|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
চোর নয় কে |
রূপান্তরের নাটকে এমনই প্রশ্ন তুললেন নির্দেশক
শ্যামল দত্ত।
লিখছেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী। |
মধু চুরি করে। তার অকাট্য যুক্তি চুরি করায় দোষ নেই। জগতে চোর নয় কে? কেউ করে আইন বাঁচিয়ে, কেউ আইন ভেঙে। কিন্তু তাই বলে চোরের ঘরে চুরি! ভাদ্র শেষের দুর্যোগের সেই রাতে অভিজ্ঞ সিঁধেল মধু তার মহার্ঘ রত্ন বউ ‘কাদু’র হাতবদল হওয়ার কোনও আভাস পায়নি। তা হলে কি আর সে অন্যের ঘরে চুরি করতে যায়! তাঁর গল্পের প্রান্তিক এই মানুষটি সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বৈধ উপায়ে আজ পর্যন্ত সে একটি পয়সাও উপার্জন করিয়াছে কি না সন্দেহ।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প সেই ‘চোর’কে এ বার মঞ্চে আনল গোবরডাঙা রূপান্তর, শ্যামল দত্তের নির্দেশনায়। রূপান্তরের প্রতিটি প্রযোজনাই বুদ্ধিদীপ্ত। এই নাট্যদলের প্রত্যেকেই চরিত্রের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যান, যেখানে সাফল্যের শেষে বাহবা পায় অবশ্যই ‘টিমওয়ার্ক’।
গ্রামের রাখাল মিত্রের সম্পদ হাতাবে বলে মধু পণ দিয়ে বিয়ে করে আনা তার সোহাগি বউ কাদুকে ‘সোর্স’ হিসেবে কাজে লাগায়। সেই কাদুই আপন ইচ্ছায় নিজেকে ‘চুরি’ হয়ে যেতে দিল! মধুর ভালবাসা বুঝতে দেয়নি ওই বাড়িতে কাদু তলে তলে প্রেম-দৌলতে মজেছে। তা হলে রাখালের ছেলে পান্নালালও ‘চোর’? লীনা দাস কাদু চরিত্রটিকে অসামান্য অভিনয়ে, চাহনিতে, শরীরী ঝাঁঝে দর্শকের মনে গেঁথে দিয়েছেন। এমন অভিনয় বাংলা থিয়েটারকে আরও ঋদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। মধুর ভূমিকায় জীবন অধিকারী মানানসই। |
|
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গল্পে রাখালকে ‘সাধু’ মানুষ বলে উল্লেখ করেছিলেন। রূপান্তর কিন্তু রাখালকে সাধু নয়, লম্পট ও খুনি হিসেবে মঞ্চে দেখিয়েছে। চোরের প্রতি সহানুভূতি বাড়াতেই কি নাট্যরূপে এমন পরিবর্তন! রাখালের ভূমিকায় অভীক দাঁ ও তার ছেলে পান্নালালের চরিত্রে অতনু পাল মানিয়ে যায়। এমনই মানানসই রাখালের স্ত্রীর চরিত্রে সুদীপ্তা মুখোপাধ্যায়। এ নাটকে একটি কাল্পনিক চরিত্র আবু হোসেন। যার বৌকে রাখাল এক কালে শারীরিক-ভোগের পর নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। আবুর চরিত্রে মঞ্চে স্বরূপ দেবনাথের লোকগান ভাল লাগে। নির্দেশক শ্যামল দত্ত অবশ্যই আরও এক বার অভিনন্দন পাবেন নাটক শুরু ও শেষে গাঙ দিয়ে মাঝির বেয়ে যাওয়ার দৃশ্যটির জন্য। কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যরূপে ‘চোর’-এ আলো করেছেন আশিস দাস। ঝড়-বাদলের অমাবস্যা রাত তাঁর আলোআঁধারির খেলায় বেশ মায়াবী।
কাদু ‘চুরি’ হওয়ার পর, মানিক তার গল্পের শেষে লিখেছিলেন ‘মধুর মনের উত্তেজিত আনন্দ সহসা নিঝুম’ হয়ে যায়। তার যেন জ্বর আসে। কিন্তু ‘জগতে চোর নয় কে? সবাই চুরি করে।’ এই যুক্তিই তাকে ফের হাসায়। রূপান্তর যদিও এ নাটক শেষে মধুকে একলা হতে দেয়। তাকে কাঁদায়। পান্নালালের হাতে কাদুর মর্মান্তিক পরিণতির কথা ভেবে ‘চোর’ ভেঙে পড়ে। নাটকের সার্থকতা সেখানেই। |
|
|
|
|
|