শিক্ষার মান আশানুরূপ না হওয়ায় বিশ্বের সেরা দু’শো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্থান পায় না, দুর্গাপুরে এনআইটি-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এমনই মত প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। গবেষণার বিষয়ে জোর দিতে বলেন তিনি। শুক্রবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও একই আর্জি জানান তিনি।
এ দিন এনআইটি-র অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিশ্বের প্রথম ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আমাদের দেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জায়গা পায় না। বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন জোর দিতে হবে।” তিনি জানান, দেশে গত কয়েক বছরে বহু নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আইআইটি-র সংখ্যা সাত থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫। এনআইটি-র সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হয়েছে। এর পরেই তিনি বলেন, “কিন্তু শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেই হবে না। সমান গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষার মানোন্নয়নেও।”
প্রণববাবু প্রাচীন ভারতে শিক্ষার সুদিনের কথা উল্লেখ করে জানান, বিশ্বে তক্ষশিলা, নালন্দা, বিক্রমশীলার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল। নানা দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়ুয়ারা আসতেন। অথচ, এখন তার উল্টো ছবি। তিনি বলেন, “সিভি রমনের পরে গত ৮০ বছরে এ দেশে গবেষণা করে কেউ নোবেল পাননি। হরগোবিন্দ খুরানা, চন্দ্রশেখর, অমর্ত্য সেন এ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই স্নাতক হয়েছেন। কিন্তু গবেষণা করেছেন বিদেশে। এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে।” |
এ দিন তাঁর বক্তব্যে গবেষণায় আরও জোর দেওয়ার আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “গবেষণার ঘাটতি থাকায় আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বের প্রথম সারিতে খুব বেশি জায়গা পায় না।” আইআইটি এবং এনআইটি-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম সমাবর্তন উৎসবে দীক্ষান্ত ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, শিক্ষাকেন্দ্র, গবেষণাগারগুলি থেকে বেরোনোর পরে ছাত্র বা গবেষকেরা মোটা বেতনের চাকরির দিকেই চলে যাচ্ছেন। দেশের যে সেবা প্রয়োজন, তা কিন্তু তাঁরা করছেন না।” তিনি জানান, নানা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে তো বটেই, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গেও জ্ঞান ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
এনআইটি-র অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তৃণমূল স্তরে যাঁরা নানা উদ্ভাবনী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে ‘ইনোভেশন ক্লাব’ গড়ার প্রস্তাব দেন। এনআইটি-গুলিকে নানা শিল্প সংস্থার সঙ্গে যোগযোগ করে ‘ইন্ডাস্ট্রি সেল’ গড়ে পড়ুয়াদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিতে উদ্যোগী হতেও পরামর্শ দেন তিনি।
বর্ধমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বলেন, “আমাদের রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অনেক বিভাগ খুলেছে, কলেজের সংখ্যার পাশাপাশি ছাত্রের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু যে উৎকর্ষতায় পৌঁছনোর দরকার ছিল, তা আমরা পারিনি। এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের এগিয়ে আসতে হবে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে অনলাইনে ছাত্রভর্তির ব্যবস্থা করে রাজ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সারা দেশে বর্ধমানের বিজ্ঞান বিভাগগুলির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “রাজ্য সরকারের অর্থানুকূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত ভবন সংস্কারের কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে। রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সুমন্ত ভট্টাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০১৩ সালের জুনিয়র সায়েন্টিস্ট সম্মানে ভূষিত করেছে। তা থেকেই বোঝা যায়, আমাদের এখানে শিক্ষক ও গবেষকেরা এগিয়ে চলেছেন।”উপাচার্য আরও বলেন, “আমাদের সব চেয়ে বড় সাফল্য হল, ক্যাম্পাসকে ঝামেলা মুক্ত রাখা। এই কাজের সহযোগিতার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।” এ দিন ৯৮ জনকে পিএইচডি উপাধি দেওয়া হয়। আচার্য সমাজতত্ত্ববিদ দীপঙ্কর গুপ্তকে সাম্মানিক ডি লিট ও পদার্থবিদ নবকুমার মন্ডলকে ডি এসসি উপাধি তুলে দেন।
|
হোর্ডিংয়ে ভুল বানান
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
এনআইটি-র প্রবেশ পথে টাঙানো হোর্ডিংয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামের বানানে ভুল থাকায় চাপানউতোর হল দুর্গাপুরে। খবর পেয়ে রাষ্ট্রপতি ঢোকার আগেই তড়িঘড়ি সেখানে ঠিক বানান লেখা স্টিকার সেঁটে দেওয়া হয়। তবে রাষ্ট্রপতি ভিতরে থাকাকালীন তা ফের খুলে যায়। এই রকমই রাষ্ট্রপতির নামের বানান ভুল লেখা হোর্ডিং দেখা গিয়েছে দুর্গাপুর মহিলা কলেজের সামনে, মেন গেট এলাকায়। শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রাষ্ট্রপতি শহরে আসছেন, তা গর্বের ব্যাপার। সেখানে এই ধরনের বানান-বিভ্রাট রীতিমতো লজ্জার।” |
প্রাক্তন শিক্ষক তথা কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেব রায় বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে এমন ভুল বানান মেনে নেওয়া যায় না। এর দায় এনআইটি কর্তৃপক্ষের।” এনআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে বেসরকারি সংস্থা হোর্ডিং তৈরির কাজ করেছে তারা সেগুলি শেষ মুহূর্তে দিয়েছে। তাড়াহুড়োয় সব খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের তরফে যিনি এর দায়িত্বে ছিলেন তাঁর কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। |