সম্পাদকীয়...
মুক্তক্রন্দন
খ্যাত পুরুষের প্রকাশ্যে ক্রন্দন ইদানীং আদৌ অপ্রচলিত নহে। জর্জ ওয়াশিংটন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ লইবার পর কাঁদিয়াছিলেন। বারাক ওবামা-ও পুনর্নির্বাচিত হইবার পর তাঁহার সহকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাইতে গিয়া কাঁদিয়া ফেলেন। ভ্লাদিমির পুতিন-ও নির্বাচনে জিতিবার পর কাঁদিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার সমর্থকেরা বলে, ওই সময় চক্ষে বাতাস লাগিতেছিল। ক্রীড়াবিদদের সর্বাধিক বীরত্বব্যঞ্জক ভাবভঙ্গির অভ্যাস করিতে হয়, কিন্তু তাঁহারা প্রায়ই কাঁদেন। মারাদোনার ন্যায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ ফুটবলারের অশ্রুসজল মুখ বহু হৃদয়ে (ও সংবাদপত্রে) মুদ্রিত, ইংল্যান্ডের গাসকয়েন ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে একটি হলুদ কার্ড দেখিয়া শিশুর ন্যায় ভেউভেউ করিয়া কাঁদিয়াছিলেন, তাহা তাঁহাকে দেশবাসীর নিকট প্রবল প্রিয় করিয়াছিল। অ্যান্ডি মারে যখন উইম্বলডন টেনিস প্রতিযোগিতার ফাইনালে ২০১২ সালে ফেডেরারের নিকট পরাজিত হইলেন, তাঁহার চার মিনিটের আবেগাপ্লুত বক্তৃতা ও তৎসহ কান্না তাঁহার জনপ্রিয়তাকে এমন তুঙ্গে লইয়া গিয়াছিল, হয়তো জিতিলে তাহা হইত না। সম্প্রতি সচিন তেন্ডুলকর বিদায়ী বক্তৃতাকালীন কাঁদিতেছিলেন, আসমুদ্রহিমাচল তাঁহার সহিত নিখুঁত সঙ্গতে ফোঁপাইতেছিল। কপিলদেবের বিরুদ্ধে একদা গড়াপেটায় যুক্ত থাকিবার অভিযোগ উঠিয়াছিল, সেই সময়ে তিনি এক টিভি-সাক্ষাৎকারে এমন কাঁদিয়াছিলেন, জনগণমন-আদালতে তখনই বেকসুর খালাস পাইয়া যান।
যে কোনও মানুষেরই প্রকাশ্যে ক্রন্দন করা উচিত নহে, পুরুষ হইলে তো আরওই নহে এই ধারণা ক্রমশ লুপ্ত হইতেছে। কেহ বলিতেছেন, যদি প্রকাশ্যে হাস্য করা যাইতে পারে, ক্রন্দন কী দোষ করিল? কেহ অবশ্য বলিতেছেন, নিজ নিবিড় আবেগের কল সর্বসমক্ষে খুলিয়া দিবার মধ্যে দীনতা রহিয়াছে। কিন্তু তাহা হইলে পাশ্চাত্যে প্রকাশ্য প্রণয়-প্রদর্শনী মুহুর্মুহু ভাসিত কেন, আশ্লেষাবিষ্ট ও চুম্বনব্যস্ত যুগল তো নিজ সূক্ষ্ম আবেগকে রাজপথে কুচকাওয়াজ করাইয়া ছাড়েন। তবে পুরুষের ক্রন্দনে প্রবল সুখী নারীবাদীগণ। তাঁহারা বহু দিন ধরিয়াই ক্রমাগত বকুনি দিতেছেন, পুরুষের নিজ কোমল দিকগুলির প্রকাশ-অনুশীলনে মগ্ন হওয়া উচিত, কারণ ‘নারীরা সহজেই কাঁদে, পুরুষ শত শোকেও অবিচল থাকে’: ইহা পুংতন্ত্র-সৃষ্ট জঘন্য অনড়-ছাঁদ, যাহা পুরুষ-বিগ্রহে অবান্তর মহিমা আরোপ করে। ইহাতে নারী তো বটেই, পুরুষও অত্যাচারিত হয়, কারণ সর্ব সত্তা দিয়া হাহাকার করিয়া উঠিতে ইচ্ছা হইলেও, সে বজ্র-কঠিন মুখে স্ব-নিয়ন্ত্রণের অভিনয়ে বাধ্য, নিজেকে অতিমানব প্রমাণ করিবার এই দায় তাহাকে স্বতঃস্ফূর্ততা হইতে ঠেলিয়া বিকৃত ব্যবহারের গর্তে ফেলিয়া দেয়।
প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু কাঠিন্য কিছু কোমলতা রহিয়াছে, প্রকৃত আবেগ প্রকাশিত হইলে সেই ব্যবহার সত্যের ধার ঘেঁষিয়া যায়, তাই কান্নার মধ্যে অগৌরব নাই, নিজ আবেগকে চাপিয়াচুপিয়া রাখিবার রীতিই লজ্জাজনক। অনেকে ইহা মানিলেও, খ্যাত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অধিক আত্মসংযম দাবি করেন। তাঁহাদের মত-- আইকন হইব, জন-অনুসৃত হইব, আবার নিজ নিজ দুর্বলতা হাটেমাঠে অকাতরে উন্মোচন করিয়া ফেলিব, ইহা দায়িত্বজ্ঞানের পরিপন্থী। অনেকে আবার মুচকি হাসিয়া বলেন, খ্যাত ব্যক্তিদিগের কান্না আর কিছুই নহে, অধিক জনপ্রিয়তা আদায়ের ছলমাত্র। কান্নাকাটি করিলে এমনকী ঘোর বিরোধীর সুকঠিন হৃদয়ও কিঞ্চিৎ দ্রব হইয়া আসে, প্রেমিকা ও শিশুগণ এই পদ্ধতির ব্যবহার যুগ যুগ ধরিয়া করিয়া আসিতেছে। সকলের সম্মুখে কাঁদিলে, তাহা বিস্তর যুক্তি উড়াইয়া, ক্রন্দনকারীর কূলপ্লাবী বেদনা ও নিহিত সততার দ্যোতক হইয়া দাঁড়ায়। মানুষটির পরবর্তী পদক্ষেপে বৃহৎ সুবিধা ঘটে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.