কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি, থিম মণ্ডপের বঙ্গদর্শন
ছিল কলকাতায় দুর্গাপুজোয়। চলে গেল কালীপুজোয়, তা-ও আবার শিলিগুড়িতে। এখানেই শেষ নয়। এর পরে হয়তো যেতে হবে বাঁশবেড়িয়ায় কার্তিক পুজো বা কাটোয়ায় সরস্বতী পুজোয়। মাঝে ঘুরে যাবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোটাও।
এই বঙ্গদর্শন থিম মণ্ডপের।
কলকাতার পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, কয়েক লাখ টাকা দিয়ে যে প্যান্ডেল তাঁরা করেন, যা অনেক সময়েই পুরস্কারও এনে দেয়, তা এখন বিকিয়ে যাচ্ছে পরের পুজোগুলোর জন্য। আগেও এমন হতো। কিন্তু সংখ্যায় কম। কলকাতার কিছু মণ্ডপ যেত কাছাকাছি মধ্যমগ্রাম-বারাসতের কালীপুজোয় বা চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়। এই সংখ্যাটা এখন অনেকটাই বেড়েছে। এ বছর তো প্রায় একশো ছুঁই ছুঁই। পুজোর এই বঙ্গভ্রমণ তৈরি করেছে অন্যরকম এক অর্থনীতি, যাতে কলকাতার মণ্ডপ প্রস্তুতকারকরা কিছুটা টাকা তুলে ফেলছেন। প্যান্ডেল খোলার জন্য বাড়তি খরচ এবং ঝক্কিও সামলাতে হচ্ছে না।
কী রকম?
হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন এ বার যে মণ্ডপটি তৈরি করেছিল, তা কিনে নেয় শিলিগুড়ির বিধান স্পোর্টিং ক্লাব। কলকাতার পুজোটির সম্পাদক সুতপা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, তাঁদের মণ্ডপটি খুলে তিনটি লরিতে চাপিয়ে শিলিগুড়ি নিয়ে যায় বিধান স্পোর্টিং। মণ্ডপটির জন্য প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছে ক্লাবটি। তার মধ্যে রয়েছে মণ্ডপ খোলা এবং নিয়ে যাওয়ার খরচও। হিন্দুস্থান পার্কের পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, মণ্ডপটি খুলতে যে টাকা খরচ হত, তা লাগছে না। বরং হাতে কিছু টাকাও আসছে। সামান্য হলেও মন্দ নয়!

কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কের দুর্গাপুজো থেকে শিলিগুড়ির বিধান স্পোর্টিং ক্লাবের কালীপুজোয়।— নিজস্ব চিত্র

আর এই খরচপাতি বৃথা যায়নি বিধান স্পোর্টিংয়েরও। ওই মণ্ডপ নতুন করে বানাতে গেলে অনেক বেশি টাকা লাগত। বদলে চার লাখ টাকায় তাঁরা জিতে নিয়েছেন কালীপুজোর পুরস্কারও। একই ভাবে দুর্গাপুজোয় করা বালিগঞ্জ কালচারালের ‘মিনি রাজস্থানের’ মণ্ডপ জগদ্ধাত্রী পুজোয় কিনে নিয়ে গিয়েছে চন্দননগরের কলপুকুরধার সর্বজনীন। দক্ষিণ কলকাতার এই পুজোটির সম্পাদক অঞ্জন উকিল জানাচ্ছেন, কলকাতার বাইরেও দ্রুত বাড়ছে থিম-মণ্ডপের চাহিদা। সে ক্ষেত্রে প্রায় রেডিমেড থিম হাতে চাইছেন অনেকে। ফলে বাড়ছে কলকাতার মণ্ডপগুলির চাহিদা। একই কথা মেনে নিলেন সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কাছে শিবমন্দির দুর্গাপুজো কমিটির সচিব পার্থ ঘোষও।
কিন্তু প্যান্ডেলের ফিরে ব্যবহার এ ভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে কেন?
পুজো কমিটির কর্তাদের মতে, প্রথম কারণ অবশ্যই আর্থিক সুবিধা। শহরতলির ছোট পুজোগুলি অনেক কম দামে কলকাতার নামীদামি প্যান্ডেল কিনে নিতে পারছেন। বালিগঞ্জ কালচারালের উদাহরণই ধরা যাক। তাদের মণ্ডপ বানাতে খরচ হয়েছে ২০ লক্ষ টাকারও বেশি। সেই প্যান্ডেল চন্দননগরের কলপুকুরধার কিনেছে মাত্র এক লক্ষ টাকায়। তাদের মণ্ডপ-বাবদ খরচ ধরা ছিল ছ’লক্ষ টাকা। সেখানে ওই প্যান্ডেল কিনে তা বয়ে আনার কাজ মোট সাড়ে তিন লাখেই সেরে ফেলা যাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে মাথা খাটিয়ে থিম বের করা, তা বাস্তবে রূপ দিতে যে পরিশ্রম, সেটাও বেঁচে যাচ্ছে। শহরতলি বা মফস্সলের পুজোকর্তারা বলছেন, এটাও তো বড় ফায়দা।
এ প্রসঙ্গে আবার চাহিদা ও জোগানের পুরনো তত্ত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিত্রশিল্পী ছত্রপতি দত্ত। তাঁর মতে, “এখন মানুষ যে ধরনের মণ্ডপ বা কারুকার্য দেখতে চান, তা তৈরি করার মতো শিল্পী সংখ্যায় যথেষ্ট কম। সেই খামতি কিছুটা ঢেকে দিচ্ছে মণ্ডপ পুনর্ব্যবহারের সুবিধা।” তার উপর থিমের মণ্ডপ খুলে নিয়ে গিয়ে আবার জোড়া লাগালে পুরষ্কারের হাতছানিও থাকছে বলে মনে করছেন অনেকে।
ফিরে ব্যবহারে আশার আলো দেখছেন পরিবেশ কর্মীরাও। সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, লোহা, কাঠ বা অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি মণ্ডপ একাধিক বার ব্যবহার মানেই পরিবেশ রক্ষায় এক ধাপ এগিয়ে থাকা। প্রতিবার ওই মণ্ডপ নতুন করে গড়তে অনেক বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হত। প্রতি বার তা নষ্ট করা মানে অনেক বেশি দূষণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.