নিট সম্পদকে কুড়ে খেয়েছে লোকসানের বোঝা। আইন মোতাবেক সে কথা জানাতে হবে বিআইএফআর-কে (বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিচালন পর্ষদ।
তবে বেহাল আর্থিক দশার কথা জানানো মানেই সংস্থাকে বিআইএফআরে পাঠানো নয়। তাই শেষ পর্যন্ত পেট্রোকেমকে যাতে সেখানে যেতে না-হয়, তার জন্য সব রকম চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতি আটকাতে চায় সংস্থার অন্যতম অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীও।
পার্থবাবু জানান, সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে নতুন করে ঋণ পাওয়ার জন্য শীঘ্রই ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, “কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হবে। আজই (শুক্রবার) নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা জমা দিয়েছেন।” উল্লেখ্য, এ দিন পষর্দের সামনে পাঁচ বছরের ‘রোড ম্যাপ’ তুলে ধরেন এমডি উত্তম বসু। যা কার্যকর করতে মার্চ পর্যন্ত বাজেট অনুমোদন করেছে পর্ষদ। পার্থবাবুর আশা, তার মধ্যে পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার নিলাম সংক্রান্ত আইনি সমস্যারও সমাধান সূত্র বেরোবে।
সংস্থা বিআইএফআরে যাওয়ার বিরোধী চ্যাটার্জি গোষ্ঠীও। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিট সম্পদ তলানিতে। এই পরিস্থিতি আটকাতে হবে।” কিন্তু তার জন্য সংস্থার হাল ফেরাতে নতুন করে টাকা ঢালার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। প্রসঙ্গত, আগে নতুন করে ৫০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। কিন্তু শর্ত হিসেবে সংস্থা পরিচালনায় কর্তৃত্ব চেয়েছিলেন। তা বাস্তবায়িত হয়নি।
পেট্রোকেমকে বিআইএফআরে পাঠানো হবে কি না, মূলত তা নিয়ে আলোচনা করতেই এ দিন বৈঠকে বসেছিল পর্ষদ। কোন সংস্থাকে রুগণ বলে ধরা হবে, তার বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। যার অন্যতম হল, পুঞ্জীভূত লোকসানের অঙ্ক নিট সম্পদকে ছাপিয়ে যাওয়া। নিয়ম হল, সংস্থা এ ভাবে রুগণ হয়ে পড়লে, সেই বেহাল দশা বাধ্যতামূলক ভাবে জানাতে হবে বিআইএফআর-কে। যেখানে রুগণ হয়ে পড়া সংস্থার জন্য প্রথমে পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা করা হয়। তা-ও সফল না-হলে, সুপারিশ করা হয় সংস্থা বন্ধ করার।
পেট্রোকেমের আর্থিক স্বাস্থ্য বহু দিনই তথৈবচ। হিসাব নিরীক্ষকের মতে, গত অর্থবর্ষেই ক্ষতির অঙ্ক ছিল ১,১৪৮.৯০ কোটির উপরে। পরের ৫ মাসে তা আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়ে। আগের অর্থবর্ষেই মেনে নেওয়া হয়েছিল যে, ইতিমধ্যেই নিট সম্পদের অর্ধেক খেয়েছে লোকসান। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, খাতায়-কলমে শেয়ার দর (বুক ভ্যালু) শূন্য। শেয়ারে লোকসান ৬ টাকা। তার উপর ঘাড়ে চেপেছে একের পর এক মামলা। যার মধ্যে সাম্প্রতিকতমটি শুরু হয়েছে সংস্থার সরকারি শেয়ার নিলামের পর। এ অবস্থায় শুক্রবার প্রথমে পর্ষদের বৈঠকে এবং তার পর এগজিকিউটিভ জেনারেল মিটিংয়ে সংস্থার বেহাল দশার কথা বিআইএফআর-কে জানানোর বিষয়টি ঠিক হয়।
|