ওপারে হগলির চন্দননগর, এপারে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুর নবাবগঞ্জ। ওপারে ঐতিহ্যের আলো। এপারে আনন্দের মহোৎসব।
জগদ্ধাত্রী পুজোয় উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পতালুকের ইছাপুর-নবাবগঞ্জের পুজোর বৈশিষ্ট্য হল প্রতিমার রূপসজ্জা ও উচ্চতায় চন্দননগরকে ছোঁয়ার এক অন্যবদ্য প্রয়াস। প্রতিমা শিল্পী থেকে আলো সবেরই আড়ালে যেন চন্দননগরের কোনও না কোনও প্রভাব। স্থানগত সমস্যা বা ভিড় এড়াতে চন্দননগর যাঁদের কাছে নবাবগঞ্জের পুজো তাঁদের সেই সমস্যা অনেকটাই দূর করে দিয়েছে। তা ছাড়া এ বার নবাবগঞ্জের পুজোয় ভীষণভাবেই রয়েছেন মান্না দে। ঝুলনতলা থেকে কালীতলা হয়ে গাজীতলা, মণ্ডপে মণ্ডপে থিম সঙ-এর মতো নিরন্তর বয়ে চলেছে প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর গানের ঝরনা ধারা। কোথাও আবার মণ্ডপের সামনে প্রয়াত শিল্পীর বিশাল কাট আউট। শুধু পুজোপ্রাঙ্গণ নয়, গঙ্গার ঘাটগুলিতে বসে থাকা শ্রোতাও যেন কখন আনমনে গুন গুন করে উঠছেন শিল্পীর সঙ্গে। অষ্টমীর সন্ধ্যায় পুজো দেখতে এসে কালীতলা ঘাটে বসে মান্না দে’র গানে গলা মেলাচ্ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব দম্পতি থেকে সদ্য স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া কিশোর-কিশোরী সকলেই। |
পুজো মানেই মেলা। আর সে মেলায় কি নেই? ঘর সাজানোর বাহারি জিনিস থেকে মনোহারি, ডালমুট থেকে দই-ফুচকা জগদ্ধাত্রীর স্নেহচ্ছায়ায় সবই একাকার। নবাবগঞ্জের এ বার বড় পুজো ১৪-১৫টি। সব পুজো কমিটি নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটির সভাপতি স্থানীয় উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মলয় ঘোষ বললেন, ‘‘পুজো মানেই আনন্দ। মান্না দে চলে গেলেন। কিন্তু তাঁর গান তো আছে। তাই গানে গানেই তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। পুরসভার পক্ষ থেকে পুজোর সময় পর্যাপ্ত জল ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব রাস্তা আমরা সারিয়ে ফেলেছি। গঙ্গার ধারে এতগুলি পুজো বলে ঘাটগুলিতে নজরদারি রাখা হয়েছে।’’
নবাবগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো পুজো ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির গেটের কাছে গাজীতলায়। এ বার ৫৬ বছর। ডাকের সাজের প্রতিমা। অসাধারণ মুখশ্রী। দেবী এখানে শান্তিরূপা। কাছেই নবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের মাঠে অগ্রণী ইয়ংস্টারের পুজো এবার ১০ বছরে পড়ল। খড় ও বাঁশের মণ্ডপে উঠে এসেছে গ্রাম। দেবীর রূপেও তার ছাপ। সহজ পাঠের কিছু মাটির মডেল সুন্দর ভাবে মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে।
নবাবগঞ্জ ময়রা পাড়া ঘাটের পুজো উদ্যোক্তাদের মন একটু খারাপ। প্রতি বছর প্রতিমা গড়েন চন্দননগরের শিল্পী। এবার তিনি না আসায় স্থানীয় এক শিল্পী প্রতিমা গড়েছেন। ঝুলনতলা বারোয়ারির ৫৩ বছরের পুজোয় জগদ্ধাত্রী স্বর্ণালী বসনে ভূষিতা। কালীতলার পুজোর থিম বাঁশের কেল্লা। জগদ্ধাত্রী এখানে বনবিবি। মাথায় পালকের মুকুট। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার কাছে নবারুণ সংঘের ১৩ বছরের পুজোয় সপ্তমী থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে দরিদ্রনারায়ণ সেবা। নানা রকম অনুষ্ঠান অবশ্য সব পুজো মণ্ডপেই হচ্ছে। কোথাও ছৌ নাচ তো কোথাও শান্তিপুরের শিল্পীদের মূকাভিনয়। নিদেন পক্ষে পাড়ার কচি-কাঁচাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো আছেই। তবে সেখানেও সগৌরবে উপস্থিত মান্না দে। |