শ্রীকৃষ্ণের লীলা মাহাত্ম্যের অন্যতম রাস। আর সেই রাসকে কেন্দ্র করে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নাগড়, পঁচেটগড় ছাড়া নাচিন্দাতেও ভক্তি রসের প্রাচুর্যে মানব মিলন উৎসবে মেতে উঠেন সর্ব শ্রেণির মানুষ।
ময়নাগড়ের রাসমেলা জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম। এখানকার রাসের অন্যতম আকর্ষণ কার্তিক পূর্ণিমার মধ্যরাতে নৌ-রাসযাত্রা। হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয়। দু’টি বৃহৎ পরিখা দিয়ে ঘেরা ময়নাগড়ের রাজপরিবারের গোবর্ধন বাহুবলীন্দ্র ১৫৬১ সালে কালিদহের তীরে কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউর মন্দিরে প্রথম রাসমেলা শুরু করেন। সেই থেকে বাহুবলীন্দ্র পরিবারের উদ্যোগে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পরের বছর অর্থাত্ ১৯৭০ সাল থেকে স্থানীয় মেলা কমিটির উদ্যোগে এই রাসমেলা হয়ে আসছে। |
বাহুবলীন্দ্র পরিবারের প্রবীণ সদস্য প্রণব বাহুবলীন্দ্রের কথায়, “ময়নার রাসের অন্যতম ও প্রধান আকষর্ন নৌ-রাসযাত্রা। রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ময়নাগড়েই এমন আয়োজন হয়।” একাদশীর ভোর থেকেই এখানকার রাস উৎসব আরম্ভ হয়। পরিখার জলে দু’টি নৌকা জোড়া দিয়ে ভড় তৈরি করে তার উপর মন্দির তৈরি করা হয়। সেই ভাসমান মন্দিরে শ্যামসুন্দর জিউ, মদনমোহন ও তাঁদের রাইরা ছাড়াও কানাই-বলাই মিলে রাস যাত্রার সূচনা করেন। সঙ্গে আরও দু’টি নৌকায় শঙ্খবাদিকা ও কীর্তনের দল। সারিবদ্ধ ভাবে সেই শোভাযাত্রা কালিদহ ও মাকড়দহ— দুই পরিখার জলে ভেসে থাকে।
নৌ-রাস যাত্রার অপরূপ সেই দৃশ্য দেখতে নভেম্বরের কুয়াশাভেজা রাত যত গভীর হয়, ততই পূণ্যার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। রাস উপলক্ষে বসে মেলার আসর। মেলায় হাল ফ্যাশনের পসরা থেকে মনোহারী দ্রব্য, তেলেভাজা থেকে ময়নার বিখ্যাত কদমা— হরেক রকম সামগ্রী মেলে। বসে ম্যাজিক, চিড়িয়াখানা আর যাত্রার আসরও। |
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস ও কৌশিক মিশ্র। |