রাজ্য সরকারি কর্মীদের কোনও মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বকেয়া নেই বলে মঙ্গলবারই বিধানসভায় জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, বুধবার বিধানসভাতেই আরও ৬ শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী যখন ওই ঘোষণা করছেন, তখন তাঁর সামনের আসনেই বসেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
এ দিন বিধানসভায় এসে আচমকাই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ডিএ-র প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “কর্মীদের ২৩% মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে ১৭% মহার্ঘ ভাতা দিয়েছি। আরও ৬% দেওয়া হবে আগামী জানুয়ারি মাসে।”
জানুয়ারিতেই ফের আর এক দফা ডিএ ঘোষণা করার কথা কেন্দ্রেরও। সূত্রের খবর, যার পরিমাণ ৯ থেকে ১১ শতাংশ হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্যের কর্মীদের ডিএ-র ফারাক বর্তমানে ৩৮ শতাংশ। ডিএ বকেয়া থাকার কথা না-মানলেও সিপিএম বিধায়কের প্রশ্নের লিখিত জবাবে এই ফারাকের কথা কবুল করে নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রীও। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৬ শতাংশ ডিএ বাড়লেও জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে ডিএ-র ফারাক দাঁড়াবে অন্তত ৪১%। তা হলে মুখ্যমন্ত্রী ২৩% দেওয়ার কথা বললেন কেন?
এর ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী এ দিন বলেন, বাম সরকার চলে যাওয়ার সময় ২৩% ডিএ বাকি রেখেছিল। তৃণমূল সরকার প্রথমে ১০% ও পরে আরও ৭% ডিএ দিয়েছে। “আরও ৬% ডিএ দেওয়া হচ্ছে। ফলে ২৩% মিটিয়ে দেওয়া হল,” দাবি অমিতবাবুর।
কিন্তু তৃণমূল আমলে কেন্দ্রের সঙ্গে ডিএ-র যে ফারাক তৈরি হল, তার কী হবে? দুই সরকারের ডিএ-র সামঞ্জস্য থাকা যে দরকার, তা এ দিন মেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য দরকার। কিন্তু আমাদেরও তো ক্ষমতা দেখতে হবে।” সামঞ্জস্য না-থাকার জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দিল্লিকে বলেছি, এর পর বেতন কমিশন হলে রাজ্যের কর্মীদের বর্ধিত বেতন ও মহার্ঘ ভাতার টাকা দিয়ে দেব। কিন্তু টাকার দায়িত্ব ওদেরকেই নিতে হবে।”
মঙ্গলবারই ডিএ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দাবির সমালোচনা করেছিল বিরোধী দলগুলি। তাদের বক্তব্য ছিল, ডিএ ঠিক হয় মূল্যবৃদ্ধির সূচক অনুসারে। কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষেত্রে তা আলাদা নয়। ডিএ বকেয়া নেই বলার অর্থ, এ রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধিই হয়নি। আর বুধবার মুখ্যমন্ত্রী এক কিস্তি ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণার পরে সরকারের অবস্থানকে পরস্পরবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “মহার্ঘ ভাতা অনেকটাই বাকি রয়েছে। কিন্তু সরকার এ নিয়ে অপরিষ্কার কথা বলছে।” বকেয়া মেটাতে অর্থ কমিশনের কাছে মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট অনুদান দাবি করেননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ডিএ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা বলেই মনে করছে সিপিএম প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। তাদের নেতা অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিধানসভায় অর্থমন্ত্রীর অসত্য বিবৃতির প্রতিবাদে ও পুরো মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আগামী ২৭ নভেম্বর বিধানসভা অভিযান করব আমরা।” প্রায় একই বক্তব্য রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন ‘নবপর্যায়’-এর নেতা সমীর মজুমদারের, “সরকার যে বলছে অর্থ নেই, তা ঠিক নয়। এরা উল্টোপাল্টা কাজে বেহিসেবি খরচ করছে। শুধু কর্মচারীদের দেওয়ার সময়েই সরকারের টাকা নেই।” কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের নেতা শ্যামল মিত্রেরও দাবি, “পুরো ডিএ দেওয়ার দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।”
অন্য দিকে ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী এবং মঙ্গলময় ঘোষ বলেন, “এত আর্থিক অনটনের মধ্যেও রাজ্য সরকার ৬% ডিএ ঘোষণা করায় অভিনন্দন। তবে আমরা ডিএ ঘোষণার স্থায়ী আদেশনামা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।”
|