ঋণ আদায়ে হাত পাকিয়ে স্বল্প সঞ্চয়ে সচ্ছল সমবায়
মবায় আন্দোলন দানা না বাঁধায় এ রাজ্যে গরিব চাষিদের ভূমিবণ্টন কার্যত অর্থহীন হয়ে গিয়েছে। আবার বাণিজ্যিক সাফল্যে সমবায় কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তার নজির আজও রেখে চলেছে গুজরাতের তিন লক্ষ মানুষের দুগ্ধ সমবায় অমূল।
ব্যাঙ্কিংয়ের মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রে যে সমবায়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, তা কিন্তু প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সমবায় সপ্তাহে (১৪-২০ নভেম্বর) পুরুলিয়ার জয়পুরে একটি সমবায় রাজ্যের সেরার শিরোপা পাওয়ায়। গত কয়েক বছর ধরে শেয়ার বাজার যখন ক্রমাগত অস্থির, ওই সমবায় তার সদস্যদের বছরে ১২ শতাংশ হারে লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড) দিয়ে চলেছে। সদস্যসংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন হাজার। আমানতকারী ১৩ হাজার। জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় আট কোটি টাকা, যার বেশির ভাগটাই স্বল্প সঞ্চয়।
বস্তুত, গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের থেকে আমানত সংগ্রহ এবং তাঁদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি এখনও প্রয়োজনের তুলনায় বহু পিছিয়ে। সেই ফাঁক ভরাট করার সুযোগ রয়েছে সমবায়গুলির। এ বারের সেরা জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি যেমন ১৯৭৬ সালে কাজ শুরুই করেছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহযোগী হিসেবে। তবে কৃষিঋণ দেওয়া নয়, বরং ঋণ আদায়ে দক্ষতাই তাদের প্রাথমিক ভাবে সাফল্য এনে দেয়।
গত শুক্রবার কলকাতার মহাজাতি সদনে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে তাদের সম্মানিত করা হয়।
পুরুলিয়া জেলার সমবায় সমিতি সমূহের নিবন্ধক (এআরসিএস) সুতনুকা চক্রবর্তীর কথায়, “ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা, সমিতির সদস্যদের সমবায় পরিচালনায় দক্ষতা ও অংশগ্রহণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ের স্বীকৃতিতেই এই পুরস্কার। এই প্রথম পুরুলিয়া জেলার কোনও সমবায় রাজ্যস্তরে সেরার সম্মান পেল।” পুরুলিয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “কৃষকদের ঋণ দেওয়া থেকে আদায় করা, সচেতন করার কাজে ওরা এগিয়ে। এই সম্মান ওদের প্রাপ্য।
শুধু ব্যাঙ্ক হিসেবেই নয়, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে সমবায়ের যে সহায়ক ভূমিকা থাকে, তা-ও সফল করে দেখিয়েছে সমবায়টি। জয়পুর ব্লকের ১৪৩টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে কাজ করছে তারা। গোষ্ঠীগুলির মোট ১৭০০ সদস্যের প্রত্যেককে কেন্দ্রীয় সরকারের আম আদমি বিমা যোজনার আওতায় এনেছে। এ ক্ষেত্রে, সাধারণ ভাবে মৃত্যু হলে ৩০ হাজার টাকা আর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে মৃতের পরিবার ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কাজ করার ইচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার একটা সমবায়কে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তা ওরা তা দেখিয়ে দিয়েছে।”
জয়পুরের ওই সমবায় সমিতির ম্যানেজার সুধীর হাজরা জানান, গোড়ার দিকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে যে সব কৃষক ঋণ নিতেন, সমবায়টি তাঁদের ‘গ্যারান্টার’ থাকত। সমবায়ের লোকজন সেই ঋণ আদায় করতেন। ঋণ পরিশোধ হলে সমবায় সামান্য পারিশ্রমিক পেত। না হলে, ঋণের বোঝা চাপত সমবায়ের ঘাড়ে। এই ভাবে কাজে হাত পাকিয়ে ১৯৯৮ সালে তাঁরা নিজেদের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করেন। সুধীরবাবুর হিসেবে, “এখন আমাদের মোট আমানতের মধ্যে স্বল্প সঞ্চয়ের পরিমাণই কমবেশি ৮০ শতাংশ। তাতেই মূলধন ১৫ কোটিতে পৌঁছেছে।”
এখন এলাকার মানুষের পেনশন, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, কৃষি পেনশন ইত্যাদিও ওই সমবায়ের ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই দেওয়া হচ্ছে। বেতন তুলছেন দু’শোরও বেশি প্রাথমিক শিক্ষক। গ্রাহকদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দিতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করলে বছরে ১২০০ টাকা এককালীন স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পরিষেবার পাশাপাশি প্রচার ও জনসংযোগে জোর দিতে এলাকার কয়েকটি ফুটবল ক্লাবকে বার্ষিক এককালীন অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তাদের খেলোয়াড়েরা ব্যাঙ্কের লোগো লাগানো জার্সি পরে ম্যাচ খেলেন।
জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ মাঝি বলেন, “চাষ করার জন্য সহায়তা তো আছেই, ছোট ব্যবসা করার জন্যও এই সমবায় আমাকে সাহায্য করেছে।” স্থানীয় আলকুশা গ্রামের কৃষিজীবী অনিল মাহাতোর কথায়, “এই সমবায় আমাদের বন্ধু।”
সুতনুকাদেবীর কথায়, “জয়পুরের এই সম্মানে অন্য সব সমবায় সমিতিও যদি কাজে উজ্জীবিত হয়, সেটাই হবে আসল পাওয়া।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.