|
|
|
|
|
থিমের লড়াইয়ে কার্তিকও
|
রানা দত্তগুপ্ত |
কারও বয়স দেড়শো তো কোনওটা তারও বেশি। কেউ আবার সদ্য পঞ্চাশ পেরিয়েছে! পুরনো ও নতুনের মিশেল বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পুজোকে এক বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। বাঁশবেড়িয়া-সাহাগঞ্জ পুজো কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর এই পুজো হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টা পুজো। পুজো চলে চার দিন ধরে। প্রতিমা তো বটেই, মণ্ডপ ও আলোকসজ্জায় পুজো কমিটিগুলি একে অপরকে টেক্কা দিতে ব্যস্ত। এই চার দিন বাঁশবেড়িয়া যেন এক ‘মায়ানগরী’।
|
|
কার্তিক পুজো শুনেই কাটোয়ার কথা মনে আসে অনেকের। কিন্তু কাটোয়ার কার্তিকের সঙ্গে বাঁশবেড়িয়ার বিস্তর ফারাক। বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক এক আলাদা ঐতিহ্য বহন করে। এখানে কার্তিকের নানা রূপ দেখা যায়— কোথাও সে জামাই, কোথাও রাজা, আবার কোথাও উপজাতি সম্প্রদায়ের সাজে উপস্থিত! আছে জিলিপি কার্তিকও— কার্তিকের হাতে ঝোলানো থাকে বিশাল বড় আকারের জিলিপি।
কার্তিক পুজো মানেই যে শুধু তাঁর একার দর্শন মিলবে তা ঠিক নয়। তাঁকে সঙ্গ দিতে হাজির থাকেন গণেশ, শিব, নারায়ণ, ষড়ানন, সন্তোষী মা, কমলা মাতা, রাধাকৃষ্ণ, নটরাজ, এমনকী তারামা-ও। বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পুজোর এই প্রতিমা বৈচিত্রই দর্শনার্থীদের বার বার টেনে আনে এখানে।
এ বছর পুজো কমিটিগুলি থিম ও ঐতিহ্যের উপর জোর দিয়েছে। কোথাও মন্দিরের আদলেও মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। পুজোর সূচনা ১৬ নভেম্বর, বিসর্জন হবে ১৯ নভেম্বর। |
|
কোথায়, কী রূপে কার্তিক |
• বাঁশবেড়িয়া কুণ্ডুগলির এ বছরের থিম ‘একাল-সেকাল’। ৬০ বছরে পড়ল এই কমিটির পুজো। এখানে প্রতিমা নটরাজ। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার হয়েছে চাটাই, ঝুড়ি, বেত, কুলো ও ঝিনুক। বাংলার কুটির শিল্পকে মানুষের কাছে তুলে ধরতেই তাদের এই উদ্যোগ।
• কিশোর সঙ্ঘ আবার ‘গ্রামীণ দেবালয়’কে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে। গ্রাম বাংলা ও কৃষক শ্রেণিকে সাধারণ মানুষ যাতে ভুলে না যায় তারই বার্তা পৌঁছে দিতে এই আয়োজন। পুজোর বয়স ৫৯। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে খড়, ধানের শিষ ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ও মান্না দে’র স্মরণে মণ্ডপের সামনে বসানো হয়েছে তাঁদের মূর্তি।
• খামারপাড়া সুরকি মিলের ‘আমরা কজন’ পুজো কমিটির পুজোর থিম এ বার ‘নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ’। বর্তমান সমাজে নিপীড়িত ও নির্যাতিত নারীরা কী ভাবে রুখে দাঁড়াচ্ছে তারই প্রতিফলন অদ্ভুত ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। কার্তিক এখানে রাজার বেশে।
• জুনিয়র বালক সঙ্ঘের পুজোর বয়স ৪৮ বছর। আফ্রিকার জুলু উপজাতিদের জীবনযাত্রা ও বাসস্থান নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে খড়, বাঁশ ও বিভিন্ন চালচিত্রের মাধ্যমে। এখানে প্রতিমা নারায়ণ।
• সরকারি পল্লির মিতালী সঙ্ঘে গেলে মনে হবে ক্ষণিকের জন্য দিল্লি পৌঁছেছেন। পুরো ‘পার্লামেন্ট’কেই তুলে এনে হাজির করেছে তারা।
• আবার জামাইগলির অভিযাত্রী সঙ্ঘে গেলেই দেখা যাবে কৈলাস পর্বতের মাথায় বসে ধ্যানমগ্ন শিব। শিবের বিশাল মূর্তি পাহাড়ের মাথায়। জাগরনী যুবক সঙ্ঘের মণ্ডপসজ্জায় রয়েছে মাটির জালা, হাড়ি, ঘণ্টা, পোড়া মাটির মূর্তি। অন্য দিকে, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ এ বার মণ্ডপ তৈরি করেছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদলে।
• দিল্লির বিড়লা লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে কাটাপুকুর ইয়ং স্টার। এ বার ৩৩ বছরে পড়ল এই কমিটির পুজো। থিমের ছোঁয়ায় পিছিয়ে নেই মহাকালীতলার কিশোর বাহিনি ও বাঁশবেড়িয়া সংস্কৃতি পরিষদ। বাংলার ‘পট’কে সুন্দর আঙ্গিকে ফুটিয়ে তুলেছে কিশোর বাহিনি। সংস্কৃতি পরিষদ আবার তুলো ব্যবহার করেছে তাদের মণ্ডপসজ্জায়। দক্ষিণপাড়া লেনের প্রতাপ সঙ্ঘ ও নেতাজি সঙ্ঘের মণ্ডপও নজর কাড়ার মতো। |
|
প্রশাসনিক নজরদারি |
চার দিন পুজোকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে বাঁশবেড়িয়া পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুজোর ক’টি দিন জনজোয়ার সামলাতে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। ব্যবস্থা থাকে স্বাস্থ্য শিবিরেরও। এ বছর পুজো উপলক্ষে ৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও ৪টি স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর মোট ৭৫টি কমিটিকে পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শোভাযাত্রার জন্য অনুমতি মিলেছে ৩৫টি পুজো কমিটির। |
নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|
|