আক্ষরিক অর্থেই এ হল ‘নিঃশব্দ ঘাতক।’ কখন, কী ভাবে যে শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধে সব কিছু লন্ডভন্ড করতে শুরু করেছে, বাইরে থেকে দেখে বোঝার যো-টি নেই! উপসর্গগুলো যখন এক-এক করে শরীরকে জানান দিতে শুরু করে, বহু ক্ষেত্রেই ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
প্রস্টেট ক্যানসারের বিপদকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন চিকিৎসকেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে দ্রুত হারে বাড়ছে, সেখানে স্রেফ সচেতনতার অভাবে তা মোকাবিলার ধার কমছে।
রোগের সঙ্গে লড়াইটা হয়ে যাচ্ছে নিতান্ত একপেশে। ব্রিটিশ জার্নাল অফ ইউরোলজি-র প্রধান সম্পাদক প্রখর দাশগুপ্তের কথায়, “নিশ্চিন্ত হয়ে দিন কাটিয়ে যাওয়া চল্লিশোর্ধ্ব বহু মানুষ জানেনও না, তাঁদের শরীরে রোগ বাসা বেঁধে রয়েছে কি না। জানার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। দরকার বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা। কিন্তু সেটাতেই যে বড় ঘাটতি!”
বেঙ্গল ইউরোলজিক্যাল সোসাইটি আয়োজিত বিমলেন্দু মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দিতে কলকাতায় এসেছিলেন প্রখরবাবু। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, ফুসফুসের ক্যানসারের পরেই যে ক্যানসারের দাপট পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, তাকে ঘিরে এখনও ন্যূনতম সচেতনতাও তৈরি হয়নি এ দেশে, এ রাজ্যে। অথচ প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল সচেতনতা। “পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মুম্বইয়ে রোগটির প্রকোপ সর্বাধিক। চেন্নাইয়েও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর কলকাতায়? এখানে কোনও পরিসংখ্যানই মজুত নেই।” মন্তব্য প্রখরবাবুর।
আগ্রাসনের নিরিখে মহিলাদের মধ্যে জরায়ু-মুখ (সার্ভিক্যাল) ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার তালিকার শীর্ষে। সেগুলি নির্ণয়ের জন্য এখন ম্যামোগ্রাম বা প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষা করাতে যথেষ্ট বেশি সংখ্যায় মেয়েরা এগিয়ে আসছেন। অন্য দিকে পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যানসারের হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও সে তুলনায় সচেতনতা খুবই কম বলে আক্ষেপ করছেন ইউরোলজিস্টদের বড় অংশ। ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ বলছেন, “প্রস্রাবে সমস্যা হচ্ছে, জ্বালা করছে, রক্ত বেরোচ্ছে। কিংবা পিঠে যন্ত্রণা। এমন সব উপসর্গ যখন দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগটা তত দিনে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের কাছে তাই চ্যালেঞ্জ হল গোড়াতেই সমস্যাকে চিহ্নিত করে তাকে নির্মূল করা।”
এবং সে জন্য অমিতবাবুর দাওয়াই, “পঞ্চাশ পেরোনোর পরে প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) পরীক্ষা করাতেই হবে। কোনও বিকল্প যুক্তি থাকতে পারে না।”
এ দিকে ইউরোলজিস্টদের অনেকে মেনে নিচ্ছেন, এখানে বহু জেনারেল ফিজিশিয়ান তেমন উপসর্গ না-থাকলে পিএসএ টেস্টের কথা বলেন না। তাই প্রস্টেট ক্যানসারের উপসর্গ যে অনেক দেরিতে জানান দেয়, এ তথ্যটা চিকিৎসক মহলেও ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য: এখন চিকিৎসা-বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। প্রস্টেট অপারেশনের পাশাপাশি রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। ঠিক সময়ে সাবধান হয়ে চিকিৎসা করালে বহু বছর সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে ইউরোপের উদাহরণ টেনেছেন রোবোটিক সার্জারির বিশেষজ্ঞ প্রখরবাবু। তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপে এখন রোবোটিক সার্জারির রমরমা। আরও এগোনোর চেষ্টা চলছে। সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, জিন-থেরাপির মাধ্যমে ক্যানসারের জিনটাকেই নিকেশ করে ফেলা।
তবে পশ্চিমবঙ্গে যে এখনই অতটা ভাবা বিলাসিতা, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী প্রখরবাবু তা-ও বিলক্ষণ বোঝেন। তাঁর পরামর্শ, “পিএসএ রিপোর্টে রিডিং বেশি এলে যথেষ্ট চিন্তার কারণ। যদি দেখা যায়, পিএসএ লেভেল বেশি অথচ বায়পসি রিপোর্ট নেগেটিভ, তা হলেও কিন্তু নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা করানো দরকার।”
প্রস্টেট ক্যানসারের এই ‘স্ক্রিনিং’কে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মানছেন অন্য চিকিৎসকেরাও। মেডিসিনের সুব্রত মৈত্র যেমন বলেন, “পঞ্চাশের বেশি বয়সের রোগী এলেই আমরা সুগার, কোলেস্টরল ইত্যাদির পাশাপাশি পিএসএ টেস্টও করাতে বলি। অনেক সময়ে প্রস্টেটে কোনও সংক্রমণ হলেও পিএসএ বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিই। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাসখানেক পরেও পিএসএনা কমলে ইউরোলজিস্টের কাছে রেফার করি। আমার মনে হয়, সকলেরই সেটা করা উচিত।”
পিএসএ পরীক্ষা কত দিন অন্তর করানো উচিত?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত বছরে এক বার। কোনও রিপোর্টের রিডিং বেশি বা বেশির দিকে থাকলে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরীক্ষা করিয়ে যেতে হবে। |
নিঃশব্দ ঘাতক |
উপসর্গ |
প্রস্রাবে সমস্যা
• প্রস্রাবে জ্বালা বা রক্ত
• পিঠে যন্ত্রণা
|
সতর্কতা |
• নিয়মিত পিএসএ পরীক্ষা |
|
স্বাস্থ্যেও নয়া উপাচার্য বাছতে সন্ধান কমিটি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নতুন সরকারের আমলে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্য আগেই সার্চ বা সন্ধান কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এ বার স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতে সার্চ কমিটি গঠন করল রাজ্য সরকার। সোমবার বিধানসভায় ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস (সংশোধনী) বিলটি পাশ হয়। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের শিক্ষা দফতরের অধীন নয়। তাই সেখানে উপাচার্য নিয়োগের জন্য ২০০২ সালে তৈরি আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের বাম জমানায় রাজনৈতিক পক্ষপাত করা হত। এর উদাহরণ হিসেবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন বিধানসভায় বলেন, “ওই দুই পদে কী ভাবে নিয়োগ করা হবে, নিযুক্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক আনুগত্য থাকবে কি না, আগে কোনও কিছুই স্পষ্ট ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করেছেন।” এই ‘স্বচ্ছতা’ হিসেবে বর্তমান সরকার উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ জনের সার্চ কমিটি তৈরি করেছে। ওই কমিটিতে মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি, রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সচিব এবং সরকারের মনোনীত এক জনকে রাখা হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান বেছে নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তিন জন সহ-উপাচার্য নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। |