নতুন পঞ্চায়েত গঠনের পরে তিন মাস হতে চলল, কিন্তু এখনও জেলার কোনও পঞ্চায়েতেই গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়া হয়নি। ফলে গ্রামগুলির উন্নয়নের কাজ ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত কর্তারাও কোন গ্রামে কী কাজ করতে হবে, তার দিশা পাচ্ছেন না। তবে পঞ্চায়েত প্রধানেরা জানান, জেলা পরিষদ থেকে নির্দেশ এলেই গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠনে তৎপর হবেন তাঁরা।
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে একটি করে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থাকে। পঞ্চায়েতের কার্যকাল যতদিন, উন্নয়ন সমিতির কাজের মেয়াদও ততদিন। জেলায় ২৭৭টি পঞ্চায়েতে ৩৯৭২টি গ্রাম সংসদ রয়েছে। সংসদগুলি সমিতি গঠনে দেরি করায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে পঞ্চায়েতের কর্মীরা সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। তদারকির অভাবে কাজের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
কী কাজ এই গ্রাম উন্নয়ন সমিতির? মূলত গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে পঞ্চায়েতকে পরামর্শ দেওয়া এবং কাজের তদারকি করা সমিতির কাজ। গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি এই কমিটি গ্রামসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করার চেষ্টা করে। কমিটির সদস্যেরা গ্রামবাসীর হয়ে পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আবার পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়েও গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রচার করেন। উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি, ১০০ দিনের কাজে লেবার বাজট তৈরি এবং গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা রূপায়ণ করার দায়িত্বও এই সমিতির। এছাড়া খেলাপি কর ও কর দেন না এমন বাসিন্দাদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রকাশ্যে টাঙানোও ওই সমিতির কাজ।
রাজ্যে পঞ্চায়েত আইন সংশোধন করে ২০০৪ সাল থেকে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়। গোড়ায় গ্রাম সংসদের সভায় নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতি গড়া হত। কিন্তু কয়েক বছর পরে দেখা যায়, গ্রাম সংসদে যে রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য তারাই জোর করে গ্রামোন্নয়ন সমিতি গড়ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলও বাধছে। সমস্যা এড়াতে ২০০৭ সাল থেকে নিয়ম করা হয়, মনোনয়নের মাধ্যমে গ্রামোন্নয়ন সমিতি গড়া হবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের পাশাপাশি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও সমিতিতে থাকবেন। এ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ জনের সমিতি গঠন করা যায়।
এ বছর গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠনে দেরি দেখে বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি সিপিএমের উদয় সরকার বলেন, “উন্নয়নের কাজকে তৃণমূল স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়েছিলাম। শুধু পঞ্চায়েত সদস্য নয়, গ্রামবাসীর মতকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই সমিতি গঠন। কিন্তু বর্তমান সরকার মানুষের মতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেই সমিতি গঠন দেরি করছে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের দেবু টুডুর অবশ্য দাবি, “পুরনো নিয়ম মেনে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই উন্নয়ন সমিতি গঠনের কাজ শুরু হবে।”
গ্রাম উন্নয়ন সমিতি না থাকায় কী সমস্যা হচ্ছে? পঞ্চায়েত কর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়, কোন প্রকল্প কোথায় হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সমিতির। সে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া স্থানীয় মানুষ পঞ্চায়েতর কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজ চাইচেন, সে ব্যাপারেও অন্ধকারে থাকছে পঞ্চায়েত। জেলার এক পঞ্চায়েত কর্তা বলেন, “১০০ দিনের কাজে সরবরাহকারী সংস্থা গ্রামে ইমারতি দ্রব্য ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে। উন্নয়ন সমিতি না থাকায় ওই উপকরণ চুরি গেলেও কিছু বলার থাকছে না।” গ্রাম উন্নয়ন সমিতি সক্রিয় থাকলে যে কাজ ভাল হয়, দলমত নির্বিশেষে তা স্বীকার করে নিয়েছেন সবাই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমিতির সদস্যরা কখনও চাঁদা তুলে, কখনও স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে, এলাকার নানা কাজও করেন। যেমন, কেতুগ্রামের এরিহাপুর গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন আটকে থাকা চার কিলোমিটার রাস্তা স্বেচ্ছাস্রম দিয়ে তৈরি করেছেন কয়েক বছর আগে। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছ, সমিতির সদস্যদের নজরদারি দুর্নীতি রুখে দিয়েছে।
বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা জানান, জেলা পরিষদ থেকে নির্দেশ পেলেই তাঁরা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠনে উদ্যোগী হবেন। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) হৃষিকেশ মোদি বলেন, “ধীরে ধীরে সমস্ত গ্রাম সংসদেই গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
|
গ্রাম উন্নয়ন সমিতির কাজ |
• পঞ্চায়েতকে পরামর্শ দেওয়া ও কাজের তদারকি করা।
• গ্রামসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি গ্রামবাসীদের নিয়ে কার্যকর করার চেষ্টা করা।
• উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি।
• ১০০ দিনের কাজের লেবার বাজেট তৈরি করা ও গ্রামবাসীদের নিয়ে তা রূপায়ণ করা।
• গ্রামবাসী ও পঞ্চায়েতের মধ্যে যোগাযোগ করা। |
|