্যূনতম পরিষেবাও পাচ্ছেন না বলে তাঁদের দাবি।
ওই পঞ্চায়েতের ৪ নম্বর আসনে নির্বাচিত কংগ্রেসের সদস্য দিলীপ বাড়ৈ ছিলেন গতবারের বোর্ডের প্রধান। এবারও জিতেছেন তিনি। গত ৫ অক্টোবর ও ১২ নভেম্বর বিডিওকে লেখা চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রধান নির্বাচন বা উপসমিতি নির্বাচনের দিন তাঁকে পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। এমনকী প্রথম মাসিক বৈঠকের দিনও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য বিডিও-র হস্তক্ষেপে তিনি পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকতে পারলেও নিজের গ্রাম সংসদ আসনে তৃণমূলের তরফে তাঁকে কোনও উন্নয়ন বৈঠকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ, ১০০ দিনের প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো সরকারি নানা প্রকল্পও গ্রামে বেআইনি ভাবে তৃণমূলের নেতারা চালাচ্ছেন।
তবে সাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুবোধ কারকের দাবি, “দিলীপবাবু-সহ চারজনেই ভয়ে পঞ্চায়েতের বৈঠকে যোগ দিতে পারছেন না। তাই ওঁরা চিঠিপত্র দিয়েছেন নানা জায়গায়। তবে এখন তো ওঁরা সাধারণ মাসিক বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। আর দিলীপবাবুর এলাকায় সরকারি প্রকল্পের কাজ চালুই হয়নি। তাই ওঁকে উন্নয়নের কাজও করতে হয়নি।”
গলসি ২ এর বিডিও শুভপদ শাণ্ডিল্য বলেন, “যতদূর মনে পড়ছে মাস দুই আগে সাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী চার সদস্য আমার কাছে অভিযোগ করেন যে ওঁদের গ্রাম পঞ্চায়েতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি সঙ্গেসঙ্গে ব্যবস্থা নিই। নিজে গিয়ে ওঁদের পঞ্চায়েতে বসিয়ে এসেছিলাম। পুলিশকেও বলেছিলাম, ওঁরা যাতে পঞ্চায়েতের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন, সেদিকে নজর দিতে। তারপরে আর কোনও অভিযোগ পাইনি।” বিডিও আরও বলেন, “দিলীপবাবুকে এলাকার উন্নয়নের কাজে যুক্ত হতে না দিয়ে দলীয় প্রতিনিধি মারফত প্রধান কাজ চালাচ্ছেন বলে যে অভিযোগ মিলেছে, তার লিখিত উত্তর দিতে বলা হয়েছে প্রধানকে। তবে তিনি এখনও কোনও উত্তর দেননি। প্রধানকে মৌখিক ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে গ্রাম সংসদের সমস্ত উন্নয়নের কাজে দিলীপবাবুকেও যেন সামিল করানো হয়।” তবে ওই চার বিরোধী সদস্যের দাবি, বিডিও-র হস্তক্ষেপের পরে তাঁরা মাসে একবার পঞ্চায়েতে যেতে পারছেন ঠিকই। কিন্তু অন্য সময় এলাকার মানুষের সমস্যা, ছোটখাট চাহিদার কথা জানাতে গেলে এখনও বাধা পাচ্ছেন।
এ দিকে বিরোধীদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে দলের মধ্যে। গলসির যুব তৃণমূল নেতা শেখ ইমদাদুল হক ওরফে লাল্টু যেখানে কার্যত মেনেই নিয়েছেন বিরোধীদের অভিযোগ, সেখানে ব্লক তৃণমূল সভাপতির দাবি, অভিযোগ মিথ্যা।
যুব তৃণমূল নেতা শেখ ইমদাদুল হক বলেন, “ওই চার বিরোধী সদস্যকে নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। এই কায়দাটা সিপিএমের। আমরা পরিবর্তন চেয়েছিলাম। কিন্তু কী পরিবর্তন পেলাম, ভাবতেই অবাক লাগে।” গলসি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাসুদেব চৌধুরী অবশ্য বলেন, “নিজেরা পঞ্চায়েতে না এসে প্রশাসনের কাছে ঢুকতে না দেওয়ার মিথ্যে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। কিন্তু এ ভাবে কী উন্নয়ন ঠেকানো যায়? এটা করে ওঁরাই এলাকায় একঘরে হয়ে পড়ছেন।” |
|
|
|
|
|