সমস্যায় নিত্যযাত্রী, পর্যটকরা
বিকেলের পর ফেরার বাস নেই সৈকতশহরে
ন্ধুদের সঙ্গে দিঘায় বেড়াতে এসেছিলেন খড়্গপুরের অরুণ মিশ্র। বিকেলে আচমকা এক নিকট আত্মীয়ের অসুস্থ হওয়ার খবর আসে ফোনে। তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার জন্য অরুণ বেরিয়ে পড়েছিলেন হোটেল থেকে। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে শেষমেশ সন্ধ্যায় দিঘা থেকে হাওড়াগামী ট্রেনে করে মেচেদা এবং সেখান থেকে আর একটা ট্রেনে চেপে বাড়ি পৌঁছন ভোর রাতে। ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই আত্মীয়ের।
বিকেলের পর রাজ্যের সৈকতশহর দিঘা থেকে ফেরার বাস না থাকায় প্রতি দিনই এমন হয়রানির মুখে পড়তে হয় পর্যটকদের। দুর্ভোগের শিকার হন দিঘা, রামনগরে কর্মরত কয়েক হাজার নিত্যযাত্রীও। বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দূরপাল্লার কোনও বাসই ছাড়ে না দিঘা থেকে। লোকাল বাস থাকে মাত্র দু’টো। আর সেগুলি অধিকাংশই কাঁথির পর আর যায় না। শিবের সলতে বলতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দিঘা থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় একাধিক ট্রেন চালু করে সৈকত পযর্টনকেন্দ্র হিসেবে দিঘাকে রেল মানচিত্রে তুলে এনেছিলেন। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর দিঘাকে পযর্টন মানচিত্রে তুলে আনার জন্যও সচেষ্ট হয়েছেন তিনি। তারপরও দিঘায় যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন দশায় পর্যটকরা বিরক্ত। ক্ষুব্ধ দিঘার হোটেল মালিকরাও। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা বিপ্রদাস চক্রবর্তীর অভিযোগ, “সিএসটিএস, এসবিটিএসদু’টি সরকারি পরিবহণ সংস্থার দিঘায় ডিপো থাকা সত্ত্বেও বিকেল চারটার পর ফেরার সরকারি বাস পাওয়া যায় না। বেসরকারি বাসগুলির ক্ষেত্রেও বিকেল সাড়ে চারটার পর দূরপাল্লার বাস সেই রাত পৌনে ৯টায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অসুবিধার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বাঁকুড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর এলাকার পযর্টকরা হামেশাই আমাদের কাছে অভিযোগ করেন।”
কিন্তু বাস চলে না কেন?
বাসমালিকদের বক্তব্য, সন্ধ্যার পর দিঘা থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন থাকায় ওই সময় বাসের যাত্রী পাওয়া যায় না। যাত্রী হয় না বলেই ওই সময়টা বাস নেই। পূবর্র্ মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সৌমেন মাইতি বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে চারটায় দিঘা থেকে কলকাতাগামী দূরপাল্লার বাস ছাড়ার পর ফের পৌনে ৯টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত পরপর বাস রয়েছে। ট্রেনে করে বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাওয়ার ফলে বিকেলের পর কিছুটা সময় দিঘা থেকে কলকাতা যাওয়ার যাত্রী থাকে না বললে চলে।”
কিন্তু পর্যটক বা নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য উল্টো- বাস থাকে না বলেই তাঁরা বাধ্যতামূলক ভাবে ওই ট্রেন ধরার চেষ্টা করেন। দিঘা মোহনা, সৈকত শহরের বিভিন্ন হোটেল-লজগুলিতে মহকুমার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ কাজ করেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এঁদের। অসুবিধা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। এই সময় দু’টি লোকাল বাস রয়েছে মাত্র। বাদুড়ঝোলা ভিড় হলেও বাসের সংখ্যা বাড়েনি। রামনগরের বাসিন্দা পেশায় নৃত্য শিক্ষক কল্যাণ দাসের কথায়, “দিঘা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরত্বের কাঁথি যেতে লোকাল বাসে আড়াই ঘণ্টা লাগে। গরুর গাড়ির সঙ্গে বাসের ফারাক কোথায়?” দিঘা, অলঙ্কারপুর, রামনগর, বালিসাই প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা তাই বাসের ভরসায় না থেকে মোটর সাইকেলে যাতায়াত করেন।
এ ছাড়াও দিঘার দূরপাল্লার বাসগুলির বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ রয়েছে নিত্যযাত্রীদের। দিঘার প্রবীণ বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ মিশ্রের অভিযোগ, “বেশ কিছু বেসরকারি বাস নির্ধারিত গন্তব্যস্থল পর্যন্ত যায় না। দিঘা-ঝাড়গ্রাম, দিঘা-বাঁকুড়া-সহ বেশ কিছু রুটের বাস দিঘার বদলে কাঁথি থেকেই চলাচল করে। এমনও হয়েছে, দিঘা যাবে বলে বাসগুলি যাত্রী তুলে নিয়ে কাঁথি এসে বাস থেকে নামিয়ে দিঘাগামী অন্য বাসে তুলে দিয়েছে। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে এই জুলুম মেনে নেন।”
পযর্টন কেন্দ্র দিঘায় পরিবহণ সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সৌমেন পাল। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পযর্টনশিল্পের উপর এসে পড়ছে বলেও মেনে নেন তিনি। সমস্যা সমাধানের জন্য বেসরকারি বাস সংগঠন ও পরিবহন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন সৌমেনবাবু। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের তরফে তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারীও বিকেলের পর দিঘা থেকে ফেরার বাস বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.