নভেম্বরে মালদহে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাঁর সফরকে সামনে রেখেই ঢেলে সাজা হচ্ছে মালদহের সার্কিট হাউস। তা নিয়েই বেঁধেছে বিতর্ক।
মালদহ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী পুরাতন সার্কিট হাউসে উঠবেন না। তবু মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখেই ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে জোরকদমে সার্কিট হাউসের খোলনলচে বদলানোর কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। পুরাতন সার্কিট হাউসের ঐতিহ্যবাহী লাল রং পাল্টে নীল সাদা রং করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রিটিশ আমলের বেলজিয়ামের কাঠের তৈরি আট ফুটের দরজা খুলে ফেলে প্লাইউড ও কাচের দরজা লাগানো হয়েছে। |
দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন হেরিটেজ বিল্ডিং পুরাতন সার্কিট হাউসের এহেন সংস্কারে জেলার ইতিহাসবিদরা অনেকেই অসন্তুষ্ট। জেলার প্রবীণ ইতিহাসবিদ কমল বসাক বলেন, “১৮২৫ সালে এই পুরাতন সার্কিট হাউস তৈরি হয়। এই পুরাতন সার্কিট হাউসে সুভাষচন্দ্র বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজিনী নাইডু, রামানুজন, রাজশেখর বসুর মতো ব্যক্তিরা উঠেছিলেন। তাই পুরাতন সার্কিট হাউসকে ঠিক রেখেই তাকে সুন্দর করা যেতেই পারত। কিন্তু যে ভাবে ব্রিটিশ আমলের বেলজিয়ামের কাঠের দরজা খুলে, ভবনের রং বদল করে সার্কিট হাউসের খোলনলচে পাল্টানো হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক।”
তবে জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের রং বদলানো যাবে না এটা কোন আইনে বলা আছে? দরজাগুলি খুবই বাজে অবস্থায় ছিল। ঠিক মতো খোলা যাচ্ছিল না। তাই সেগুলি পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।” জেলাশাসক বলেন, “অনেকদিন থেকেই সার্কিট হাউস সাজার কথা চলছিল। কিন্তু কাজ শুরু করা হচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মালদহ সফরে আসছেন, সেই সুবাদে কন্টিনজেন্সির ৮-১০ লক্ষ টাকা খরচ করে সার্কিট হাউস সাজা হচ্ছে। এতে কোনও ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।”
২০০৮ সালেই অবশ্য লক্ষাধিক টাকা খরচ করে পুরাতন সার্কিট হাউসের সংস্কার করেছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক চিত্তরঞ্জন দাশ। তারপর পুরাতন সার্কিট হাউস ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “হেরিটেজ সার্কিট হাউসের কোনও ক্ষতি না করে সাজানো হচ্ছে।”
একদিনের সফরে ২৬ নভেম্বর মালদহে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে মালদহে পৌঁছবেন। দুপুর দু’টোয় মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে প্রশাসনিক বৈঠক করে দুপুর সাড়ে তিনটেয় বৃন্দাবনী মাঠে জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর সড়কপথে রায়গঞ্জে যাবেন। রাতে মুখ্যমন্ত্রী ফের মালদহ ফিরবেন। থাকবেন পুরাতন মালদহের গৌড়ভবনে।
বুধবার দুপুরে পুরাতন সার্কিট হাউসে গিয়ে দেখা গেল কনফারেন্স হলে নতুন করে সিলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পুরাতন ঝাড়বাতি পাল্টে নতুন ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর ঘর দু’টি ভেঙে একটি বড় সুইট করা হচ্ছে। সেই ঘরের বাথরুমে বসানো হচ্ছে বাথটব। পাশাপাশি সার্কিট হাউসের সমস্ত ঘরে পুরোনো টিভি পাল্টে এলসিডি টিভি বসানো হচ্ছে। পুরাতন ডাইনিং টেবিল সরিয়ে শিলিগুড়ি থেকে আনা হচ্ছে হচ্ছে সেগুনকাঠ ও কাচের নতুন ডাইনিং টেবিল। তিন দিনের মধ্যে জেলাশাসক ও মন্ত্রী পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার সার্কিট হাউসের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। |