দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নদীপথে কোনও অভিযানে পুলিশ যে এখনও কার্যত অসহায় তা ফের টের পাওয়া গেল।
ডায়মন্ড হারবার বন্দরে জাহাজ থেকে মাল খালাসের বরাত নিয়ে তৃণমূলের দুই শ্রমিক সংগঠনের গোষ্ঠীর তুমুল লড়াই চলছিল। মঙ্গলবার ওই ঘটনার খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছতে নাকাল হতে হয় পুলিশকে। জেটি ঘাটে এসে কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাট থেকে নদীপথে ডায়মন্ড হারবার বন্দর প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। থানার নিজস্ব লঞ্চ ও ট্রলার নেই। বন্দরে যাওয়ার জন্য শ্রমিকেরা ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাট থেকে সাধারণত ভুটভুটি ও ট্রলারে যাতায়াত করেন। ডায়মন্ড হারবার জেটি ঘাটে একটি বেসরকারি ট্রলার রয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ভুটভুটি ও ট্রলারটি উধাও হয়ে যায়। এই অবস্থায় ডায়মন্ড হারবার থানা থেকে একাধিকবার পদস্থ কর্তাদের ফোন করে লঞ্চের ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। ডায়মন্ড হারবারের দুই পড়শি থানারও কোনও লঞ্চ ও ট্রলার নেই। ফলে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভুটভুটি ও ট্রলারের খোঁজে হন্যে হয়ে শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে একটি ট্রলারের মালিককে রাজি করিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আর এই ঘটনাই টনক নড়িয়ে দিয়েছে জেলা পুলিশের। নদীপথে কোনও দুষ্কৃতীকে তাড়া করতে হলে বা কোনও অভিযানে যেতে হলে লঞ্চের অভাবে পুলিশকর্মীদের যে সমস্যায় পড়তে হবে তা এই ঘটনাতেই টের পাওয়া গিয়েছে। এক পুলিশকর্মীর কথায়, “ওই দিন রাতে একটি বার্জ ছিনতাই করে রায়চকের দিকে নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। বার্জটি খোঁজার জন্য পুলিশের তরফে কোনও ট্রলার ও ভুটভুটি ছিল না। যে ট্রলারটি আমাদের ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাট থেকে নিয়ে এসেছিল সে রাতে বার্জ খোঁজার বিষয়ে কোনও আগ্রহ দেখায়নি।”
নদীপথে বড় কোনও বিপর্যয় হলে বর্তমানে পুলিশের অবস্থা কার্যত ঠুটো জগন্নাথ। জেলার সাগর, কাকদ্বীপ, কুলপি, ডায়মন্ড হারবার, রামনগর, ফলতা, নোদাখালি ও বজবজ থানা এলাকার বেশ কিছুটা অংশে যাতায়াতে নদীপথই উপায়। এই অবস্থায় পরিকাঠামোর এমন সমস্যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তাদের। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কয়েকটি থানায় ট্রলারের ব্যবস্থা রয়েছে। পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, রায়দিঘি থানায় লঞ্চ রয়েছে। বাকি থানাগুলিতে এখনও তেমন কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি।” তাঁর আশঙ্কা, বড় কোনও দূর্ঘটনা ঘটলে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। কতদিন আর বেসরকারি ট্রলার ভাড়া নিয়ে কাজ করা যাবে। তা ছাড়া ট্রলারের ভাড়া পেতে বছর গড়িয়ে যায়। ফলে ট্রলারের মালিকরাও এখন পুলিশকে ট্রলার ভাড়া দিতে চান না।” কয়েক বছর আগে নদীপথে সুরক্ষার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিনটি উপকূলবর্তী থানা তৈরি করা হয়েছিল, সুন্দরবন, মইপীঠ ও ফ্রেজারগঞ্জ। প্রতিটি উপকূলবর্তী থানায় একটি করে স্পিডবোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও থানাতেই লঞ্চ বা ট্রলার নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, গত এপ্রিল মাস থেকে ওই স্পিডবোটের জন্য তেলের জোগান বন্ধ। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকার ফলে সেগুলির অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।
রাজ্য সরকারের তরফে সুন্দরবন এলাকায় পর্যটনের প্রসারে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশি পরিকাঠামোর এমন অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সুন্দরবন এলাকার পুলিশি পরিকাঠামোর সমস্যা সম্পর্কে পদস্থ কর্তাদের একাধিক বার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এখনও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ফলে জোড়াতালি দিয়ে কোনওরকমে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে।”
কিন্তু এ ভাবে কতদিন? |