স্ত্রীকে উন্মত্ত ভাবে দা দিয়ে কোপাচ্ছিল স্বামী। চিৎকার শুনে মাকে বাঁচাতে ছুটে আসে মেয়ে। বাবার হাতে আক্রান্ত হয় সে-ও। মারা গিয়েছে মা-মেয়ে দু’জনেই। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সেলিম গাজি নামে ওই ব্যক্তিকে। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাসনাবাদ থানার ভবাণীপুর ২ পঞ্চায়েতের সজনেতলা গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর তিরিশ আগে সেলিমের সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই সাংসারিক অশান্তি সহ্য করতে হয়েছে সুফিয়া বিবিকে (৫০)। বিবাদ মেটাতে বহু বার গ্রামে সালিশিও বসে। আদালতের দ্বারস্থও হয়েছিলেন সুফিয়া। কিন্তু তাতে স্বামীর অত্যাচার কমেনি বলে জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। সুফিয়া-সেলিমের তিন ছেলেমেয়ে। রিনা, হিনা এবং সাহিদুর জামান। সংসারে টাকা-পয়সা কিছুই দিত না সেলিম। উল্টে মারধর করত সকলকে। স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আছে, এই অভিযোগ তুলে দিন দিন অত্যাচারের মাত্রাও বাড়িয়ে চলেছিল। বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিনা বাড়ি থেকে পালান আগেই।
মেরে রিনা পরভিনের (২৫) বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে কিছু দিন ধরেই তাগাদা শুরু করেছিলেন সুফিয়া। বাবার কর্তব্য পালন তো দূরের কথা, রিনার বিয়ের কথা বলায় অত্যাচার আরও বেড়েছিল সুফিয়ার উপরে। শুক্রবার ভোরে দা নিয়ে খেজুর গাছ কাটতে বেরিয়েছিলেন সেলিম। বেলা দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন। ছেলে সাহিদুর সে সময়ে বাড়ি ছিল না। বাড়ির পাশেই পুকুরে স্নান সারতে গিয়েছিলেন রিনা। স্নান সারার আগে গায়ে মাখার তেল চায় সেলিম। সংসারে টাকা না দিলে তেল কেনা হবে কোথা থেকে, সেই প্রশ্ন তোলেন স্ত্রী। তাতেই আগুনে ঘি পড়ে।
অভিযোগ, গাছ কাটার দা নিয়ে স্ত্রীর উপরে চড়াও হয় সেলিম। মায়ের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন রিনা। তাঁকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে সেলিম। এরপরে ছেলেকে খুন করবে বলে দা হাতে হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে বেরিয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে লোকজন জড়ো হয়েছে বাড়ির সামনে। সেলিমের উগ্র মূর্তি দেখে কেউ অবশ্য তার ধারে-কাছে ঘেঁষার সাহস করেনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান সুফিয়া। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান রিনা।
খবর পেয়ে সেলিমকে খুঁজতে বেরোয় পুলিশ। শোনা যায়, বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টায় আছে সে। সন্ধের দিকে সাদা পোশাকের পুলিশ ইছাপুর গ্রামে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে দেখে সেলিমকে। তাকে ধরতে গেলে প্রথমে দা হাতে তেড়ে এসেছিল। পুলিশ পাল্টা রিভলভার উঁচিয়ে ধরায় রণে ভঙ্গ দেয়। গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।
সাহিদুর বলেন, “খেজুর গাছ কেটে যা রোজগার করত বাবা, তার কিছুই দিত না সংসারে। টাকা চাইলে মারধর করত আমাদের। বাবার ভয়েই দিদি বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। এ দিন আমাকে সামনে পেলেও খুন করত।” ধরা পড়ার পরে সে কথা অস্বীকারও করেনি সেলিম। বলে, “ভেবেছিলাম, ওদের তিন জনকেই খুন করব।” |