|
|
|
|
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে সরগরম অরণ্যশহর |
ধৃত সিপিআই নেতাকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দিল আদালত
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
অরণ্যশহরে পুরভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে এক বাম নেতাকে গ্রেফতার করা হল।
ধৃত গুরুপদ মণ্ডল হলেন সিপিআইয়ের ঝাড়গ্রাম লোকাল কমিটির সদস্য। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থীর পোলিং এজেন্টও তিনি। স্থানীয় তৃণমূল প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট লক্ষ্মীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে শহরের কদমকানন এলাকা থেকে গুরুপদবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। লক্ষ্মীকান্তবাবুর দাবি, বুধবার সন্ধ্যায় কদমকাননের রাস্তায় তাঁকে একা পেয়ে মারধর করে মাথার রিভলবার ঠেকিয়ে নগদ দু’হাজার টাকা ছিনতাই করে চম্পট দেন গুরুপদবাবু ও তাঁর এক সঙ্গী। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে গুরুপদবাবুকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
গুরুপদবাবুর আইনজীবী কৌশিক সিংহ এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, “গুরুপদবাবুকে ভোটের রাজনৈতিক কাজকর্ম থেকে বিরত রাখার জন্যই পরিকল্পিত ভাবে সাজানো ঘটনায় তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঝাড়গ্রামের রাজনীতিতে পুলিশি হস্তক্ষেপের বিষয়টি এই ঘটনায় বেআব্রু হয়ে পড়েছে।” এ দিন কৌশিকবাবু আদালতে আবেদন করে জানান, তাঁর মক্কেল ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। শুক্রবার পুর নির্বাচনের দিনে গুরুপদবাবু যাতে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য আদালতে আবেদন জানান কৌশিকবাবু। আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। আদালতের নির্দেশে পুলিশি প্রহরায় গুরুপদবাবুকে আজ, শুক্রবার ভোটদানের জন্য কদমকানন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে নিয়ে যাবেন তদন্তকারী অফিসার। |
|
ঝাড়গ্রাম থানার সামনে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র। |
গুরুপদবাবুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন সকালে শহর বামফ্রন্টের তরফে সিপিএম নেতা শিবনাথ গুহ ও সিপিআই নেতা বিভূতি মিদ্যা’র নেতৃত্বে প্রায় কয়েকশো বাম কর্মী-সমর্থক দেড় ঘণ্টা ঝাড়গ্রাম থানার সামনে প্রতীকী ঘেরাও করেন। পরে এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) বিবেক বর্মাকে স্মারকলিপি দেন বামেরা। বামেদের অভিযোগ, অবাধ নির্বাচন হলে তৃণমূলের জয় সহজ নয়। ১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করতে গুরুপদবাবুকে সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্য দিকে, বুধবার রাতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কদমকাননে বাম সমর্থক লোধা সম্প্রদায়ের এক বিধবা মহিলাকে তৃণমূল কর্মীরা শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে ঝাড়গ্রাম থানায় ৫ তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। অভিযুক্তদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতিই
|
গুরুপদ মণ্ডল |
নেই। পুলিশের উপর মহলের নির্দেশে বাম কর্মীদের সাজানো ঘটনায় গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বাম কর্মীদের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব অবশ্য দাবি করেছেন, “প্রত্যেক বার অরণ্যশহরে গুন্ডাগিরি করেই বামেরা ক্ষমতা দখল করত। রাজ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে সেটা গুরুপদবাবুর মতো বাম নেতা-কর্মীরা ভুলে গিয়েছেন। ধরা পড়ে গিয়ে এখন ওরা মিথ্যা অভিযোগ করছে। পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে।”
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবডিহি এলাকায় আবার এক কংগ্রেস কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি নিখিল মাইতির অভিযোগ, বুধবার রাতে স্থানীয় একটি বুথের কংগ্রেসের পোলিং এজেন্ট তপন আচার্যকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-ফ্লেক্স, ফেস্টুন ও পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর জখম তপনবাবুকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযুক্ত দুই তৃণমূল কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি নিখিল মাইতির অভিযোগ, “তপনবাবুকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তরা তৃণমূল কর্মী হওয়ায় জামিন যোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। শহরে কোনও পুলিশি নিরাপত্তা নেই। আমাদের কর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টদের মারধর করা হচ্ছে। তৃণমূলের বহিরাগতেরা শহরে ঢুকছেন। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে, শাসক দলকে সাহায্য করার জন্যই পুলিশ রয়েছে।”
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
আজ, শুক্রবার ভোটগ্রহণের দিনটা কেমন কাটে তাকিয়ে সব পক্ষ। |
|
|
|
|
|