টানা ১২ দিন ২০ ঘণ্টা তিনি কাটিয়েছেন মহাকাশে। ২০০৬ সালে ‘ডিসকভারি’ নামে নাসার যে মহাকাশযানে চড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস, তার সারথি (পাইলট) ছিলেন তিনি। উইলিয়াম অ্যান্টনি ওয়েফেলিন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? বিস্ময়, না অজানাকে ভয় কোনটা প্রকট হয়েছিল? বুধবার সকালে দিল্লি পাবলিক স্কুল (ডিপিএস), রুবি পার্কের এক ছাত্রের প্রশ্নটার উত্তর দিতে গিয়ে ৫০ ছুঁইছুঁই মহাকাশচারী বললেন, “মহাকাশে যাওয়াটাই মজার ব্যাপার। বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে গেলে তো একটা দারুণ, অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা হয়! আর আমি ডিসকভারিতে চড়ে একদল বন্ধুর সঙ্গেই মহাকাশে গিয়েছিলাম। কাজেই...” |
স্কুলের মূলত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে, তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে এ দিন হাজির হয়েছিলেন উইলিয়াম। সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় ঘণ্টা দেড়েক দেরিতে। যদিও তাতে পড়ুয়াদের উৎসাহে ভাটা পড়েনি। নাসার নাম লেখা নীল জ্যাকেট পরে উইলিয়াম পড়ুয়াদের সামনে হাজির হতেই শুরু হল একের পর এক প্রশ্ন। প্রশ্নের তালিকায় ছিল উইলিয়ামের মহাকাশ যাত্রার অনুপ্রেরণা, অভিজ্ঞতা, ইসরো-র মঙ্গল অভিযান থেকে নাসার নতুন মহাকাশযান— সবই।
উইলিয়াম জানালেন, নাসা মহাকাশে যাওয়ার নতুন কিছু রকেট ও ক্যাপসুল তৈরি করছে। ৩৯টি অভিযানের পরে মহাকাশযান ডিসকভারি অবসর নিয়েছে। সেই জায়গায় নতুন, আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে সব মহাকাশযান। ইসরো-র মঙ্গল অভিযানকেও স্বাগত জানান উইলিয়াম। প্রশ্ন শুরুর আগে উইলিয়াম কিছু অভিজ্ঞতার কথা শোনান পড়ুয়াদের। মহাকাশ থেকে তোলা এ দেশ, এই শহরের ছবি দেখান। বলেন, “মানব শরীরের অভিযোজন ক্ষমতা সত্যিই বিস্ময়কর। মাধ্যাকর্ষণ ছাড়াই থাকার ক্ষমতা অল্প সময়ের মধ্যে আয়ত্ত করে নিতে পারে। এমনকী, মহাকাশে -২০০ থেকে +২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় দিন কাটাতে হয়েছে!”
২০০৬-এর ৯ ডিসেম্বর মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল ডিসকভারি। ফেরে ২২ তারিখে। উইলিয়াম বলেন, “ওই অভিযানে আমাদের দলে রাশিয়া, জাপান, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের বংশোদ্ভূত মানুষ ছিলেন। নানা দেশের খাবার ভাগ করে খেতাম। তার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ সহজে বাড়ে। সব মিলে অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল!” তিনি জানান, ২০০৩-এ মহাকাশযান কলম্বিয়া ধ্বংস হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই অভিযানে যাওয়ার আগে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল তাঁদের।
গত মে মাসে ডিপিএস, রুবি পার্কের একদল পড়ুয়া নাসায় গিয়েছিল। তাতে প্রত্যেকের আড়াই-তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই তাই সে সুযোগ নিতে পারেনি। স্কুলের অধ্যক্ষা অনুশ্রী ঘোষ বলেন, “হাতেগোনা কয়েক জন নাসায় যেতে পেরেছিল। তখনই মনে হয়েছিল, সকলের কাছে কী ভাবে মহাকাশচারণের এই অভিজ্ঞতা পৌঁছনো যায়। ছেলেমেয়েরা উইলিয়ামের সঙ্গে কথা বলতে পারল। এতে আমি খুব খুশি।” তবে নাসায় গিয়ে সব কিছু চাক্ষুষ করার সঙ্গে এই আলাপচারিতার কোনও তুলনা হয় না বলে মনে করছেন দ্বাদশ শ্রেণির অরুণাভ চন্দ। তিনি বলেন, “সেখানে গিয়ে যা দেখে এসেছি, হাতে ধরে দেখেছি, তার সঙ্গে আজকের কথাবার্তার তুলনা হয় না। তবে বন্ধুদের সঙ্গে বসে ওই মহাকাশচারীর সঙ্গে কথা বললাম। এই অভিজ্ঞতাটাও ভাল।” |