বাকি ছিল একটা। শনিবার ভোররাতে আল ওমর নামে নামে দেশের বৃহত্তম সেই তেলের খনিটাও দখল করে নিল বিরোধীরা। যার জেরে সিরিয়ার সব তেলের খনিই এখন প্রেসিডেন্ট বাশর আল আসাদের হাতছাড়া।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে একটা ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, হামাগুড়ি দিয়ে একটা টানেলের ভিতরে ঢুকছে বেশ কয়েক জন। গায়ে জলপাই রঙের পোশাক, মাথায় কালো ফেট্টি। হাতে রাইফেল। টানেলের মুখে লেখা রয়েছে, ‘ওয়েলকাম। ইউফ্রেটস অয়েল কোম্পানি আল ওমর ফিল্ড’। ব্যাকগ্রাউন্ডে এক জন বলছেন, “আমরা এখন আল ওমরের ভিতরে। সরকারের ৭ খানা ট্যাঙ্ক আর সেনার সব অস্ত্র এখন আমাদের দখলে।” সরকারি তরফে অবশ্য এখনও পর্যন্ত আল ওমর দখলের সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহলে আসাদ এই তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন বলেই খবর।
রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষক দলের অন্যতম রামি আব্দেল রহমান জানিয়েছেন, দের আল-জোর অঞ্চলের ওই তেলের খনিটা দখল করে নিয়েছে আল-নুসরা নামে একটা সংগঠন। তারা আল কায়দা সমর্থিত একটি মৌলবাদী সংগঠন বলে খবর। আব্দিলের কথায়, “সরকার মুখে যতই অস্বীকার করুক, যুদ্ধে কিন্তু তারা হেরে গিয়েছে। না হলে কখনও খনির সামনে থেকে তাদের সব নিরাপত্তারক্ষীকে সরিয়ে নেয়?” |
আলেপ্পোয় বিস্ফোরণের পর। শনিবার রয়টার্সের তোলা ছবি। |
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খনির দখল আসাদের কাছে একটা বড়সড় ধাক্কা। এর পর থেকে বিরোধীদের সঙ্গে যুদ্ধে যাবতীয় সেনা গাড়ি চালানোর জন্য আমদানি করা তেলের উপরেই নির্ভর করতে হবে আসাদকে। আর তার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মর্জির উপর নির্ভর করতে হবে। যা বিরোধী-আক্রমণে জর্জরিত আসাদ সরকারের কাছে যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। তবে পিছু হটতে রাজি নন আসাদ। শনিবারই দেশের উত্তর দিকে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত আলেপ্পোয় আসাদ সমর্থিত সেনার আক্রমণে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে খবর। বিরোধীদের দাবি, এরা সবাই সাধারণ নাগরিক। সেই ২০১১ সালের মার্চ মাসে আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থান দেখেছিল সিরিয়া। তারপর কেটে গিয়েছে আড়াই বছরেরও বেশি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পরিণত হয়েছে গৃহযুদ্ধে। বিরোধীরা আল কায়দার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ। বিরোধীদের দমন করতে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করেছে আসাদ সরকার, এমন অভিযোগও উঠেছে। দেশে শান্তি ফেরাতে গঠন হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ পরিদর্শক দল। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। দলে দলে মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, এই আড়াই বছরের গৃহযুদ্ধে এক লক্ষের উপরে মানুষ নিহত। বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের ঘটনায় ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আসাদ সরকার। তা সত্ত্বেও বিরোধীপক্ষ বা আসাদ সরকার, কেউই সুর নামাতে রাজি নয়। তারই প্রমাণ এ দিনের আল ওমর দখল। আসাদ সরকারের অভিযোগ, দখল করা খনিগুলো থেকে তেল তুলে তা কালোবাজারে বেচছে বিরোধীরা।
২০১১ সালের আগে সিরিয়ায় প্রতিদিন প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হত। যার বেশির ভাগটাই রফতানি হত আমেরিকা আর ইউরোপের দেশগুলোতে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই তেল রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নগুলি। সায় দেয় আমেরিকাও। কিন্তু মাথা নোয়াতে রাজি হয়নি আসাদ। গত বছর নভেম্বরেও একবার এই আল ওমরের দখল নেয় বিরোধীরা। কিন্তু পরে আসাদ সমর্থিত সেনারা পরে তাদের হটিয়ে দেয়। কিন্তু এ বার সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির সমীক্ষায় প্রকাশ, সব সময়ে আতঙ্ক আর ভয়ের পরিস্থিতিতে থাকতে থাকতে সিরিয়ার অধিকাংশ শিশুই এখন মানসিক অবসাদের শিকার। বিরোধীপক্ষ বা আসাদ, যুদ্ধ শেষে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদের সামনেই এখন অপেক্ষা করে রয়েছে এক পঙ্গু ভবিষ্যৎ। |