বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নোনা জলে মিষ্টি-মাছ বাঁচাতে
হদিস বিশ্ববিদ্যালয়ের

মিষ্টি জলের গলদা চিংড়ি, জাপানি পুঁটি বাড়ছে জলাশয়ে নোনা জল ঢুকলেও। আবার নোনা জলের বাগদা চিংড়িও বাঁচছে মিষ্টি ও নোনা জলের মিশেলে। ঘূর্ণিঝড় আয়লার জেরে নোনা জল পুকুরে ঢুকে মরেছিল লক্ষাধিক মিষ্টি জলের মাছ। মাথায় হাত পড়েছিল মাছচাষিদের। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ঠেকে শিখে আপাত অসহনীয় জলেও কী করে বিভিন্ন মাছ বাঁচানো যায়, কোন মাছের চাষ করলে আয়লার মতো বিপর্যয়ের পরেও লাভের আশা করতে পারেন চাষিসে দিশা দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়।
সুন্দরবন এলাকায় মিষ্টি জলের রুই, কাতলা, জাপানি পুঁটি, গ্রাস-কার্প, কই, ট্যাংরা, গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। ২০০৯-এ আয়লার সময় নদীবাঁধ লাগোয়া অধিকাংশ পুকুরই নোনা জলে প্লাবিত হয়েছিল। সম্প্রতি ঝড়খালিতে যেন হয়ে গেল তারই পুনরাবৃত্তি। বাঁধ লাগোয়া ছোট ছোট মিষ্টি জলের পুকুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পাম্প করে ফেলা হচ্ছিল নদীর নোনা জল। ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বলতে শুরু করেন, “এটা কী হচ্ছে? এ ভাবে মিষ্টি জলের পুকুরে নোনা জল ফেললে তো সব মাছই মরে যাবে!”
নোনা জলের মাছ মুক্তাগাছা। মিষ্টি ও নোনা জলের মিশেলে মাছ
বাঁচানোর গবেষণায় ভাল ফল মিলেছে এই মাছ থেকে।—নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু বলছেন অন্য কথা। জানাচ্ছেন, আয়লা-পরবর্তী অবস্থায় সুন্দরবন এলাকায় জলে লবণের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। ‘ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পর্ষদ’ (আইসিএআর) এবং ‘জাতীয় জলবায়ু সহনশীল কৃষি উৎসাহ’ (এনআইসিআরএ)-র আর্থিক সহায়তায় বাসন্তী ও সাগর ব্লকে তাঁরা যে গবেষণা শুরু করেছেন, তাতে মিষ্টিজলের পুকুরে নোনাজল ফেলার পরে কয়েকটি মাছের লবণ সহনশীলতা পরীক্ষা করা হয়েছে।
দেখা গিয়েছে, গলদা চিংড়ির সহনশীলতা সবচেয়ে বেশি। মিষ্টি জলের পুকুরে নির্দিষ্ট মাত্রায় নোনা জল ফেলার পরে গলদা চিংড়ি ও জাপানি পুঁটি মাছের বৃদ্ধি অন্য মাছেদের তুলনায় বেশি হয়েছে। দেখা গিয়েছে, একই অবস্থায় কইমাছও খুব সতেজ রয়েছে।
প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চন্দ্রশেখর চক্রবর্তীর দাবি, “গলদা ও জাপানি পুঁটি প্রায় মিষ্টিজলের মাছ। কিন্তু মিষ্টি জলের জলাশয়ে নোনা জল ফেলার পরে ওই দুই প্রজাতির মাছ প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা গিয়েছে, ওই দুটি প্রজাতির মাছের লবণ সহ্য করার ক্ষমতা সব চেয়ে বেশি। জলাশয়ে নোনাজল থাকা সত্ত্বেও রুই, কাতলা, মৃগেল, সরলপুঁটি, মাগুরের মতো মাছের বৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্য।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিষ্টি ও নোনা জলের মিশেলে মাছ চাষ নিয়ে এই গবেষণায় ভাল ফল দেখা গিয়েছে নোনা জলের পায়রাচাঁদা, কাৎকই, মুক্তাগাছা, নোনা ট্যাংরার মতো মাছের ক্ষেত্রে। ঝড়খালির এক মাছচাষির ভেড়িতে মিশ্র জলে ভাল ফলন দেখা গিয়েছে মূলত নোনা জলের মাছ বলে পরিচিত বাগদা চিংড়ির। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সৌরভ দুবে, রমন ত্রিবেদীরা বলেন, “গবেষণায় ভাল ফল পাওয়ার পরে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তের মাছচাষিদের কর্মশালার মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। কোন মাছ চাষ করলে আয়লার মতো বিপর্যয় হলেও চাষি পথে বসবেন না, সেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
আয়লার ধাক্কায় নোনা জল পুকুরে ঢুকে মাছ মরেছিল বাসন্তীর সরবেড়িয়ার মাছচাষি গফফর মোল্লা এবং ঝড়খালি পঞ্চায়েতের প্রধান, পেশায় মাছচাষি দিলীপ মণ্ডলের। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মশালায় যোগ দেওয়ার পরে আশার আলো দেখছেন তাঁরাও। বলছেন, “সুন্দরবনে প্রায়ই প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়। সেখানে কোন মাছ চাষ করলে দুর্যোগের ধাক্কা এড়ানো যাবে সেটা জানা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। মিষ্টি জলের মাছ যে নোনা জলের মিশেলে বাঁচতে পারে, সেটাই তো জানতাম না।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.