চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
ঐতিহাসিক ও সামাজিক তাৎপর্য নিয়েই দেবীর রূপায়ণ
ম্প্রতি ‘আমার দুর্গা’ শিরোনামে সম্মেলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল অ্যাকাডেমিতে। পরিকল্পনা করেছেন গৌতম বাগচি। ৩৯ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে তিন জন ভাস্কর। এ উপলক্ষে একই শিরোনামে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে আর জি বি পাবলিশার্স থেকে গৌতম বাগচিরই সম্পাদনায়। প্রতিটি ছবি ও ভাস্কর্যের প্রতিলিপি ছাড়াও সুমুদ্রিত এই গ্রন্থটিতে আছে দুর্গা সম্পর্কে প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্ব অনুভবের কথা। এ ছাড়া মনসিজ মজুমদার, শম্ভুনাথ চক্রবর্তী ও বর্তমান প্রতিবেদক-সহ তিন জন লেখক লিখেছেন দুর্গোৎসব ও দুর্গামূর্তির পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক তাৎপর্য নিয়ে।
আজকের দুর্গামূর্তির রূপায়ণের ইতিহাস সুদীর্ঘ। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্যে হরপ্পা সভ্যতার টেরাকোটায় সম্ভবত প্রথম দেখা গিয়েছিল মাতৃমূর্তির রূপায়ণ। সিংহবাহিনী দুর্গামূর্তির প্রথম দেখা মেলে প্রথম চন্দ্রগুপ্তের মুদ্রায় ৩০৫ থেকে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত নানা ভাবে রূপান্তরিত ও রূপায়িত হয়েছে এই মূর্তি। বাংলার প্রাক্-আধুনিক শিল্পে টেরাকোটা মন্দির ভাস্কর্যে, ঊনবিংশ শতকের অনামা শিল্পীদের তেলরঙের ছবিতে, কালীঘাটের পট বা বটতলার ছাপচিত্রে দুর্গা-রূপায়ণের যে বৈচিত্র, তা আজও আমাদের মুগ্ধ করে।
শিল্পী: বলাকা দাস (গুপ্ত) শিল্পী: সুজাতা চক্রবর্তী
পরিশীলিত লৌকিক রূপায়ণের অন্যতম দৃষ্টান্ত রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিটি। শুভ্র বৃত্তীয় প্রেক্ষাপটে ছন্দিত রৈখিক বিন্যাসে তিনি এঁকেছেন সিংহবাহিনী দুর্গার রূপ। গণেশ হালুই-এর রূপায়ণটিতে লৌকিকের সঙ্গে মিশেছে ধ্রুপদী বোধ। রবীন মণ্ডলের ছবিটি পরিচিত দুর্গামূর্তি থেকে আলাদা। আদিমতার সঙ্গে অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিক মিলিয়ে তিনি এঁকেছেন এক মানবীমূর্তি। মানবীই দেবী এই ধারণার প্রকাশ দেখা যায় অনেক আধুনিকতাবাদী শিল্পীর মধ্যেই। প্রকাশ কর্মকারের ছবিটি তারই একটি দৃষ্টান্ত। তাঁর রৈখিক রূপায়ণটিতে শুধুমাত্র তৃতীয় নয়ন এঁকে তিনি মানবীকে দেবী করতে চেয়েছেন। কিন্তু এতটা সরলীকরণ করলে পুরাণকল্পের কোনও তাৎপর্য থাকে না। সনৎ কর দেবীকে সনাক্ত করেছেন দারিদ্রক্লিষ্ট অবহেলিত নারীর মধ্যে। আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকে পরম্পরাকে রূপায়িত করেছেন ধীরাজ চৌধুরী, অমিতাভ সেনগুপ্ত, জহর দাশগুপ্ত, রূপচাঁদ কুণ্ডু, তাপস সরকার, বিপ্লব সাহা, শ্যামল মুখোপাধ্যায় ও ভবতোষ সুতার। ভবতোষের রচনাটি ড্রয়িংধর্মী। সুজাতা চক্রবর্তীও লৌকিককে বিশ্লিষ্ট করেছেন আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকে।
আদিত্য বসাকের রচনাটিতে দুর্গার ধ্রুপদী রূপেরই রূপান্তরিত প্রকাশ ঘটেছে। এই দেবী আমাদের ঘরোয়া মাতৃরূপ বা কন্যারূপ নয়। নব্য-ভারতীয় ঘরানা থেকে রূপান্তরিত আঙ্গিকের বহুমুখী প্রকাশ দেখা যায় মনোজ দত্ত, নীলিমা দত্ত, স্বপন কুমার পোল্লে, সুব্রত চৌধুরী, চঞ্চল মুখোপাধ্যায়, পার্থ ভট্টাচার্য, অতীন বসাক, তপন পাঠক, গৌতম মুখোপাধ্যায়, সুব্রত ঘোষ প্রমুখ শিল্পীর রচনায়।
একই আঙ্গিকে কাজ করেছেন বলাকা দাস (গুপ্ত)। তাঁর অলঙ্কৃত ও সূক্ষ্ম বুনোট সমৃদ্ধ ত্রিশূল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা যৌবনবতী দেবীমূর্তিটি পরম্পরাকে আধুনিকতায় অন্বিত করার সমৃদ্ধ দৃষ্টান্ত। এর থেকেও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ তাঁর ‘দেবীর বাহন’ শীর্ষক পাঁচটি রচনা। দুর্গার সিংহ, লক্ষ্মীর প্যাঁচা, সরস্বতীর হংস, গণেশের ইঁদুর ও কার্তিকের ময়ূর রূপায়িত করেছেন তিনি। প্রতিটি বাহনের মুখের ভিতরই সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন সেই দেবী বা দেবতার মুখটিকে। সিংহের মুখের ভিতর মিশে থাকে দুর্গার মুখ। প্যাঁচার মুখে মিলিয়ে দেন লক্ষ্মীকে। পা দু’টিও হয়ে ওঠে লক্ষ্মীরই পায়ের মতো। অঞ্জন গুপ্তের রচনাটিও পটচিত্রধর্মী।
স্বাভাবিকতার আঙ্গিকে দেবীকে মানবীমূর্তিতে অভিষিক্ত করেছেন সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, শেখর কর, সুব্রত দাস ও সুকান্ত দাস। দীপ্তিশ ঘোষ দস্তিদারের রচনাটিকে বলা যেতে পারে স্বাভাবিকতাবাদী ধ্রুপদী রূপায়ণ। দ্বিজেন গুপ্ত মানবীকে দেবীত্বে অভিষিক্ত করেছেন।
রামকুমার মান্না অর্ধশায়িতা মাতৃমূর্তিকে দেবীত্বে উদ্বোধিত করেছেন। মিনু মান্নার টেরাকোটা অসামান্য বৈভবময়। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন প্রদীপ রক্ষিত, ঋতব্রত ভট্টাচার্য, উমা রায়চৌধুরী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.