শুক্রবার ফের বৈঠকে বসছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিচালন পর্ষদ। সংস্থাকে বিআইএফআর-এ (বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন) পাঠানো হবে কি না, মূলত তা নিয়েই আলোচনা হবে সেখানে।
প্রথমে কথা ছিল, পেট্রোকেমে রাজ্য সরকারের শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা হবে শুক্রবারের ওই বৈঠকে। কিন্তু আইনি জটে সেই প্রক্রিয়া এখন আটকে গিয়েছে। তাকে ছাপিয়ে এখন সামনে চলে এসেছে ধুঁকতে থাকা সংস্থাকে বিআইএফআরে পাঠানো-না-পাঠানোর প্রশ্ন।
হলদিয়া পেট্রোকেমের আর্থিক স্বাস্থ্য তথৈবচ। হিসাব নিরীক্ষকের মতে, গত আর্থিক বছরেই সংস্থার ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল ১,১৪৮ কোটি ৯০ লক্ষের উপরে। তার পরের পাঁচ মাসে তা আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বেড়েছে। আগের অর্থবর্ষেই সরকারি ভাবে মেনে নেওয়া হয়েছিল যে, ইতিমধ্যেই নিট সম্পদের
অর্ধেক (৫০%) খেয়ে নিয়েছে লোকসান। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, খাতায়-কলমে সংস্থার শেয়ারের দাম (বুক ভ্যালু) এখন শূন্য। শেয়ার-পিছু লোকসান ৬ টাকা।
আর্থিক ভাবে বেহাল এই সংস্থার ঘাড়ে তার উপর চেপে রয়েছে একের পর এক মামলার বোঝা। সাম্প্রতিকতম আইনি ঝামেলা আবার শুরু হয়েছে পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার নিলামের পর।
হলদিয়া পেট্রোকেমে নিজেদের অংশীদারি বিক্রির জন্য নিলাম ডেকেছিল রাজ্য। সেখানে একমাত্র দর দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি)। গত ১০ অক্টোবর তাদের দেওয়া সেই দর গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য। জানিয়েছিল, আইওসি-র হাঁকা দরে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী যদি ওই শেয়ার কিনে নিতে রাজি না-হয়, তা হলে রাজ্য সরকারের হাতে থাকা সাড়ে ৬৭ কোটি ইক্যুইটি শেয়ারের মালিক হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিই।
কিন্তু নিলামের আগে থেকেই চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বক্তব্য ছিল, পেট্রোকেমের ওই সাড়ে ৬৭ কোটি শেয়ারের মধ্যে ১৫.৫ কোটি শেয়ারের মালিকানা কার, তা নিয়ে এখনও মামলা ঝুলে রয়েছে। তাই ওই শেয়ার নিজের বলে নিলামে চড়াতে পারে না রাজ্য। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, সে ক্ষেত্রে মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ বিরোধের ইতিহাসে আরও কয়েকটি পাতা যুক্ত হবে। আরও এক পোঁচ কালি লাগবে মামলার। সেইমতো নিলামের ফল ঘোষণার পরই ওই বিতর্কিত শেয়ার বিক্রির বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। ফলে থমকে গিয়েছে শেয়ার হাতবদলের প্রক্রিয়া। আইওসি-ও জানিয়েছে, এ নিয়ে আদালতের কথাই তারা মেনে চলবে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে মালিকানা হাতবদলের প্রক্রিয়া এ ভাবে থমকে যাওয়ার কারণেই হয়তো বিআইএফআর নিয়ে এই ভাবনাচিন্তা। বিআইএফআরে রুগ্ণ হয়ে পড়া সংস্থার জন্য প্রথমে পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তা-ও সফল না-হলে, তখন সুপারিশ করা হয় সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে দাবি, বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হওয়া মানেই যে পেট্রোকেমকে বিআইএফআরে পাঠানোর চিন্তাভাবনা পাকা, এমনটা নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সব দিক খতিয়ে দেখার পরই। |