ফর্ম পাওয়ার যোগ্য ২৬ হাজার। ফর্ম এসেছে চার হাজার। ফলে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের ফর্ম বিলি করতে বিপাকে পড়েছে দুর্গাপুরের স্কুলগুলি। অল্প সংখ্যক এই ফর্ম কীসের ভিত্তিতে বিলি করতে হবে, সে ব্যাপারেও নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ না থাকায় ছাত্রীদের মধ্যে কী ভাবে তা বণ্টন করা হবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। মহকুমা প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়, প্রথম দফায় এই ফর্ম দেওয়া হয়েছে। পরে আরও দেওয়া হবে।
সমাজ কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে কন্যাশ্রী প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরে ১৩ লক্ষ মেয়েকে সাহায্যের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত, ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বয়স ও পারিবারিক আয় বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম হলে সেই সব ছাত্রীদের বছরে ৫০০ টাকা করে এই প্রকল্পে বৃত্তি দেবে সরকার। স্কুল-কলেজে পাঠরত বা সরকারের যে কোনও প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণরত ১৮ বছরের বেশি বয়সের অবিবাহিতা মেয়েদের দেওয়া হবে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। সেই বৃত্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষা দফতর মারফত আসা নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে। তার পরেই বৃত্তি দেওয়া হবে ছাত্রীকে। কিন্তু দুর্গাপুরে সমস্যা দেখা দিয়েছে ফর্মের সংখ্যা নিয়েই। |
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্গাপুর মহকুমায় স্কুলের সংখ্যা ১১২। সব স্কুল মিলিয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পে বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। সেখানে মহকুমায় এই প্রকল্পের জন্য আবেদনের ফর্ম এসেছে মাত্র ৪ হাজার। বুধবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজেদের স্কুলের ফর্ম নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ফর্ম পাওয়া যাবে জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন তাঁরা। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রশ্ন তোলেন, মাত্র কয়েকটি ফর্ম নিয়ে কী হবে? এই সামান্য সংখ্যক ফর্ম কী ভাবে বিলি করা হবে? যারা ফর্ম পাবে না তাদের কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী কৈফিয়ত দেবেন?
সহকারী স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ব্যাপারে তাদের কিছু করার নেই। কোনও স্কুলে কন্যাশ্রীর ফর্ম পাওয়ার যোগ্য যত ছাত্রী রয়েছে, তার ১৫ শতাংশ ফর্ম এখন দেওয়া হবে। উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ ফর্ম নেন। কাঁকসার সিলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পাল জানান, তাঁদের স্কুলে যোগ্য ছাত্রীর সংখ্যা ৩৫৭। ফর্ম পেয়েছেন ৫৩টি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। কাঁকসার মলানদিঘি দুর্গাদাস বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় আবার ফর্মই নেননি। তিনি জানান, স্কুলে যোগ্য ছাত্রীর সংখ্যা ২০৩। ফর্ম পাওয়ার কথা ছিল মাত্র ৩০টি। এবিটিএ-র মহকুমা সম্পাদক তন্ময়বাবুর বক্তব্য, “কীসের বিচারে বা ভিত্তিতে ফর্ম দেব তা নির্দিষ্ট ভাবে জানতে চেয়েছিলাম। সদুত্তর পাইনি। তাই ফর্ম নিইনি।” দুর্গাপুরের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক জয়ন্তী রায় জানান, মহকুমা প্রশাসনের তরফে মোট ৪ হাজার ফর্ম দেওয়া হয়েছে। হিসেব কষে স্কুল পিছু ছাত্রী সংখ্যার ১৫ শতাংশ হারে তা বিলি করেছেন। জয়ন্তীদেবী বলেন, “আমি কিছু জানি না। যা ফর্ম দেওয়া হয়েছিল, বিলি করেছি। বাকিটা মহকুমাশাসকই বলতে পারবেন।” মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত জানান, আপাতত প্রথম পর্যায়ে কিছু ফর্ম এসেছে। সেগুলি পূরণের পরে জমা নেওয়া, ছাত্রীদের ব্যাঙ্কের পাশবই তৈরি ইত্যাদির কাজ হবে। এ সবের পরে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের মারফত দ্বিতীয় পর্যায়ের ফর্ম আসবে। তখন আবার বিলি করা হবে। এখন কী ভিত্তিতে এত ছাত্রীর মধ্যে এই অল্প ফর্ম বিলি করা হবে, সে ব্যাপারে অবশ্য তিনি বা জয়ন্তীদেবী, কেউ কিছু বলতে চাননি। |