দিল তো ‘বচ্চন’ হ্যয় জি
লকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে কথাটা অমিতাভ বচ্চনকে বলেই ফেললেন জিৎ।
ছোটবেলা থেকেই বচ্চনের ফ্যান তিনি। সে কথা ‘বস’য়ের মুক্তির আগেই মুম্বইয়ে গিয়ে তাঁকে সাক্ষাতে জানিয়েছিলেন।
আবার দেখা। এ বার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। “আমি স্যারকে বললাম, ‘বস’ মুক্তি পেয়েছে। এবং তাঁর আশীর্বাদে ভাল করেছে। শুনে উনি বললেন যে, আমাদের দেখা হওয়া নিয়ে নিজে টুইট করেছিলেন। তার পর বললাম আমার পরের ছবির নাম রেখেছি ‘বচ্চন’,” বললেন জিৎ।
তার পর?
জানতে চাইলেন কী আছে তাতে? এর আগে তো অনুরাগ কাশ্যপ তাঁর শর্ট ফিল্মে ‘বচ্পন’ বলে একটা গান ব্যবহার করেছিলেন অমিতাভকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে।
“না, না, আমার সিনেমার সঙ্গে ‘বচ্পন’ গানটার কোনও মিল নেই। এটা একটা কমেডি। আমার চরিত্রটি অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান। ঠিক রিয়েল লাইফে আমি যেমন ফ্যান, সেই রকম। তবে এর থেকে বেশি আর কোনও মিল নেই। আমাদের সিনেমাটা একদম মশালা এন্টারটেইনার। কাঞ্চা (মানে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক) আর খরাজ মুখোপাধ্যায়ও রয়েছে। তাই কমেডিটা বেশ জমবে ভাল,” বলছিলেন জিৎ।
পড়ন্ত বেলায় সে দিন শ্যুটিং চলছিল হাওড়ার একটি মলে। ব্রেকে কোল্ডড্রিঙ্কসে এক চুমুক দিয়ে কথা বলছিলেন জিৎ। মেক আপ ভ্যানের এক দিকের ইউনিটে জিৎ। ঠিক পাশের ইউনিটটায় ‘বচ্চন’য়ের নতুন হিরোইন। ঐন্দ্রিতা রায়। বাঙালি। কিন্তু বাড়ি বেঙ্গালুরুতে। ২০০৭ থেকে অভিনয় করছেন কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। ইতিমধ্যে ১৫টি কন্নড় সিনেমা করে বেঙ্গালুরুতে বেশ জনপ্রিয়। যদিও মূলত কমার্শিয়াল ছবিই করেছেন, ‘মানাসারে’ বলে একটি সিনেমাতে তিনি এক মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ের ভূমিকাতে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসাও পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও। ‘বচ্চন’ তাঁর প্রথম বাংলা সিনেমা।
তা ‘বচ্চন’য়ের কথা শুনে অমিতাভ কিছু জিজ্ঞেস করলেন না?
“খুশি হলেন। তার পর আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এই যে এখনও এত মানুষ আপনাকে সামনাসামনি দেখে কেমন বিহ্বল হয়ে যায়, তাতে আপনার ব্যক্তিগত ভাবে কেমন লাগে? উনি শুধু বললেন: ‘আই অ্যাম হাম্বলড্।’ আমি মনে মনে ভাবতে থাকি কী করে একটা মানুষের এই রকম হিউমিলিটি থাকে? তার পর মনে পড়ল ওঁর লেখা একটা টুইট...” বলে চলেন জিৎ।
কী সেটা?
কয়েক মাস আগে অমিতাভ টুইট করেছিলেন, স্টারডমের পাঁচটা স্তর আছে। “ফাইভ স্টেজেস অব স্টারডম: ফার্স্টহু ইজ অমিতাভ বচ্চন? সেকেন্ড গেট মি অমিতাভ বচ্চন, থার্ড গেট মি অ্যান অমিতাভ বচ্চন লুকঅ্যালাইক, ফোর্থ গেট মি আ ইয়ঙ্গার অমিতাভ বচ্চন অ্যান্ড ফিফথ্ হু ইজ অমিতাভ বচ্চন?” অর্থাৎ এক: যখন লোক প্রশ্ন করে অমিতাভ বচ্চন কে? দুই: যখন লোক বলে অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে এসো। তিন: যখন বলে অমিতাভ বচ্চনের মতো দেখতে কারওকে নিয়ে এসো। চার: যখন কেউ বলে অল্পবয়সী একজন অমিতাভ বচ্চন নিয়ে এসো।
পাঁচ: আবার যখন লোক বলে অমিতাভ বচ্চন কে?
“যে মানুষটা এই রকম ভাবে স্টারডমকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তাঁর বিনয়ী হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমার এটাও মনে হয় যে উনি স্টারডমের অনেক ওপরে। ক্রিকেটের জন্য সচিন তেন্ডুলকর যা, সঙ্গীতের জন্য লতা মঙ্গেশকর যা, সিনেমার জন্য মিস্টার বচ্চনও তাই,” বললেন জিৎ।
তবে গ্রাসরুট এন্টারটেনমেন্ট আর রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্টের প্রযোজনা ‘বচ্চন’য়ে এই সব নিয়ে বিশ্লেষণ নেই। কন্নড় ব্লকবাস্টার ‘ওনলি বিষ্ণুবর্ধন’য়ের অফিশিয়াল রিমেক এটা। সেখানে অভিনয় করেছিলেন সুদীপ, ভাবনা আর প্রিয় মণি। প্রায় ষোলো কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল এই ছবি।
কন্নড় ম্যাটিনি আইডল ডা. বিষ্ণুবর্ধনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবেই সেই সিনেমাটা বানানো হয়েছিল। রাজা চন্দের বাংলা রিমেকে বিষ্ণুবর্ধন পাল্টে গিয়ে তা হয়ে যায় বচ্চন। আর নায়ক হয়ে যান বচ্চন-ভক্ত।
তা এই বাস্তবের আর সিনেমার এই বচ্চন-ভক্ত জিতের সঙ্গে ঐন্দ্রিতার কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কেমন? “আমার বাবা ডেনটিস্ট। বাড়িতে সবাই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার। আমিই একমাত্র অভিনয়ে। আমার আত্মীয়রা কলকাতায় থাকে। ওরা যেই শুনেছে যে আমি জিতের সঙ্গে কাজ করছি, তখন তো তাঁদের উৎসাহের শেষ নেই। কন্নড় ছবিতে ভাল কাজ করছি তা ওরা জানত। কিন্তু ভাষাটা তো বুঝত না। তাই ডিভিডি পাঠালেও, সেই সাঙ্ঘাতিক ইন্টারেস্ট নিয়ে দেখার ব্যাপারটা না থাকারই কথা। কিন্তু জিতের কথা শুনে ওরা সবাই দেখি সেটে হাজির। সবাই জিতের অটোগ্রাফও নিয়ে গিয়েছে,” ঐন্দ্রিতা হেসে বলেন।
এই ‘বচ্চন’য়ের দৌলতে ঐন্দ্রিতার কলকাতার আত্মীয়দের মধ্যে অন্য রকম কদর আজকাল।
শুভশ্রীর সঙ্গে ‘বস’ করেছেন জিৎ। তাঁকে নিয়ে জিৎ পরের ছবিটা করলেন না কেন? “যে কোনও নতুন জুটিই খুব ভাল কাজ করে আমার ক্ষেত্রে। সায়ন্তিকার সঙ্গে ‘আওয়ারা’ ভাল হয়েছিল। তার পর শুভশ্রীর সঙ্গে ‘বস।’ শুভশ্রীর সঙ্গে আরও একটা ছবি করার প্ল্যান আছে,” বলেন নায়ক।
কী এমন দেখেছিলেন ঐন্দ্রিতার মধ্যে যে বেঙ্গালুরু থেকে সোজা টলিউডে অভিনয় করার অফার দিলেন জিৎ? “ও বাংলা বলতে পারে। কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে বড়। একটা সময় ছিল যখন বাইরের ইন্ডাস্ট্রি থেকে কেউ বাংলায় কাজ করতে আসতে চাইত না। এখন সেটা পাল্টেছে। ও স্বেচ্ছায় বাংলাতে কাজ করতে চায়। এ ছাড়া অনেক সিনেমা করে এসেছে। তাই অভিজ্ঞতাটাও আছে। ওঁর মধ্যে রয়েছে একটা ফ্রেশনেসও। অ্যান্ড শি হ্যাজ এ প্রিটি ফেস। এই ছবিতে পায়েলও (সরকার) রয়েছে। খুব ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী। এই প্রথম ওর সঙ্গে কাজ করব,” বললেন জিৎ।
সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের সূত্রে ঐন্দ্রিতার সঙ্গে জিতের আলাপ।
অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আই ফোন) অথবা গুগল প্লে স্টোর
(অ্যান্ড্রয়েড) থেকে ABP AR Appটি ডাউনলোড করে
এই ছবিটি স্ক্যান করুন। আর খেলুন আনন্দplus কনটেস্ট।
ভাগ্যবান বিজেতাদের জন্য থাকবে আকর্ষনীয় পুরস্কার।
জিৎ বাংলা দলের ক্যাপ্টেন আর ঐন্দ্রিতা ছিলেন কর্নাটকের দলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর। তখনই প্রথম অফার আসে। “কিন্তু ডেটের সমস্যায় কাজটা সেই সময় করতে পারিনি। এ বার সব মিলে গেল। ‘ওনলি বিষ্ণুবর্ধন’য়ের নায়ক সুদীপের সঙ্গে আমি একটা ছবিতে কাজ করেছি। ভাল লাগছে যে সুদীপের সিনেমার বাংলা রিমেকটা আমি করছি,” বললেন নায়িকা।
সুদীপ আর জিৎ? অভিনেতা হিসেবে কোথায় তাঁদের মিল? কোথায় বা তাঁরা আলাদা? উত্তরে ঐন্দ্রিতা বলেন, “দু’জনেই খুব লম্বা। সুদীপ হল ডিরেক্টর কাম অ্যাক্টর। জিতের মধ্যেও ফিল্ম নিয়ে কমপ্লিট ইনভলভমেন্ট দেখেছি। সেটে জিৎ যে কত দুষ্টুমি করে! একদম প্র্যাঙ্কস্টার। আমার এত আত্মীয়রা এলেন সেটে, সবার সঙ্গে কথা বলল। খেয়াল রাখল সকলের। তারকা হয়ে এত ডাউন টু আর্থ থাকা মানুষ খুব কম দেখা যায়। সেটে সুদীপ বেশ সিরিয়াস।”
সুদীপকে কি ঐন্দ্রিতা জানিয়েছেন যে তিনি সিনেমার রিমেক করছেন? “হ্যাঁ, জানিয়েছি। ও বেশ খুশি,” বলেন নায়িকা।
ইতিমধ্যে পরিচালক তাড়া দিতে থাকেন। পরের শট দেওয়ার আগে, আনন্দplus-এর জন্য ফোটোশ্যুট। সিঁড়িতে বসে কিছু ছবি তুললেন জিৎ আর ঐন্দ্রিতা।
তার পরের শটটা একটু আলাদা।
বেশ ঘনিষ্ঠ। চুল সরিয়ে দেন ঐন্দ্রিতা। পিঠের ডান দিকের ট্যাটুটা দেখা যায়। রোম্যান্টিক শট। গালে গাল ছুঁয়ে।
দুষ্টুমি করে ঐন্দ্রিতা প্রশ্ন করলেন জিৎকে, “শট দিতে গেলে কি এই লম্বা নাকটা মাঝখানে চলে আসে?”
তার পর খিলখিলিয়ে হাসি। বোঝা গেল অভিজ্ঞ নায়িকা এই সব ইয়ার্কি-ফাজলামি করেই আড়ষ্টতা কাটাচ্ছেন। ‘আইস ব্রেক’ করছেন আর কি! জিৎ উত্তরে হেসে বললেন, “না, তোমার সেই অসুবিধেটা নিশ্চয়ই হয় না!”
ঐন্দ্রিতার মুখে দুষ্টুমিষ্টি হাসি। মাথা নেড়ে বললেন, “হয় না।”
ও দিকে ক্যামেরার ব্যস্ত শাটারের শব্দ কানে ভেসে আসে। পাশ থেকে পরিচালক জানতে চান, “মনে হচ্ছে অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা ভাল জমবে... কী! তাই তো?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.