জমি দখল করা কারখানা ছড়াচ্ছে
দূষণও, অভিযোগের তদন্তে প্রশাসন
প্রায় সাড়ে ছ’একর জমিতে ছিল ফলের বাগান। বর্তমান বাজারদরে প্রায় তিন কোটি টাকার সে জমি এখন ঢাকা পড়ে গিয়েছে শিল্প-বর্জ্যে। বাঁকুড়া-২ ব্লকের একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা ওই বর্জ্য ফেলেই সে জমি জবরদখল করেছে বলে ধরা পড়েছে প্রশাসনের তদন্তে। শুধু তা-ই নয়, বাঁকুড়া সদর ব্লকে শিল্প গড়ার জমি হিসেবে চিহ্নিত নয়, এমন ৩৩টি ‘প্লট’-এ কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে বলেও দাবি প্রশাসনের।
কারখানা কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেছেন, “ওরা বিশাল, দুর্মূল্য ফলের বাগান দখল করে নিয়েছে। ওই কারখানার বিরুদ্ধে জমি দখল ছাড়াও, দূষণ ছড়ানোর নানা অভিযোগ আছে। আমরা সে সব নিয়েও তদন্ত চালাচ্ছি।”
রাস্তার ধারে এ ভাবেই ফেলে দেওয়া হয় স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বর্জ্য।—নিজস্ব চিত্র।
স্পঞ্জ আয়রন কারখানাটি অনুমোদন পেয়েছিল বাম আমলে। ২০০৫ থেকে কাজ শুরু করে তারা।
কারখানা লাগোয়া এলাকায় ফলের বাগান গড়েছিলেন কলকাতার কসবার বাসিন্দা শান্তনু দে। অভিযোগ, সেখানে নিজেদের শিল্পজাত বর্জ্য (স্লাগ) ফেলে গোটা জমিই দখল করে নেয় এই স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। শান্তনুবাবুর অভিযোগ, “আচমকা আমার ফলের বাগান ঘিরে পাঁচিল তুলে দেয় ওই সংস্থা। প্রতিবাদ করায় মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে হুমকিও দেওয়া হয় আমাকে। সেই থেকে বৈধ কাগজপত্র থাকলেও আমি জমিহারা। আমার ফলের বাগান চাপা পড়েছে ওদের বর্জ্যের তলায়।”
এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে বাঁকুড়া সদরের এক প্রাক্তন মহকুমাশাসক এবং বাঁকুড়া-২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শুভেন্দু ভট্টাচার্য আলাদা ভাবে এই স্পঞ্জ আয়রন কারখানার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছেন জেলাশাসককে। সরকারি রিপোর্টেই উল্লেখ রয়েছে, শিল্পের জন্য নির্ধারিত নয়, এমন জমিতে কারখানাটি গড়া হয়েছে। তার পরেও কারখানাটি চলছে, যা ১৯৫৫ সালের রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইনের বিরোধী। শুধু তা-ই নয়, জমির এক পয়সা খাজনাও কারখানা কর্তৃপক্ষ দেন না।
বেআইনি পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে মাটির নীচের জল তুলে নেওয়া এবং এলাকায় দূষণ ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে ওই কারখানার বিরুদ্ধে। কারখানা লাগোয়া পাঞ্জা গ্রামের চাষিদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, “কারখানাটা থেকে দূষণের জেরে আমাদের জমির ধানে কালো ছিট দেখা দিচ্ছে। আমরা বলি, ‘কালো মাছি’ রোগ। ওই ধান কে আর কিনবে বলুন?”
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মিনতি মিশ্র জানান, এই দূষণ-সমস্যা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম এ সব কারখানাকে মদত দিয়ে বহু কাল ধরে এলাকায় বিষ ছড়াতে দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষ তাড়ানোর। তবে, সেটা বড় শক্ত কাজ।”পক্ষান্তরে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “এ সব কারখানা আমাদের আমলে লাইসেন্স পেয়েছে, অস্বীকার করব কী করে? এখন বিরোধীরা ওদের সমর্থন করছেন। আমরা বিরোধিতা করছি।”
এত সব অভিযোগের জবাবে ওই স্পঞ্জ আয়রন সংস্থার সিএমডি সঞ্জয় সুরেকা দাবি করেন, তাঁদের কারখানা থেকে দূষণ ছড়ায় না। তাঁরা কারও জমিও দখল করেননি। তাঁর বক্তব্য, “আশপাশের গ্রামের লোকেদের একটা অংশের দাবি, বিশেষ কাজের জন্য বাইরে থেকে কারখানায় আনা লোকেদের সরিয়ে গ্রামবাসীদের নিতে হবে। আমরা তা মানব কী করে? সেই কারণেই ওরা ক্ষেপে আছে।”
তাঁর সংযোজন, “আট-নয় বছর ধরে কারখানা চালাচ্ছি, আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে। যদি এত বাধা পাই, বন্ধ করে দেব। প্রয়োজনে ভিন্ রাজ্যে ব্যবসা সরিয়ে নেব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.