নোট নকলে পাক সরকারি মদত, আশঙ্কা ভারতীয় গোয়েন্দাদের
গে সন্দেহ ছিল শুধু ‘ডি কোম্পানি’ এবং পাক জঙ্গি সংগঠনগুলির ওপর। কিন্তু নয়াদিল্লির আশঙ্কা, ভারতীয় নোট জাল করতে ওই জঙ্গি সংগঠনগুলিকে এখন সরাসরি মদত জোগাচ্ছে ইসলামাবাদ প্রশাসন! জঙ্গি কার্যকলাপে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি ভারতীয় অর্থনীতিকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দেওয়াই ষড়যন্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে মনে করছে দেশের শীর্ষ তিন গোয়েন্দা সংস্থা। রিসার্চ অ্যান্ড আনালিসি উইং (র), সিবিআই এবং ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর তথ্য সমন্বয় করে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার আলোচনাও হয়েছে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির (সিসিএস) বৈঠকে।
প্রশ্ন হল, কীসের ভিত্তিতে সরাসরি পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন গোয়েন্দা কর্তারা?
মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য প্রস্তুত ওই গোয়েন্দা নোটে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে গোয়েন্দা কর্তারা জানান, জাল নোট পাচারকারী ও জঙ্গিদের ধরপাকড় করে বিপুল অঙ্কের জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। ওই নোটগুলি পাঠানো হয়েছিল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসার পরই পাক প্রশাসনের মদতের ব্যাপারে গোয়েন্দাদের সন্দেহ দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে।
শুধু জাল নোট ছড়ানোই নয়, ভারতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও নাশকতার কাজেও পাকিস্তান সমান তৎপর। আজ ডিজিদের সম্মেলনে তেমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন পশ্চিম সীমান্তের ওপারের ভারত-বিরোধী শক্তির থেকে মদত পাচ্ছে। গোয়েন্দা-প্রধান আসিফ ইব্রাহিমের মত, “ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গিদের বড় অংশ এ দেশের হলেও, তাদের মেন্টররা পাকিস্তানেরই।” ইয়াসিন ভটকল ও তার ডান হাত আসাদুল্লাহ আখতার গ্রেফতার হলেও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গোয়েন্দা-প্রধানের যুক্তি, পটনার ধারাবাহিক বিস্ফোরণই এর প্রমাণ। লস্করের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নিজেদের ক্ষমতা এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, যে খুব অল্প সময়ের প্রস্তুতিতেই তারা নাশকতা চালাতে পারে। অন্য দেশের জঙ্গি-সংগঠনের সঙ্গেও হাত মেলাচ্ছে তারা। গোয়েন্দা-প্রধানের ইঙ্গিত মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের দিকে। কারণ তাদের উপর অত্যাচারের বদলা নিতেই বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ আইএম-এর।
জাল নোটের ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া জাল নোটগুলি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যে ধরনের কাগজ ওই নোট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে তার সঙ্গে পাকিস্তানের সরকারি কাগজ বা ‘লিগ্যাল টেন্ডারের’ হুবহু মিল রয়েছে। ফরেন্সিক কর্তারা জানান, “এই নোটগুলি অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি। কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন মেশিন কেনা সম্ভব নয়। তা ছাড়া আসল নোট তৈরির জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলি যে কাগজ ব্যবহার করে, এই জাল নোট তৈরির জন্যও সেই কাগজই ব্যবহার হয়েছে। আসল নোট চেনার জন্য যে জলছাপ ব্যবহার করা হয়, তা-ও নিখুঁত ভাবে নকল করা হয়েছে। এটা রাষ্ট্রের পক্ষেই করা সম্ভব।”
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এ-ও জানান, “জাল নোটের কাগজ, নম্বর বক্স-এর ব্যবহার, এবং নোট প্রস্তুতের সময় ‘সিকিউরিটি থ্রেড’ এমন ভাবে বসানো হয়েছে যে খালি চোখে আসল-নকল ফারাক ধরাই মুশকিল।”
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া রিপোর্টে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এমন উচ্চ গুণমান সম্পন্ন জাল নোট পাকিস্তান ছাড়া আর কোনও প্রতিবেশী দেশে তৈরি হওয়ার কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি। পাকিস্তান থেকেই চিন ও নেপাল হয়ে এই জাল নোট যে ভারতে ঢুকছে, তার বহু প্রমাণ আছে।
গোয়েন্দাদের মতে, ভারতে এ ভাবে জাল নোট ছড়ানোর চেষ্টার দুটি কারণ। এক, জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অর্থ জোগানো। দুই, ভারতীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করা। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে কাশ্মীরে জাল নোট পৌঁছে দেওয়ার কিছু চেষ্টা বানচাল করা হয়েছে। কয়েক জন চোরাকারবারি ও জঙ্গিও ধরা পড়েছে। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, উপত্যকায় হিজবুল, লস্কর ও আল বদরের এজেন্টদের ওই জাল নোট তারা পৌঁছে দিতে চাইছিল।
এখন প্রশ্ন, পাকিস্তান থেকে এই জাল নোট ভারতে আনছে কারা?
গোয়েন্দা কর্তারা সরকারকে জানান, তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ও চোরাচালান গোষ্ঠীর যোগসাজসের বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে। অধিকাংশই পাকিস্তানের। বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নেপাল, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় এদের এজেন্ট রয়েছে। পাকিস্তান থেকে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বান্ডিল বান্ডিল জাল নোট। তার পর তারা সেই নোট ভারতে ঢোকাচ্ছে। পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সক্রিয় দাউদ ইব্রাহিমের গোষ্ঠীও এর সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দাদের মতে, জাল নোট পাচারে বাংলাদেশ এবং নেপাল সীমান্ত হল চোরাকারবারিদের পছন্দের পথ।
গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে জাল নোটের কারবারের বড় চক্র নেই। বিদেশি এজেন্টগুলি ছোট ছোট কিছু চক্রকে এ কাজে লাগাচ্ছে। সেগুলির অধিকাংশই রয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলিতে। যারা বিদেশি এজেন্টদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ‘কনসাইনমেন্ট’ নিচ্ছে। তার পর হয় সেই টাকা বাজারে ছড়াচ্ছে, নয়া পাচার করছে জঙ্গিদের কাছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, শীর্ষ তিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এই তথ্য পেয়ে কেন্দ্রও নড়েচড়ে বসেছে। ইসলামাবাদের কাছে একটি প্রতিবাদ পত্র (ডোসিয়ার) পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সিবিআই-কে ২৫ জনের স্পেশাল টিম তৈরির করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয় বাড়ানোরও চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। উদ্দেশ্য শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, নেপাল, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাল নোট ঢোকা আটকানো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.