বিভ্রান্ত গ্রাহকরা
ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরির কাজে ঢিলেমি
ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরির কাজ নিয়ে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি চলছে পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে। ২৯ অক্টোবর থেকে এই কাজ শুরু হয়ে গেলেও এখনও বহু রেশন দোকানেই তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মী এসে পৌঁছননি। এই নিয়ে খাদ্য দফতর থেকে কোনও প্রচারও হয়নি। ফলে জেলার অধিকাংশ গ্রাহকই জানেন না বিষয়টি সে এপিএল হোন বা বিপিএল। এই অবস্থায় ৩০ নভেম্বর, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না কেউ। ডিজিটাল রেশন কার্ড হাতে আসতে ঢের বাকি।
খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে বার-কোড দেওয়া ডিজিটাল রেশন কার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কুড়িটি জেলার মধ্যে ১১টিতে (হাওড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি ও কলকাতা) কার্ড তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ২৯ অক্টোবর। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ের কাজে ১১২ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। ঠিক ভাবে কাজ হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই গ্রাহকদের হাতে ডিজিটাল রেশন কার্ড তুলে দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু তথ্য সংগ্রহের কাজ এতটাই ঢিমেতালে চলছে, যে সে আশা পূরণ হওয়া কঠিন।
খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। প্রতিটি রেশন দোকানে গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে নাম-ঠিকানার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করার কথা ওই সংস্থার কর্মীদের। কিন্তু এতগুলি জেলায় রেশন দোকানে লোক পাঠাতে যত কর্মী থাকা দরকার, তা ওই সংস্থার নেই বলে সমস্যা হচ্ছে। যেমন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোটামুটি ১০২৫ জন এম আর ডিলার রয়েছেন। কিন্তু জেলাসদর তমলুকের মতো কিছু এলাকা ছাড়া অধিকাংশ রেশন দোকানেই ওই সংস্থার কর্মীরা গিয়ে পৌঁছতে পারেননি। কাঁথি মহকুমার ২২৬ জন ডিলারের মধ্যে ৭০- ৭৫ জনের কাছে সবে পৌঁছেছেন ওই সংস্থার লোকেরা। কাঁথি শহরে এখনও ওই কাজ শুরু হয়নি। পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল শহরের সমস্ত রেশন দোকানে একসঙ্গে ওই কাজ শুরু করা যাবে না। দফায়-দফায় কাজ হবে। আমি বলে দিয়েছি, করলে সমস্ত রেশন দোকানে একসঙ্গে করতে হবে। না হলে অকারণ বিভ্রান্তি ছড়াবে।”
বস্তুত বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেও। এগরা মহকুমায় যেমন পানিপারুল, পটাশপুরের কিছু এলাকায় রেশন দোকানে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গেলেও সদর শহরে এখনও কাজ শুরু হয়নি। এ দিকে, রেশন দোকানগুলিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে বলে নোটিস ঝুলে রয়েছে। কেরোসিন নিতে এসে গ্রাহকরা তাই প্রশ্ন করছেন, কবে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে? বলাবাহুল্য এর জবাব নেই ডিলারদের কাছে। এগরা শহরের বাসিন্দা তারাপদ দাস বলেন, “রেশন ডিলারের দোকানে টাঙানো কাগজ থেকে রেশন কার্ড ডিজিটালাইজেশনের কথা জানতে পারি। ডিলারকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দায় সেরেছেন। এখন হঠাৎ করে এক দিন এসে শুনব হয়তো কাজ হয়ে গিয়েছে। আমার নাম বাদ পড়ে গিয়েছে।” যদিও সে আশঙ্কার কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করছেন ডিলাররা। তবে, এই কাজের ঢিলেমিতে বিরক্ত তাঁরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এগরার এক রেশন ডিলার বলেন, “গ্রাহকরা এসে নতুন কার্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। আমরা এই বিষয়ে কিছু না জানায় অপমানিত হচ্ছি।”
ডিজিটাল রেশন কার্ড নিয়ে বিভ্রান্তির অভিযোগ মেনে নিয়ে এগরা ও কাঁথি মহকুমার খাদ্য দফতরের আধিকারিক ধীরাজ সিংহ বলেন, “আমাদের কাছেও এবিষয়ে বিশেষ তথ্য নেই। শুনেছি রাজ্য সরকার এক বেসরকারি সংস্থাকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। তারা অল্প কিছু ডিলারের কাছে কাজ শুরু করলেও বেশিরভাগ কাজ এখনও হয়নি। শুধু জেলা নয়, রাজ্য জুড়েই এই সমস্যা রয়েছে।”
শেখর দাস নামে তথ্য সংগ্রহের ভারপ্রাপ্ত সংস্থার এক কর্মী মেনে নেন, তাদের লোকবল কম থাকায় ও তথ্য নিবন্ধীকরণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক যন্ত্র না থাকায় দেরি হচ্ছে। তবে, তমলুক-সহ কিছু জায়গায় তথ্য সংগ্রহের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। তমলুকের শঙ্করআড়া এলাকার কেরোসিন ডিলার তরুণ হাইত জানান, ১০২০টা পরিবারে তিনি রেশন দেন। এর মধ্যে অর্ধেক পরিবারের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ামক রণজিৎ গোস্বামীর বক্তব্য, “ভারপ্রাপ্ত সংস্থাটির গাফিলতির জন্য বেশ কিছু জায়গায় কাজ শুরু হয়নি। তবে প্রত্যেক রেশন দোকানেই কাজ শুরুর দিন থেকে এক মাস সময় দেওয়া হবে।” তাঁর আশ্বাস, “জেলাশাসক সমস্ত বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছেন। শীঘ্রই সব জায়গায় কাজ শুরু হবে।”

(তথ্য সহায়তা: সুব্রত গুহ ও আনন্দ মণ্ডল)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.