দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল বিস্তর। প্রবীণ বাম নেতা অশোক মিত্রকে যে ভঙ্গিতে জবাব দিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য নেতা গৌতম দেব, সেই ভাষা ব্যবহার না-করলেই ভাল হত বলে প্রশ্নের মুখে শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তবে সাংগঠনিক প্রয়োজনে গৌতমবাবুদের কাজের পাশেই দাঁড়িয়েছেন বিমানবাবু। কলকাতা জেলার নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন অন্য জেলার সঙ্গে তুলনা না-করেই মানুষের চাহিদা বুঝে নিজস্ব আন্দোলন গড়ে তোলার।
দলেরই একটি পুজোসংখ্যায় বামেদের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোকবাবু লিখেছিলেন, রাতারাতি যাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন, তাঁরা ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখছেন! কেন তাঁরা ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখছেন না, তা বোঝাতে গিয়ে দলীয় মুখপত্রে আবার পাল্টা একটি প্রবন্ধ লেখেন গৌতমবাবু। তাঁর সেই প্রবন্ধের কিছু ভাষা ব্যবহার নিয়ে বাম মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শনি ও রবিবার কলকাতার বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে একাধিক সদস্যও প্রশ্ন তোলেন, প্রবীণ এক জন কমিউনিস্ট নেতাকে এ ভাবে আক্রমণ কেন? অশোকবাবু তাঁর মতামত দিয়েছিলেন। তার জবাব দেওয়া আদৌ জরুরি ছিল কি? সিপিএম সূত্রের খবর, লাগাতার প্রশ্নের মুখে এ দিন জবাবি ভাষণে বিমানবাবু জানিয়েছেন, গৌতমবাবুর প্রবন্ধ বাম কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে থাকতে পারে। কিন্তু ওই ধরনের ভাষা ব্যবহার না-করলেই ভাল হত। গৌতমবাবু অবশ্য আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, অশোকবাবুকে আক্রমণ করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছেন যে নিচু তলার কর্মী-সমর্থকেরা, তাঁদের মনোবল ঠিক রাখার জন্যই তাঁকে কলম ধরতে হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, নিচু তলার আপত্তিতেই বিমানবাবুকে সায় দিতে হল।
উত্তর থেকে পূর্ব, দক্ষিণ শহরতলির নানা এলাকার সদস্যেরা কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতমবাবুর অন্য কৃতিত্ব অবশ্য মেনে নিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এত ধারাবাহিক কর্মসূচি নিতে পারলে কলকাতা শহরে মূল্যবৃদ্ধি থেকে সুদীপ্ত-হত্যা, এত বিষয় পেয়েও কিছু করা গেল না কেন? পাশাপাশি, সিপিআইয়ের দু’দিনের রাজ্য পরিষদ বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় তারা কেন্দ্রীয় সমাবেশ করবে। |